শেকড় থেকে শিখরে, অবিসংবাদিত ফ্যাবুলাস

রুট যেন ব্যাট হাতে গাইলেন, 'এভাবেও ফিরে আসা যায়।'  তার প্রত্যাবর্তনটা যেন এক রূপক কাব্যের মতো—প্রতিটি সেঞ্চুরি যেন জীবনের গানের সুর। উত্থান-পতন যেন তার তাল।

প্রত্যাবর্তনের এক অনন্য গল্প লিখলেন জো রুট। বুঝিয়ে দিলেন, পিছিয়ে পড়া মানে হেরে যাওয়া নয়। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করা তার ৩৬তম টেস্ট সেঞ্চুরিটা, যেন সেই গল্পের আরেকটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা অধ্যায়।

২০২০ সালটা তিনি টেস্ট সেঞ্চুরির খাতা শূন্য রেখেই বছর শেষ করেছিলেন। তখন অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো রুটের সেরা দিনগুলো পেছনে পড়ে গেছে। অপরদিকে স্টিভেন স্মিথ, বিরাট কোহলি, এবং কেন উইলিয়ামসন তখন ফর্মের শিখরে।

‘ফ্যাবুলাস ফোর’ – এর মধুর লড়াইয়ে রুট যেন ছিলেন এক দেরিতে ফোটা ফুল। ২০২১ সালের শুরুতে যেখানে কোহলির সেঞ্চুরি ছিল ২৭ টি, স্মিথের ২৬ টি, উইলিয়ামসনের ২৪ টি। সেখানে রুটের নামের পাশে ছিল মাত্র ১৭ টি। কিন্তু এই গল্পটা ছিল শুধুই অপেক্ষার। যেন মাটির নিচে চুপচাপ বেড়ে ওঠা এক বটবৃক্ষ, যে তার শেকড়গুলো শক্তিশালী করছে।

সময়ের পরিক্রমায় যখন আলো পেল, তখন তার ছায়া ঢেকে দিল পুরো প্রাঙ্গণ। গত চার বছরে রুট করলেন ১৯টি টেস্ট সেঞ্চুরি, যা তাকে রেখেছে তার ফ্যাব ফোর সঙ্গীদের থেকে বহু এগিয়ে। উইলিয়ামসন এই সময়ে করেছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯টি। কোহলি ও স্মিথরা যেন ঐ সেই বটবৃক্ষের ছায়ায় ঢাকা পড়ে গেলেন।

রুটের এই প্রত্যাবর্তন যেন এক রূপকথার গল্প। তার ব্যাট ছিল রঙিন তুলির মতো, যা প্রতিটি ইনিংস নতুন করে আঁকল ইতিহাসের ক্যানভাসে। ঘরের মাঠ কি বিদেশের মাটি, প্রতিটি জায়গায় তিনি ছিলেন একই রকম অপ্রতিরোধ্য।

২০২১ সালে সেঞ্চুরি করেছিলেন ছয়টি, ২০২২ সালে পাঁচটি, ২০২৩ সালে দুটি। আর চলতি বছরে করেছেন আরও ছয়টি সেঞ্চুরি। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম আট বছরে যেখানে করেছিলেন ১৭টি সেঞ্চুরি, সেখানে গত চার বছরেই তিনি করলেন ১৯টি।

রুটের এই যাত্রা প্রমাণ করে, একজন সত্যিকারের শিল্পী কখনোই থেমে থাকেন না। কঠিন সময় যেন তার জন্য ছিল এক দীর্ঘ রাত। আর এই রাতই তাকে পরিণত করেছে এমন এক উজ্জ্বল নক্ষত্রে, যে আলোয় মুগ্ধ হয়ে থাকে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব।

গত ৪ বছরে এখন অবধি ৫৭ এর উপরে গড়ে রান করেছেন ৫০৬৩। অমানবিক, অভাবনীয়, অদ্ভুতড়ে – কোন বিশেষণ দিয়েই আসলে এই অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক পারফরম্যান্সকে ব্যাখা করা সম্ভব না।

রুট যেন ব্যাট হাতে গাইলেন, ‘এভাবেও ফিরে আসা যায়।’  তার প্রত্যাবর্তনটা যেন এক রূপক কাব্যের মতো—প্রতিটি সেঞ্চুরি যেন জীবনের গানের সুর। উত্থান-পতন যেন তার তাল।

Share via
Copy link