খুশদিল শাহ জানেন, হারার জন্য তিনি মাঠে নামেননি। জানেন, হার মানার মানসিকতা নিয়ে খেলা যায় না। জানেন, লড়াইটা শেষ করতে হয় শেষ বল পর্যন্ত। জানেন, ক্রিকেটে ‘হয়তো’ বলে কিছু নেই, চেষ্টা করতে হয়, পারলে জিততে হয়। আর সেই চেষ্টাটা অন্তত তিনি করেছেন।
কিন্তু সমস্যা হল, ক্রিকেট একার খেলা নয়। খুশদিল শাহ একাই লড়ে গেলেন, বাকিরা যেন কেবল উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই মাঠে নেমেছিলেন। এটাই পাকিস্তানি ক্রিকেটের ট্র্যাজেডি, এটাই পাকিস্তানের হারার কারণ।
৪৯ বলে ৬৯ রান, সাতটি চার, তিনটি ছক্কা—সংখ্যাগুলো দেখলে বোঝার উপায় নেই, ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত টেনে নেওয়া অসম্ভব ছিল কি না। যদি খুশদিলের পাশে আরও একজন থাকতেন, যদি বাবর আজম নামে কেউ সামনে দাঁড়াতেন, তাহলে হয়তো গল্পটা বদলে যেত। কিন্তু, বাবর আজম সামনে দাঁড়াননি।
পাকিস্তানের ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ পুরনো দিনের মেলোড্রামার মতন—শুরুর দিকে এক-দুই করে খেলে সময় কাটাবে, শেষদিকে চেষ্টা করবে আগুন লাগাতে। কিন্তু, এই থিওরির মারাত্মক ত্রুটি হলো, ক্রিকেটে সময় ধরে বসে থাকার সুযোগ নেই। রান তাড়া করতে হয়, ম্যাচ জিততে হয়, প্রতিপক্ষের চাপে জবাব দিতে হয়।
বিপিএলে খেলে এসেছেন খুশদিল শাহ। সেখানে রান করেছেন, ছক্কা হাঁকিয়েছেন, জেতার অভ্যাসটা নিয়ে এসেছেন। করাচির মাটিতেও সেই স্পার্কটা দেখা গেল, কিন্তু এই পাকিস্তান দল তো আসলে চিরাচরিত ভাঙাচোরা এক কাঠামো, যেখানে কেউ লড়তে জানে না, কেউ ঝুঁকি নিতে চায় না।
খেলার মধ্যে স্লো মোশন জোনে আটকে গেলেন বাবর আজম। নিজের স্ট্রাইক রেট ৭০ বা ৭১-এর ঘরে রেখে সো-কল্ড সিনিয়র ক্রিকেটারের দায়িত্ব সেরেছেন। ওদিকে সালমান আলী আঘা লড়লেন, রানের সাথে পাল্লা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। বাকিরা এলেন, গেলেন, পাকিস্তানের ব্যাটিং মানেই যেন এক বিভীষিকা। ৩২১ রান কিভাবে তাড়া করতে হয়, সেটা জানে না পাকিস্তান – এটাই শেষ কথা।
এমন পরাজয় পাকিস্তানের জন্য নতুন কিছু নয়। বিশ্বকাপে যেমন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও একই গল্প। একটি দল যখন আগ্রাসন ভুলে যায়, যখন ম্যাচ জেতার পরিকল্পনার বদলে কেবল খেলার জন্য খেলে, তখন এমন পরিণতিই তাদের জন্য অপেক্ষা করে।
খুশদিল শাহ একাই চেয়েছিলেন ম্যাচ জিততে, কিন্তু ম্যাচ জেতানো সম্ভব হয়নি। কারণ, তিনি একা ছিলেন, আর ক্রিকেট একার খেলা নয়! তাই তো করাচিতে মঞ্চস্থ হল পাকিস্তানের আরেকটা পতনের গল্পের।