মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবালের ব্যাটিং দৃঢ়তায় প্রথম ইনিংসে লড়াই করার পুঁজি পেয়েছিল বাংলাদেশ। সেই পুঁজি নিয়েই লড়াই করে দলের জয় নিশ্চিত করেন বোলাররা। যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এই স্পিনারের ঘূর্ণিতেই সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই নিয়ে ১০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ পর আবারো জয়ের মুখ দেখলো বাংলাদেশ দল।
তবে বাংলাদেশের হাত থেকে জয়টা প্রায় ছিনিয়েই নিচ্ছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তাকে থামানোর কোন পথই যেন খুঁজে পাচ্ছিলো না বাংলাদেশের বোলাররা। এর ভিতর এক বার জীবনও পেয়েছিলেন এই অলরাউন্ডার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।
তবে ২৫৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন শ্রীলঙ্কার দুই ওপেনার দানুশকা গুনাথিলাকা ও কুশাল পেরেরা। কিন্তু এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। নতুন বলে দারুণ বোলিং করা এই স্পিনার ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফিরিয়ে দেন গুনাথিলাকাকে।
১৯ বলে ২১ রান করে গুনাথিলাকা ফিরে যাওয়ার পরেই মুস্তাফিজুর রহমানের প্রথম শিকারে পরিণত হয়ে ফিরে যান পাথুম নিসাঙ্কা। ৮ রান করা নিসাঙ্কা এই পেসারের লেংথ বল পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে আফিফ হোসেনের কাছে সহজ ক্যাচ দেন।
৪১ রানে দুই উইকেটে হারানো শ্রীলঙ্কা তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুশাল পেরেরা ও কুশাল মেন্ডিসের ব্যাটে ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি সাকিব আল হাসান। এই স্পিনারের ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে আফিফের কাছে ক্যাচ দেন মেন্ডিস। ২৪ রান করে মেন্ডিস ফিরে গেলে ভাঙে ৪১ রানের জুটি।
মেন্ডিসকে আউট করেই প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে এক হাজার উইকেট শিকারের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই অলরাউন্ডার। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৬২ উইকেট শিকার করা সাকিব টি-টোয়েন্টিতে শিকার করেছেন ৩১০ উইকেট। আর লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে মেন্ডিস তার ৩২৮তম শিকার।
এরপর আর ঘুড়ে দাঁড়াতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। মিরাজের টানা তিন আঘাতে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় সফরকারী। একে একে বোল্ড আউট হয়ে ফিরে যান কুশাল পেরেরা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও আশেন বান্দারা। পেরেরা করেন ৩০ রান এবং সিলভা করেন ৯ রান আর বান্দারার ব্যাট থেকে আসে ৩ রান।
১০২ রানে ৬ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কা সপ্তম উইকেট জুটিতে লড়াইয়ে ফিরে আসে। লাকসান সান্দাকানকে নিয়ে ৪৭ রানের জুটি গড়েন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। সান্দাকানকে ১৪ রানে ফিরিয়ে দিয়ে এই জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। সান্দাকান ফিরে গেলেও লড়াই চালিয়ে যান হাসারাঙ্গা।
চতুর্থ উইকেটে উদানাকে নিয়ে যোগ করেন ৬২ রান। ম্যাচ যখন জমিয়ে দিয়েছিলেন এই জুটি তখনই হাসারাঙ্গাকে ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন সাইফউদ্দিন। ৬০ বলে ৭৪ রান করেন হাসারাঙ্গা। শেষ পর্যন্ত ৪৮.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৪ রান সংগ্রহ করে শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ। এই স্পিনার ১০ ওভারে ৩০ রান দিয়ে চারটি উইকেট শিকার করেন। এছাড়া মুস্তাফিজুর রহমান তিনটি, সাইফউদ্দিন দুটি ও সাকিব আল হাসান একটি উইকেট শিকার করেন।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান লিটন দাস। দুশমান্তা চামিরার অফ স্টাম্পের বাইরের ফুল লেংথ বল স্লটে পেলেও একটু আউট সুইং করায় প্রথম স্লিপে ক্যাচ দেন লিটন। আগের ৬ ইনিংসেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন এই ওপেনার।
