ব্রাজিল একটি অত্যন্ত বিভক্ত দেশ- শ্রেণি বৈষম্য কিংবা সংস্কৃতির তারতম্য দেশটিতে প্রবল। তবে একমাত্র বিষয় যা সমস্ত ব্রাজিলিয়ানদের একত্র করে, তা হল জাতীয় ফুটবল দলের প্রতি তাদের অপরিসীম ভালোবাসা। ফুটবল তাদের রক্তে প্রবাহিত হয়। এটি ফুটবল প্রাণ একটি দেশ।
ব্রাজিল পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে, যা অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি। সর্বশেষ জয়টি আসে ২০০২ সালে, যখন জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মাটিতে সেই গ্রীষ্মে রোনালদো—সেই কিংবদন্তি ‘আর৯’— মাঠে ঝড় তোলে। তিনি ফাইনালে দুটি গোল করে ব্রাজিলের বিজয় নিশ্চিত করেন।
রোনালদো ব্রাজিলে একজন ‘আইকন’ ছিলেন, এবং তার বিশেষ স্টাইলের আধা-ন্যাড়া চুলের স্টাইলটি লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল, এমনকি ছোট্ট নেইমারকেও, যারা তাদের আদর্শকে অনুকরণ করে মায়েদের বিরক্ত করেছিল।
তবু, সেই গৌরবময় গ্রীষ্মের পর ২১ বছরে, জাতীয় দল এমন একজন স্ট্রাইকার খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছে। রোনালদোর শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেনি কেউ। রোনালদোর পর, ব্রাজিল একটি পরিবর্তন এবং পরীক্ষার সময়ে প্রবেশ করেছিল। কোচ এবং নির্বাচনকারীরা এমন একজন খেলোয়াড় খুঁজতে চেষ্টা করছিলেন যে তার প্রতিভা এবং সামর্থ্যের সমতুল্য হতে পারে, কিন্তু রোনালদোর জাদু পুন:রায় তৈরি করা প্রায় অসম্ভব।
বছরের পর বছর ধরে, লুইস ফাবিয়ানো, ফ্রেড এবং পাতো এর মতো খেলোয়াড়েরা সেই ভূমিকা নিতে চেষ্টা করেছেন। প্রত্যেকেরই কিছু বিশেষ মুহূর্ত ছিল, কিন্তু কেউই ধারাবাহিকভাবে এমন পারফর্ম করতে পারেনি যা ব্রাজিলের নাম্বার নাইনের কাছে প্রত্যাশিত। এক সময়, অ্যাড্রিয়ানোকে রোনালদোর প্রকৃত উত্তরসূরি মনে করা হয়েছিল।
২০০৪-০৫ মৌসুমে তিনি ৪২ টি গোল করেছিলেন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের লক্ষণ তুলে ধরছিলেন। তার শট ছিল কামানের মতো শক্তিশালী, তবুও তিনি মসৃণতার সাথে দৌড়ে বেড়াতে পারতেন। কিন্তু তার বাবার মৃত্যুর পর, তিনি ফর্ম এবং ফিটনেস হারান এবং আর ফিরে আসেননি।
সম্প্রতি, নেইমার প্রায়ই ব্রাজিলের গোল করার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি নি:সন্দেহে বিশ্বমানের একজন খেলোয়াড়, তবে তার শক্তি গোল করা নয় বরং খেলার গতি এবং আক্রমণের সুযোগ তৈরি করা। এটি ফুটবলের একটি পরিবর্তনের দিক দেখায়, যেখানে একক স্ট্রাইকারের ভূমিকা এখন অনেক বেশি নমনীয়তার দিকে ঝুঁকছে।
টটেনহ্যামের রিচার্লিসন এবং কখনো কখনো আর্সেনালের গ্যাব্রিয়েল জেসুস কখনো কখনো স্ট্রাইকারের ভূমিকা পালন করেছেন। জাতীয় দলে রিচার্লিসন বিশেষভাবে ভালো পারফর্ম করেছেন, ৪৮ ম্যাচে ২০টি গোল করেছেন। ২০২২ সালে তিনি ১০ ম্যাচে ১০ গোল করেন, যা তার থেকে উচ্চ প্রত্যাশা তৈরি করে। কিন্তু তার মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা আছে যা ভক্তদের ভাবিয়ে তোলে। রিচার্লিসনের প্রমাণ করতে হবে যে তিনি ব্রাজিলের নাম্বার নয় হিসেবে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকতে পারবেন।
ব্রাজিলের পরবর্তী বড় স্ট্রাইকার খোঁজা এখনো চলছে। তরুণ প্রতিভা সামনে আসছে, এন্ড্রিককে ইদানিংকালে দেখা যাচ্ছে ব্রাজিলের হয়ে খেলতে। এন্ড্রিক ইতোমধ্যে ব্রাজিলের জন্য পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন। তাঁর মধ্যে থাকা প্রতিভা ভক্তদের মনে আশার আলো দেখাচ্ছে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি সম্ভাবনা দেখাচ্ছেন, কিন্তু তার ওপর চাপ বাড়ানো বিপজ্জনক হতে পারে। উচ্চ মানদণ্ডের সাথে তাকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে।
ব্রাজিলিয়ান ফুটবল সংস্কৃতি এখনো আগের মতোই প্রাণবন্ত ও আবেগপূর্ণ, ফুটবলের প্রতি তাদের গভীর ভালোবাসা যেন অমলিন। রোনালদোর উত্তরসূরি খুঁজে পাওয়ার স্বপ্ন এখনো জীবিত এবং ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সেই নতুন তারকার জন্য যে দেশকে আবারও বিশ্বকাপের গৌরব এনে দিতে পারবে।