তিনি সাজঘরে ফিরেই গিয়েছিলেন। ক্ষোভে সম্ভবত হেলমেটও ছুড়ে ফেলেছিলেন। কে জানত, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসনে আসিন সেই দেবতা অন্যরকম একটা ইতি ভেবে রেখেছিলেন জাকের আলী অনিকের জন্য।
পরিস্থিতি ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পর পর দুই ব্যাটার তাঁর সাথেই ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে ফিরে গেছেন সাজঘরে। তখন বাংলাদেশের জন্য ১৩০-১৪০ রানের সম্মানজনক পুঁজি গড়ে তোলাই কঠিন। ঠিক ওই সময়টা জাকেরের জন্য ভয়াবহ চ্যালেঞ্জিং।
কিন্তু, এই ক্যারিবিয়ান কন্ডিশন যে আজকাল জাকেরের হাতের মুঠোয়। এই মাঠেরে ঘাসকে, এই উইকেটের প্রতিটা বালিকণাকে যে তিনি নিজের হয়ে কথা বলাতে জানেন। সেই পছন্দের কাজটাই আরেকবার করে ফেললেন জাকের আলী।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশন এতটাই প্রিয় তাঁর, সব ফরম্যাটই এখানে তাঁকে দিয়েছে হাত ভরে। জাকের নিজেও কোনো কার্পণ্য করেননি। ব্যাট হাতে সেটা ফিরিয়ে দিয়েছেন ক্যারিবিয়ান বোলারদের।
১৫ তম ওভারে দ্বিতীয় জীবন পাওয়া জাকের আলী বাকিটা সময় যা করলেন তাঁর মধ্যে লেখা থাকল সেই চিরচেনা ক্যারিবিয়ান প্রতাপ আর আগ্রাসন। সেই আগ্রাসনের জোয়ারে প্রথমে ৫০ রানের জুটি গড়লেন তানজিম হাসান সাকিবের সাথে। সেটাও মাত্র চার ওভার এক বলে।
তানজিম ফিরে যাওয়ার পর জাকের ছিলেন আরও ভয়ংকর। শেষ একটা ওভারে তিনি একাই নিলেন ২৫ টি রান। এতকাল পাওয়ার হিটিংয়ের আদর্শ সব ইনিংস খেলেছেন এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটাররা। সেই সব ধুন্ধমার ব্যাটারদের সামনে একজন ব্যাটার দেখিয়ে দিলেন, বোলারদের রাতের ঘুম কিভাবে কেড়ে নিতে হয়।
আলজারি জোসেফের সাথে টেস্ট সিরিজ জুড়েই বাংলাদেশি ব্যাটারদের কথার লড়াই চলেছে। আর সেই লড়াইয়ের কফিনে শেষ পেড়েকটা ঠুকলেন জাকের আলী। বল যেভাবে একের পর এক আরনস ভ্যালে গ্রাউন্ডের বাইরে ঝড়ে পড়ল, তাতে এই ইনিংসটা সহসাই ভুলতে পারবেন না আলজারি জোসেফ।
জাকেরকে আদৌ কেউ থামাতে পারেননি। তিনি ৪১ বল খেলে ৭২ রান অবধি গিয়েছেন। প্রতিপক্ষের সামনে ছুড়ে দিয়েছেন ১৯০ রানের লক্ষ্য। তিনটি চার আর ছয়টি ছক্কায় সাজানো প্রলয়ঙ্কারী এক ঝড়। ক্যারিবিয়ান সাগরের উত্তাল ঢেউও যেখানে থমকে যেতে, চমকে উঠতে বাধ্য।
বাংলাদেশে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার এই সিরিজটা শুধু খেলছেন জাকের আলীই। বাকিরা এখানে নিরব দর্শক। সেই নিরব দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার দায়িত্বও জাকের আলীর একার। শেষ ২২ বলে করলেন ৫৪ রান। দ্য স্টার ইন দ্য মেকিং!