ক্রিকেট বিশ্বের প্রতিটি দলই তাঁদের নিজেদের সমর্থকদের কাছে সেরা। সমর্থকদের কাছ থেকে পাওয়া অসংখ্য ভালোবাসার কারণে তাঁরা এগিয়ে যায় অনেক দূর। মাঠে সমর্থকদের উপস্থিতি মানেই যেকোনো দলের জন্য আলাদা একটি অর্জন। কারণ সমর্থকদের উপস্থিতি দলগুলোকে অতিরিক্ত অনুপ্রেরণা যোগায়।
মাঠে হাজার হাজার সমর্থকদের মধ্যে কিছু সমর্থক মাঠে আলাদাভাবে নজর কাড়েন। তাঁদের আলাদাভাবে নজর কাড়ার কারণ হলো নিয়মিতভাবে তাঁদের গ্যালারিতে উপস্থিতি এবং দলের প্রতি অতিরিক্ত ভালোবাসা নিবেদন। এই রকম সমর্থকদের উপস্থিতি যেকোনো দলের জন্য বাড়তি পাওনা। এদের উপস্থিতি তাদেরকে ভালো খেলতে অনেক বেশি অনুপ্রেরণা যোগায়।
এমন কিছু ক্রিকেট সমর্থক বা সমর্থকগোষ্ঠীকে নিয়ে খেলা ৭১ এর আজকের এই আয়োজন।
- টাইগার শোয়েব (বাংলাদেশ)
বাংলাদেশের খেলা মানেই গ্যালারিতে খুঁজে পাওয়া যবে এক ব্যক্তিকে যিনি কিনা শরীরে বাঘের মত ডোরাকাটা দাগ একে মাঠে আসেন। এমন দলের জন্য চিৎকার করে গলা ফাটান। উনার নামই শোয়েব আলী, যাকে আমরা চিনি টাইগার শোয়েব নামে।
তিনি পেশায় একজন মোটর মেকানিক। আর্থিক জটিলতা সত্ত্বেও খেলা দেখে বেড়ান এক স্টেডিয়াম থেকে আরেক স্টেডিয়ামে। প্রথম দিকে অনেক আর্থিক সংকটে পড়তে হয়েছিলো শোয়েবকে। কিন্তু এখন আর এই সমস্যা নেই। খেলা দেখার জন্য দেশের সাবেক ক্রিকেটার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্পনসরশিপ পান তিনি।
২০১১ সালের এশিয়া কাপ থেকে বাংলাদেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের কোনো খেলায় মিস করেননি শোয়েব। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে গিয়েও খেলা দেখেছেন টাইগার শোয়েব।
- সুধীর কুমার গৌতম (ভারত)
ভারতের আইকনিক সমর্থক সুধীর কুমার গৌতম। মাঠে দেখা যায় ভারতের পতাকা রঙে শরীরকে রাঙিয়ে সেখানে ‘মিস ইউ টেন্ডুলকার’ । মাথায় কাগজের বিশ্বকাপ ট্রফি। এবার নিশ্চয় সবাই চিনতে পারছেন তাঁকে।
এনিই সুধীর কুমার গৌতম। ১৯৮১ সালে ভারতে বিহার রাজ্যের মুজাফফরপুরে জন্ম তাঁর। ২০০৩ সাল থেকে ভারতের খেলাগুলোতে এই ভাবে তাঁর উপস্থিতি শুরু হয়। তাঁর কাছে ক্রিকেট মানে হলো শচীন টেন্ডুলকার। শচীন খেলার ছাড়ার পরও এখনো স্টেডিয়ামের তাঁর উপস্থিতি বাদ পড়েনি।
খেলা দেখতে গিয়ে কাজ ছেড়েছেন, পড়াশুনা ছেড়েছেন সুধীর কুমার। ২০০৯ সাল আগ পর্যন্ত অনেক কষ্ট করে তাঁকে ভারতীয় দলের কাছে পৌঁছাতে হত। ২০০৯ সালে শচীন টেন্ডুলকারের সাথে হাত মেলাতে গিয়ে পুলিশের হেনস্তার শিকার হন তিনি। সেখান থেকেই তাঁর সম্পর্কে জানেন শচীন টেন্ডুলকার। তাঁর অনুরোধেই ২০০৯ সাল থেকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের খরচে খেলা দেখেন তিনি।
- পার্সি আবেসেকারা (শ্রীলঙ্কা)
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সদস্য না হয়েও যদি কেউ শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের কিংবদন্তি হন, তিনি হলেন পার্সি আবেসেকারা। তিনি শ্রীলঙ্কা দলকে সমর্থন শ্রীলঙ্কার টেস্ট স্ট্যাস্টাস প্রাপ্তির আগে থেকেই।
