যেভাবে শক্ত ছিলেন সিরাজ

সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়া সিরিজে বল হাতে দুর্দান্ত পারফরম করেছিলেন পেসার মোহাম্মদ সিরাজ। কিন্তু সফরটা তাঁর জন্য স্রেফ আনন্দের ছিল না।

অস্ট্রেলিয়া সফরে যাবার পরই শুনতে পান তার বাবা মারা গেছেন! বাবার মৃত্যুর খবর শুনেও দেশের হয়ে খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়াতেই থেকে গেছেন তিনি। বাবার দাফনের সময়েও থাকতে পারেননি পাশে। মানসিক ভাবে বেশ ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।

এই শোক নিয়েই অজিদের বিপক্ষে মাঠে নামেন তিনি। বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়ের ইনজুরিতে মোট তিন টেস্টে সুযোগ পান তিনি। আর তিন টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হন! রহস্যটা কি?

তাঁর নজরকাড়া পারফরম্যান্সে ভারত অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ২-১ এ সিরিজ জেতে ভারত। ২৬ বছর বয়সী সিরাজ বল হাতে অনবদ্য পারফরম্যান্স করেন। সিরাজে ক্যারিয়ারের জন্য সেই অজি সিরিজ কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হয়তো তিনি আজ বুঝতে পারছেন। কারণ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের ভারতীয় দলে ডাক পেয়েছেন সিরাজ। সেই সাথে পরবর্তীতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টে সিরিজেও আছেন তিনি।

সিরাজ বলেছেন, তার এই কঠিন সময়ে তাকে দারুণ সমর্থন দিয়ে শক্ত রেখেছেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি ও কোচ রবি শাস্ত্রী।

ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে সিরাজ বলেন, ‘যখন আমার অভিষেক হয়, আমি আমার দলকে শতভাগ দিয়েছি। দিনশেষে আমি জিতেছি। সেই জয় আমার জন্য অন্যরকম অনূভুতি। অস্ট্রেলিয়া সফর আমাকে অনেক আত্মবিশ্বাস দিয়েছে। এই আত্মবিশ্বাস আমি ইংল্যান্ডেও ধরে রাখবো।’

সিরাজ সবসময়ই তাকে সাপোর্ট করার জন্য একজনকে ক্রেডিট দেয় তিনি হলেন অধিনায়ক বিরাট কোহলি। এবারের আসরের আইপিএলে (স্থগিত হবার আগে) চেন্নাইর বিপক্ষে এক ম্যাচে ৬৯ রানে হারার পর ড্রেসিং রুমে দাঁড়িয়ে ছিলেন সিরাজ। তখন বিরাট কোহলি তাকে সেখানেও উৎসাহ দেন।

তিনি বলেন, ‘বিরাট ভাই সবসময়ই আমাকে বলে, তোর মধ্যে সামর্থ্য আছে, তুই পারবি, তোর মধ্যে যোগ্যতা আছে যেকোনো উইকেটে খেলার, তুই যেকোনো ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারিস। চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচ ছিলো, বিরাট ভাই আসলো এবং বললো – মিঁয়া, তোমার মধ্যে যেসব পরিবর্তন আসছে সেগুলা অসাধারণ। এটা আমাদের দলের জন্য ভালো। ইংল্যান্ড সফরের জন্য প্রস্তুত হও। শুভকামনা। ভালো কাজ করতে থাকো। বিশ্বের অন্যতম সেরা অধিনায়ক থেকে শোনা এই কথাগুলো আমাকে বেশ মোটিভেট করেছে।’

যখন সিরাজের বাবার মৃত্যু হয় তখন সিরাজ অস্ট্রেলিয়ায় অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন। তাকে এই শোক সংবাদটা দেয় বিরাট কোহলি এবং রবি শাস্ত্রী। সিরাজ এটা শুনেই তার রুমে যেয়ে বসে চিৎকার করে কাঁদছিলেন। এই সময়ে সিরাজকে সামাল দেন অধিনায়ক খোদ। কারণ ২০০৬ সালে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলাকালীন বিরাটের বাবা মারা যান। সিরাজ বলেন, তার সেই কঠিন মূহূর্তে কোচ রবি শাস্ত্রী এবং বিরাট কোহলি তাঁর পাশে ছিলেন।

সেই সময়ের কথা সিরাজ বলছিলেন, ‘আমি আমার বাবাকে হারাই অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময়। আমি চিৎকার করছিলাম এবং সজ্ঞানে ছিলাম না। বিরাট ভাই আমাকে সাপোর্ট করেছে। আমার ক্যারিয়ার বিরাট ভাইর জন্যই হয়েছে। সে (বিরাট) আমাকে প্রতি মূহুর্তে সাপোর্ট করেছে। সে সবসময় আমার পাশে ছিলো সব সিচুয়েশনেই। আমি এখনো মনে করতে পারি আমি হোটেল রুমে কিভাবে কাঁদছিলাম।’

বিরাট ভাই আমার রুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো শক্তভাবে এবং বললো,  ‘আমি তোর সাথে আছি, চিন্তা করিস না। এই শব্দগুলা আমাকে অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করে। সে (বিরাট) মাত্র এক টেস্টে খেলেছিলো অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু তার মেসেজ এবং কল আমাকে মোটিভেট করছিলো। এবং সেজন্যই আমি পারফর্ম করতে পেরেছিলাম। ব্যাঙ্গালুরুর সাথেও আমার শেষ দুই মৌসুম ভালো কাটেনি। কিন্তু সেখানেও বিরাট ভাই আমাকে সাপোর্ট করেছিলো।’

রবি স্যার সবসময় বলেন, ‘তুই একজন চ্যাম্পিয়ন বোলার আমাদের দলের। সে সবসময় আমাকে উৎসাহ দিতো আমার কাঁধে হাত রেখে। সে আমাকে অনুশীলনে নেটে বল করার জন্য দিতো সেই কঠিন সময়ে। তার এই বয়সেও তিনি বেশ শক্ত এখনো।’

‘শক্ত’ আছেন সিরাজও। শোক কাটিয়ে তিনি যেমন অস্ট্রেলিয়াতে নায়ক হয়েছিলেন, নায়ক হয়েছেন ইংল্যান্ডেও – লর্ডসে শেষ বেলার লড়াইয়ে হারিয়েছেন ইংল্যান্ডে। এই অনবদ্য লড়াইটা থাকবে স্মরণীয় হয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link