তরুণদের গড়ে তুলতেও ম্যান সিটির জুড়ি নেই

আর্লিং হ্যালান্ড থেকে শুরু করে হালের তারকাদের দলে ভেড়ায় ক্লাবটি। তবে এর বাইরেও দলের সাফল্যের একটা বড় হাত দলের একাডেমির।

শুধু খেলোয়াড় ক্রয় নয়, গড়তেও জানে ম্যানচেস্টার সিটি। আর্লিং হ্যালান্ড থেকে শুরু করে হালের তারকাদের দলে ভেড়ায় ক্লাবটি। তবে এর বাইরেও দলের সাফল্যের একটা বড় হাত দলের একাডেমির। সিটির একাডেমি দলকে রিকো লুইস বা ফিল ফোডেনদের মতো বড় খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। তেমনই  বিশ্ব ফুটবলের জন্যও তাদের ছিল অগাধ এক ভাণ্ডার। যা দলকে আর্থিকভাবেও সমৃদ্ধ করে।

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সিটি একাডেমির খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথম নামটাই আসবে কোল পালমারের। চেলসির এই তারকা আদতে একজন ম্যান সিটি গ্র্যাজুয়েট। পাড় ইউনাইটেড ভক্ত পামার যোগ দেন অনূর্ধ্ব-৮ ম্যানচেস্টার সিটি একাডেমিতে।

৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে মূল দলে অভিষেক হয় তাঁর। ১৯ অক্টবরে মিডিয়ার নজরে আসেন তিনি। যেখানে তিনি একই দিনে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে হ্যাট্রিক এবং ইএফেল কাপে গোল করেন। বাইশ বছর বয়সী এই তারকা অন্য তারকাদের ভীরে সিটিতে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ কমই পেয়েছেন। তাই ২৩-২৪ মৌসুমের পহেলা সেপ্টেম্বরে যোগ দেন চেলসিতে।

ফর্ম খরায় ভোগা চেলসি দলে পালমার ২২ গোল আর ১১ এসিস্টের জোড়ে জেতেন প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম সেরা পুরষ্কার। লিগে সহ তাঁর গোল সংখ্যা ২৭ সাথে ১১ এসিস্ট। এছাড়া জেতেন মৌসুম সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরষ্কার। চলতি মৌসুমেও তাঁর আছে ৬ গোল আর ৪ এসিস্ট।

পালমারের মতোই আরও এক চেলসি তারকা জেডন স্যাঞ্চো। যিনি ম্যান ইউ থেকে লোনে এসেছেন চেলসি দলে। ডর্ট্মুন্ডের দ্বিতীয় দল থেকে উঠে এসে ডর্ট্মুন্ডেই ইতিহাস গড়েন তিনি। ১৯ সালে গোল্ডেন বয় পুরষ্কারের রানার্স আপ হন তিনি। ইউনাইটেডে যোগ দিয়েও আরেক দফা ডর্ট্মুন্ড দলে লোনে এসে ইউসিএল ফাইনাল খেলেন তিনি। এখন এই উইঙ্গার আছেন চেলসিতে। মজার বিষয়, সম্ভাবনা জাগানো এই তরুনও ১৪ বছর বয়সে ছিলেন সিটি একাডেমিতে।

এই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে নতুন যোগ হয়েছে ইপসউইচ টাউন। প্রিমিয়ার লিগে এ সিজনে তাদের নব্য ফরওয়ার্ড ছিলেন লিয়াম ডেলাপ। ২১ বছর বয়সী এই তারকার ইতোমধ্যেই ৬ ম্যাচে করে ফেলেছেন ৩ গোল। ১৯ সালে যোগ দেন সিটির একাডেমিতে। একে একে সব পর্যায় থেকে ২০ সালে সিটির জার্সিতে মাঠে নামেন তিনি। দু’ম্যাচ পর তিন দফা লোনে কাটান স্টোক সিটি, প্রেস্টন নর্থ এন্ড আর হাল সিটিতে। এই তিন মৌসুমে ৬৮ ম্যাচে করেন ১২ গোল। যার ৮ টি এসেছে গত মৌসুমে।

অনেকক্ষণই আক্রমণ ভাগের একাডেমি গ্র্যাজুয়েটদের কথা হলো। তাহলে এবার আসি রক্ষণ ভাগে। গত মৌসুমটা বায়ার লেভারকুজেন দলের জন্য ছিল এক ঐতিহাসিক মৌসুম। অপরাজিত লিগ জেতা সেই দলের রক্ষণ ভাগের কাণ্ডারি ছিলেন জেরেমি ফ্রিমপং।

ডাচ এই ২৩ বছর বয়সী তরুণ ২১ সালে লেভারকুজেন দলে যোগ দিয়েছেন। ১০৪ ম্যাচে তাঁর আছে ১৯ গোল। এর আগে ১৯-২১ সাল কাটিয়েছেন সেল্টিক দলে। লেভারকুজেনের এই রাইট ব্যাক ন’বছর বয়সে যোগ দেন সিটি একাডেমিতে। সেখানে বয়সভিত্তিক যুব দলে খেলেছেন প্রিমিয়ার লিগ টু। এছাড়াও সিটি জার্সিতে খেলেছেন যুব উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।

এছাড়াও এ মৌসুমে ডর্ট্মুন্ডের ইউসিএলে গোল করা ২০ বছরের জেমি গিটেন্সও আগামীর ফুটবলে বড় নাম হবে আশা করা যাচ্ছে। তাছাড়া ম্যানসিটি বি’দলের উল্লেখযোগ্য নাম কেলেচি ইহেনাচো বা রিয়ালের ব্রাহিম দিয়াজও ইউরোপে আলো ছড়াচ্ছেন। যার মূল কৃতিত্ব  সিটির এলিট ডেভেলপমেন্ট স্কোয়াডের। এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষই ছিল যুব ও মূল দলের সেতু আকারে কাজ করা।

যার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল চেলসি প্রধান এনজো মারেসকার হাতে। এখানে ম্যানেজার পেপ গার্দিওলারও এক বিশেষ গুনের পরিচয় পাওয়া যায়। সেটা হলো মূল দলে কম সুযোগ পাওয়া খেলোয়াড় দের যথাযোগ্য বিপণন করেন তিনি। এই সুবাদেই গত তিন মৌসুমে দলের কোষগারে জমা হয় ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড। বিবিসি স্পোর্টসের ফুটবল নিউজ বিভগের প্রধান রিপোর্টার এ সিস্টেমকে  ‘গ্রেড ওয়ান’ বলেই আখ্যা দেন।

নিঃসন্দেহেই ফুটবল বিশ্বে অন্যতম বড় দল ম্যানচেস্টার সিটি। যাদের মাহাত্ম্য কেবল দামী খেলোয়াড় কেনাতেই সীমাবদ্ধ না। পাশাপাশি আছে তাদের যুব দল ও দ্বিতীয় দল। যা কেবল তাদের ভালো খেলোয়াড়ই দেয়নি। দলেকে সুযোগ করে দিয়েছে ব্যবসায়িক প্রসারের। আর ফুটবল বিশ্বে যোগ করেছে অনন্য সব প্রতিভা।

Share via
Copy link