ইম্প্রোভাইজেশন ও বাবরের লক্ষ্য পূরণের ঠিকানা

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চলতি সিরিজে বাবর আজমের অসাধারণ। ‘ইম্প্রোভাইজড’ একটি শটের ব্যবহার দেখলাম বেশ কবার।  আবছা ভিডিও ক্যাপচার থেকে একটু ধারণা পেতে পারেন, ইয়র্কার ডেলিভারিতেও রান বের করার কার্যকর শট।

সীমিত ওভারে ইয়র্কার বরাবরই খুব কার্যকর ডেলিভারি। কখনও উইকেট এনে দেয়, বেশির ভাগ সময়ই রান আটকায় ম্যাচের যে কোনো পরিস্থিতিতে। ওয়াইড ইয়র্কার তো রান আটকানোর জন্য এখন সব পেসারদের রেসিপিতেই থাকে। এই সিরিজে বাবর দেখলাম, অনায়াসেই ইয়র্কারে চার মারছেন এবং এক-দুই বের করছেন।

এই ছবি দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে সিসান্ডা মাগালার ১৪৩ কিমি ইয়র্কারে। অফ স্টাম্পে থাকা ইয়র্ক নিখুঁতভাবে ব্যাটের ফেস ওপেন করে গ্লাইডের মতো খেলে থার্ডম্যান দিয়ে চার।

নতুন কিছু অবশ্যই নয়। অনেকবারই হয়তো দেখেছেন এমন শট। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা হয়তো ‘ওয়ান অফ’ শট। তাৎক্ষনিকভাবে কেউ খেলে ফেলেন বা ত্বরিত হয়ে যায়। অনেক সময় ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারি বা রান হয়।

বাবরের ব্যাপারটি হলো, পুরো ইচ্ছাকৃত, পরিকল্পিত, পুরো নিয়ন্ত্রিত এবং তাঁর আর দশটা ক্রিকেট শটের মতোই যেন। মাগালার বলেই যেটি খেললেন, চমকে গেলাম দেখে। লেগ-মিডলে থাকা দারুণ এক ইয়র্কার, অথচ এই শট খেলে বাবর থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারি আদায় করে নিলেন।

যেটি বলছিলাম, হুট করে হয়ে যাওয়া নয়, আর সব ক্রিকেট শটের মতোই নিয়মিত এটি খেলছেন এবং ভালোভাবে কানেক্ট করা, টাইমিংয়ের হার অবিশ্বাস্য, বাউন্ডারি ছাড়াও সিরিজে এই শটে সিঙ্গেলস-ডাবলস বের করেছেন আরও বেশ কিছু। আগেও তিনি নিয়মিত এই শট খেলেছেন কিনা, মনে করতে পারছি না। এই সিরিজে ঘনঘনই দেখলাম।

আব্দুল রাজ্জাককে দেখতাম, ইয়র্কারে অনেক সময় ক্রিজের ডিপে গিয়ে সামনের পা মিড উইকেটের দিকে সরিয়ে বল উড়িয়ে মারছেন লং অন বা ওয়াইড লং অন দিয়ে। এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বা অন্য অনেকে অনেক সময় ইয়র্কারে স্কুপ, প্যাডল, রিভার্স স্কুপ বা নানা কিছু খেলে ফেলেন। সেসব তবু বোলারদের হজম হয়, হুটহাট শট। কিন্তু বাবর যদি এভাবে জেনুইন ক্রিকেট শটের মতো এটি হরহামেশা খেলতে থাকেন, প্রতিপক্ষ বোলার আর অধিনায়কের অসহায় হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

শেষ ম্যাচ শেষে বাবর বলছিলেন, খেলাটা এখন দ্রুত বদলাচ্ছে। সেই বদলের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে দ্রুত উন্নতি করা, নিত্য নতুন কিছু শেখা ছাড়া উপায় নেই।

এই শট নিয়ে নয়, তার সামগ্রিক ব্যাটিং নিয়েই বলেছেন। তবে ওই যে উন্নতি করা আর তাল মেলানোর তাড়না, সেটির একটি প্রমাণ এই শট।

আগের ম্যাচে দলের অবস্থা ভালো ছিল না, ৫০ বলে ৫০ ছুঁয়েছিলেন, পাকিস্তানের সেটি দ্বিতীয় মন্থরতম ফিফটি। আজকে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৪৯ বলে, পাকিস্তানের দ্রুততম সেঞ্চুরি।

বাবরের শট মেকিং, তাঁর দারুণ সব ড্রাইভ, তাঁর ব্যালান্স, তাঁর নান্দনিকতা, চোখ আর মনকে প্রশান্তি দেওয়া সব শট – এসব নিয়ে নতুন করে বলার নেই। টেকনিক একটা সময় পর্যন্ত একটু আলগা ছিল, এখন তা অনেক আঁটসাঁট। এখন তাঁর সহজাত সামর্থ্য আরও শাণিত হচ্ছে, সঙ্গে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন শট। অভিজ্ঞতা তো বাড়ছেই। তারা অভিজ্ঞতা থেকে সত্যিকার অর্থেই শিক্ষা নেন। অধিনায়কত্বের চাপ ব্যাটিংয়ে প্রভাব পড়বে কিনা, সেই প্রশ্ন মিলিয়ে গেছে এর মধ্যেই।

তিনি ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠেছেন, সাড়ে তিন বছর এক নম্বরে থাকার পর কোহলি নেমে গেছেন দুইয়ে। টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে শীর্ষে ওঠার স্বাদ পেয়েছেন আরও আগেই। ওয়ানডের শীর্ষে ওঠার পর বলেছেন, তার মূল লক্ষ্য টেস্টের শীর্ষে ওঠা, কারণ ব্যাটসম্যানদের সামর্থ্য, ভাবমূর্তি আর স্কিলের সত্যিকার প্রতীক সেটিই।

যেভাবে এগোচ্ছেন বাবর, এই লক্ষ্য পূরণের ঠিকানাও খুব দূরে নয়।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link