১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কা দল বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবার পর প্রথমবারের মত আলোচনায় আসেন পার্সি আবেসেকারা। তিনি দাবি করেন তিনি শ্রীলঙ্কার প্রায় এক হাজার ম্যাচ দেখেছেন ।
২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় করে শ্রীলঙ্কা। একই বছর বিশ্বকাপের পর ৭৭ বছর বয়সে তিনি স্টেডিয়াম থেকে অবসরে যান। তাঁর অবসরে যাবার কারণ ছিলো তাঁর বোনের অসুস্থতা। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের বাইরে অন্য দেশের ক্রিকেটারদের সাথেও তাঁর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিলো।
- জলিল চাচা (পাকিস্তান)
পাকিস্তানের অনেক আইকনিক সমর্থকদের সবচেয়ে বেশি পরিচিত হলেন ক্রিকেট চাচা। তিনি পাকিস্তান ক্রিকেটে সবচেয়ে পুরাতন আইকনিক ক্রিকেট ফ্যান। তার পুরো নাম চৌধুরী আব্দুল জলিল।
তাঁকে মাঠে পাওয়া যায় পাকিস্তানের পতাকার রঙে পাঞ্জাবী এবং টুপি পড়া অবস্থায়। তিনি সর্বপ্রথম আলোচনায় আসেন ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত শারজাহ কাপের মাধ্যমে। এরপর থেকে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) তাঁকে সারাবিশ্বের সব প্রান্তেই নিয়ে যেত দলকে সমর্থন দেওয়ার জন্য।
কিন্তু ২০১৫ সালে পাকিস্তান দলের ব্যর্থ বিশ্বকাপ মিশনের পর তাঁকে খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেয় পিসিবি। ২০০৯ সালের শ্রীলঙ্কা দলের সন্ত্রাসী হামলার পর ২০১৫ সালে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম ম্যাচেই দেখা যায় তাঁকে।
এখন আর খুব বেশি ক্রিকেট মাঠে দেখা যায় না তাঁকে। বরং তাঁর পরিবর্তে অন্য অনেক সমর্থকদের দেখা যায় ক্রিকেট মাঠে।
- গায়ান সেনানেয়েকে (শ্রীলঙ্কা)
গায়ান সেনানায়েকে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের আরেক আইকনিক সমর্থক। শ্রীলঙ্কার সব ম্যাচেই মাঠে তাঁর সরব উপস্থিতি দেখা যায়।
১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ জয়ের পর অনেক ক্রিকেট সমর্থকই অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন তিনি। ১৯৯৬ সাল থেকে মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকেই তাঁকে মাঠে দেখা যায় তাঁকে। শ্রীলঙ্কায় তিনি মূলত পরিচিত ‘কমন শ্রীলঙ্কা’ স্লোগানের জন্য।
- বার্মি আর্মি (ইংল্যান্ড)
ইংল্যান্ড ক্রিকেটের কট্টর সমর্থক গোষ্ঠী হলো বার্মি আর্মি। তাঁরা এই নাম নিজেরা দেয়নি, এই নাম তাঁরা পেয়েছিলো অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৯৪-৯৫ মৌসুমের অ্যাশেজের সময়।
এই অ্যাশেজে অনেক বাজে ভাবে হারে ইংল্যান্ড। হারার পরও ইংল্যান্ডের প্রশংসা এবং অস্ট্রেলিয়ার তুমুল সমালোচনা মুখর করে তোলেন তাঁরা। এর পর থেকেই তাঁদের নাম হয় বার্মি আর্মি। সারা বিশ্বের যেখানেই ইংল্যান্ডের খেলা হোক না কেন তাঁরা সমর্থন দিতে চলে যান।
এই কারণে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড তাঁদের জন্য লর্ডস ব্যতীত অন্যসব স্টেডিয়ামে নির্দিষ্ট জায়গা করে দিয়েছে।
এইসব ছাড়াও আরো অনেক সমর্থকগোষ্ঠীকে মাঠে দেখা যায় এদের মধ্যে অন্যতম হলো ভারতের সমর্থকগোষ্ঠী ভারত আর্মি, পাকিস্তানের সমর্থক চাচা টি-টোয়েন্টি প্রমুখ।