কোন প্রকার ভূমিকা বাদ দিয়ে একটা গল্প বলি। গল্পটা ফরচুন বরিশালের। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে তাদের সাফল্যের। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ খেলতে নামলেই কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করে বরিশাল। দুইবার ফাইনাল খেলা দল এবারের বিপিএলেও সেরা চারে নিজেদের স্থান নিশ্চিত করে ফেলেছে। কি করে প্রতিবারই সফলতার দেখা পাচ্ছে দলটি?
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফরচুন বরিশাল তিন ম্যাচ হাতে রেখেই এবারের কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে। এর মূল কারণ দলটির সঠিক পরিকল্পনা। একটু হাস্যরস মিশিয়ে অনেকে দলটিকে বিপিএলের চেন্নাই সুপার কিংস বলেও আখ্যায়িত করে। এর কারণ মূলত অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের আধিক্য। কিন্তু খুব একটা ব্যঙ্গ করবার সুযোগ অবশ্য বরিশাল রাখেনি এখন পর্যন্ত।
ফরচুন বরিশাল ফ্রাঞ্চাইজিটির রয়েছে স্বচ্ছ পরিকল্পনা। তারা জানেন, তারা ঠিক কি করছেন। মূলত প্রতি আসরে দল ঢেলে সাজায় না ফ্রাঞ্চাইজিটি। দলের ভিত্তি সর্বদা ঠিক রেখে ড্রাফটের টেবিল থেকে খেলোয়াড় যুক্ত করছে তারা। যেমন প্রথম আসরে তাদের দলের কেন্দ্র ছিলেন সাকিব আল হাসান। তাকে ঘিরে দল সাজিয়েছিল। সেই দলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজদের মত খেলোয়াড়রা ছিলেন।
সাকিব আল হাসান ছেড়ে যাওয়ার পর, ফরচুনদের খেলোয়াড়ি বৃত্তের কেন্দ্রীয় চরিত্র বনে যান তামিম। সেই তামিমের দলে মুশফিকুর রহিম এসে যুক্ত হয়েছেন। কেন্দ্র বিচ্যুত, বিক্ষিপ্ত কোন দল অন্তত বানায় না বরিশাল ফ্রাঞ্চাইজি। তাছাড়া প্রতিটা পজিশনের জন্যে খেলোয়াড় বাছাই করা ও তাদের বিকল্প ঠিক রাখার কাজটাও দারুণভাবে করে যাচ্ছে ফরচুন বরিশাল।
শুধু দেশী খেলোয়াড় নয়, বিদেশি খেলোয়াড়দেরও স্রেফ নামের ভারে দলে ভেড়ায় না গেল আসরের চ্যাম্পিয়নরা। ভিনদেশী খেলোয়াড় ঠিক কতটুকু ‘ইম্প্যাক্ট’ রাখতে পারবেন, সেদিকেও মনোযোগ থাকে তাদের। ‘ইম্পালসিভ’ সিদ্ধান্তও নেয়না দলটি। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বিদেশী ক্রিকেটারদের আসা-যাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা।
বরিশালের ক্ষেত্রেও ঘটে এমনটি। এই যেমন এবারের আসরে কাইল মায়ার্স ইতোমধ্যেই বরিশালের ডাগআউট ছেড়েছেন। তার বদলে ওপেনিং পজিশনে তারা নিয়ে এসেছে ডেভিড মালান। আবার মায়ার্স পেস বল করতে জানতেন, তার শূন্যস্থান পূরণ করতে জেমস ফুলারও যুক্ত হয়েছেন। এমনকি ফরচুন বরিশালের আবহাওয়ার সাথে পরিচিত বিদেশিদেরই দলে অন্তর্ভুক্ত করছে তারা।
গেল আসরে বাঁ-হাতি পেসার হিসেবে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছিলেন ওবেদ ম্যা ককয়। সেই একই ধাঁচের বোলার হিসেবে এবার বরিশালের ডেরায় পাঁচটি ম্যাচ খেলে গেছেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। এক প্রকার আপগ্রেডেশন হয়েছে এক্ষেত্রে। তাছাড়া বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে ওয়াসিম জুনিয়র ছিলেন বরিশালে। তার পরিবর্তে ফাহিম আশরাফ রয়েছে এবারের দলে।
এই বিষয়গুলো বলে দিচ্ছে ঠিক কতটা মাথা খাটিয়ে দল সাজায় তারা। নিশ্চিতরূপেও মাঠের ক্রিকেটের নীল-নকশা করতেও এমন বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। সে প্রতিফলন তো মাঠেই ফুটে ওঠে। ঠিক এ কারণেই সফলতা ধরা দিচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিদের হাতে।
এক্ষেত্রে অবশ্য চেন্নাই সুপার কিংস বলা যেতে পারে ফরচুন বরিশালকে। তবে সেটা সঠিক পরিকল্পনা, ভিত্তি অনড় রাখা ও মাঠে নীলনকশা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারার জন্য। বিপিএলের হাজার খানেক অপেশাদারিত্বের মাঝে ফরচুন বরিশাল বেশ পেশাদারিত্বের সাথে সামলে নিচ্ছে গোটা দলটাকে।
এমনকি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়েও নেক্কারজনক ঘটনার ধারেকাছেও নেই ফ্রাঞ্চাইজিটি। এছাড়া বিপিএল শুরুর আগে ‘সিকিউরিটি মানি’ জমা দিতে হয়, একাদশ বিপিএলে এই অর্থটুকু নিশ্চিত করেছে স্রেফ ফরচুন বরিশাল। ঠিক এতটাই পেশাদারিত্বের সাথে দল চালিয়ে যাচ্ছে তারা, যেন গোবরে ফোটা গুটিকতক পদ্মফুলের একটি।