মুস্তাফিজুর রহমানের আন্তর্জাতিক অভিষেক ছিল বিস্ময়কর। তাঁর প্রতিফলন ছিল আইপিএল অভিষেকেও। ২০১৬ আইপিএল নিলামে ৫০ লাখের বেস প্রাইজের মুস্তাফিজের জন্য লড়াই হল মূলত সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ আর রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙালুরুর মধ্যে। শেষ অব্ধি ১ কোটি ৪০ রুপিতে হায়দ্রাবাদে ভিড়লেন মুস্তাফিজ।
প্রথম ম্যাচেই মুখোমুখি সেই ব্যাঙালুরুর সাথে। গেইল, কোহলি, ডি ভিলির্য়াস, শেন ওয়াটসন, সরফরাজের মত হার্ড হিটারও টি-টোয়েন্টি স্পেশালিষ্টদের বিপক্ষে যেখানে নাকানি চুবানি খাচ্ছিলো বাকিরা, সেখানেই ব্যতিক্রম মুস্তাফিজ। প্রতিপক্ষের যেখানে ২২৭ রান স্কোরবোর্ড তুলে ফেলেছেন সেখানে ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান খরচায় এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং ওয়াটসনের উইকেট তুলে নিয়ে নিজের আগমনের জানান দেন মুস্তাফিজ।
ফাইনালে সেই ব্যাঙালুরুকে হারিয়েই প্রথম আসরেই আইপিএল জেতার গৌরব অর্জন করলেন মুস্তাফিজ। পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ বোলিং করে ১৬ ম্যাচে ৬.৯০ ইকোনমি তে তুলে নেন ১৭ উইকেট। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীদের মধ্যে ছিলেন পঞ্চম স্থানে, পেয়ে যান আসরের সেরা উদীয়মান তারকার পুরস্কার। এখন অবধি একমাত্র অভারতীয় হিসাবে এই পুরস্কার অর্জনের গৌরব শুধুমাত্র মুস্তাফিজেরই আছে।
সেই থেকেই শুরু দ্য ফিজের।এরপরে চেন্নাই, দিল্লী, মুম্বাই, রাজস্থান, হায়দ্রাবাদের হয়ে আইপিলে মোট ৭ আসরে ৫৭ ম্যাচে ৮.১৪ ইকোনমিতে ৬১ টি উইকেট নিজের ঝুলিতে তুলেছেন মুস্তাফিজ।সর্বশেষ আইপিএলেও ৯ম্যাচে ১৪ উইকেট আছে তার।
কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে এতকিছুর পরেও মুস্তাফিজ কেন এত কম দামে বিক্রি হন বা রিটেনশন লিস্টে থাকেন না। সেই ২০১৬ সালে মুস্তাফিজের সাথে আলো কাড়া বুমরাহ আজ বিশ্ব ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে বড় ত্রাসের নাম। কিংবা শেষ মৌসুমে মুস্তাফিজের সাথেই খেলা পাথিরানার কথাই ধরা যাক মাত্র এক মৌসুম খেলেই তাঁকে ১৩ কোটিতে দলে রেখে দিয়েছে চেন্নাই। তাহলে মুস্তাফিজের ঘাটতি কোথায়?
ঘাটতি হচ্ছে তার সময়ের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না পারা। কাটার, সুইং আর পেস বা ডেডলি ইর্য়াকারটা কন্টিনিউ করতে না পারা, যার কারণেই দেখতে পাই ২০১৬ সালে আগুন ঝড়ানো ফিজ ১৭-এর আইপিএলে ম্যাচই খেলেছেন মাত্র একটা, ২০২৩ সালের আইপিএলে মাত্র দুইটা, বাকি আসর গুলোতেও পারফরম্যান্স ছিল খুবই সাদামাটা। বিশেষ করে ডেথ ওভারের স্পেশালিষ্ট হয়ে উঠতে না পারাটাই সবচেয়ে বড় দায় হয় দাঁড়ায় ফিজের জন্য।
মার কাটারি এই ক্রিকেটের যুগে ডেথ ওভার স্পেশালিষ্টের মূল্য ধুধু মরুভূমিতে একটা পানির কুয়ার মতই দামি। সেই যায়গায় আস্থাভাজন হতে পারেননি ফিজ, হারিয়েছেন তার চিরচেনা কাটার এর ধারও। এর বাদে দেশের ক্রিকেট বোর্ডের অনাপত্তিপত্র দিতে অতিরিক্ত আপত্তি ও অনেক বড় কারণ। এর কারণে, আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও মুস্তাফিজকে নিয়ে বা বাংলাদেশিদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা করা যায় না। পুরো মৌসুম খেলারই নিশ্চয়তা যার নেই, তাঁকে দিয়ে কয়েকটা মৌসুম কেন কোনো দল ভাববেন।
তাই, মুস্তাফিজ কার্যত আইপিএলের ভবঘুরে ক্রিকেটার। আজ এ দল, কাল অন্য দল। পারফরম করলেও তাঁকে ঘিরে পরিকল্পনা সাজায় না কোনো দল। সীমাবদ্ধতার বেড়াজালেই হয়ত আটকে গেছেন দ্য ফিজ!