পাঁচ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর তামিমের সাথে জুটি বাঁধেন সাকিব আল হাসান। তবে তামিম আত্মবিশ্বাসী থাকলেও উইকেটে শুরু থেকেই ধুঁকেছেন সাকিব। সাবধানী শুরু করা এই অলরাউন্ডার শেষ পর্যন্ত ছন্দে ফিরতে না পেরে গুনাথিলাকার ফ্লাইটেড বল বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দেন।
৩৩ বলে ১৫ রান করে সাকিব ফিরে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের রান ছিল ১২.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৪৩। এরপর তামিম মুশফিকের ৫৬ রানের জুটিতে ম্যাচে ফেরে বাংলাদেশ। এই জুটিতে বাড়ছিল রানের গতিও। কিন্তু তখনই ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার জোড়া আঘাতে আবার চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।
এই স্পিনারের ইয়র্কার লেংথের বল বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউ হয়ে ৭০ বলে ৫২ রান করে ফিরে যান তামিম। এর পরের বলেই প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন
মোহাম্মদ মিঠুন। রিভিউ নিয়েছিলেন দুজনই; তবে আম্পায়ারের সিদ্বান্ত পাল্টাতে পারেননি কেউই। দুটি রিভিউই হারায় বাংলাদেশ।
টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে দারুণ এক রেকর্ড গড়েছেন তামিম ইকবাল। আজ প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন এই ওপেনার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ৩৫৬ ম্যাচে ৪১৩ ইনিংসে তামিমের রান এখন ১৪০৫০।
৯৯ রানে চার উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়লেও মুশফিক মাহমুদউল্লাহর জুটিতে ঘুড়ে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেট জুটিতে এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বড় লক্ষ্যের ভিত পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। আস্থার সাথে ব্যাট করে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪০তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিম।
কিন্তু দ্রুত রান তুলতে গিয়ে ৮৭ বলে ৮৪ রান করে ফিরে যান এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। চারটি চারের সাথে একটি ছয় ছিল মুশফিকের ইনিংসে। ১০৯ রানের জুটি ভাঙার পর দ্রুতই ফিরে যান মাহমুদউল্লাহ। রিয়াদের ব্যাট থেকে আসে দুটি চার ও ১ টি ছয়ের সাহায্য ৭৬ বলে ৫৪ রান।
মাহমুদউল্লাহ ফিরে যাওয়ার পর শেষের দিকে আফিফ ও সাইফউদ্দিনের ১৭ বলে ২৭ রানের জুটিতে ২৫৭ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। আফিফ ২২ বলে ২৭ ও সাইফউদ্দিন ৯ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
শ্রীলঙ্কার বোলারদের ভিতর সবচেয়ে সফল ছিলেন অফ স্পিনার ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। এই স্পিনার শিকার করেছেন তিনটি উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন চামিরা, গুনাথিলাকা ও সান্দাকান।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২৫৭/৬ (ওভার: ৫০; তামিম- ৫২, লিটন- ০, সাকিব- ১৫, মুশফিকুর- ৮৪, মিঠুন- ০, মাহমুদউল্লাহ- ৫৪, আফিফ- ২৭* সাইফউদ্দিন- ১৩*) (চামিরা- ৮-০-৩৯-১, সিলভা- ১০-০-৪৫-৩, গুনাথিলাকা- ২-০-৫-১, সান্দাকান- ১০-০-৫৫-১)
শ্রীলঙ্কা: ২২৪/১০ (ওভার: ৪৮.১; গুনাথিলাকা- ২১, পেরেরা- ৩০, নিসাঙ্কা- ৮, মেন্ডিস- ২৪, সিলভা- ৯, বান্দারা- ৩, সান্দাকান- ১৪, হাসারাঙ্গা- ৭৪, উদানা- ২১, (মিরাজ- ১০-২-৩০-৪, মুস্তাফিজ- ৯-০-৩৪-৩, সাইফউদ্দিন- ১০-০-৪৯-২, সাকিব- ১০-০-৪৪-১)
ফলাফল: বাংলাদেশ ৩৩ রানে জয়ী।