রাজপুত্ররা রূপকথার কথা মনে করিয়ে দেয়। তাদের তলোয়ার, তাদের শৌর্য – সবই রক্তে নাচন তোলে। রাজপুত্ররা চমৎকার, অবিস্মরণীয়। ফুটবলের মাঠেও এমনই একজন রাজপুত্র ছিলেন। তাঁর নাম, রিকার্ডো কাকা।
ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ছিল তাঁর জীবন। আট বছর বয়সে সাও পাওলো ক্লাবে খেলতে শুরু করেন। পনেরো বছর বয়সে প্রথম পেশাদার চুক্তি সই করেন। ২০০১ সালে সাও পাওলো ক্লাবে যোগ দেন মূল দলে। কোপা ডি জুভেনিল জিতে সাও পাওলো ক্লাবকে সম্মানিত করেন।
২০০৩ সালে এসি মিলান তাঁকে নেয়। প্রথমেই জায়গা করে নেন প্রথম একাদশে। সারা বছর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স। সিরি ‘এ’ এবং উয়েফা সুপার কাপ জিতলেন। সেই বছর সিরি ‘এ’-এর সেরা বিদেশি ফুটবলার হন কাকা।
২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে, কাকা ছিলেন সবার চোখের মণি। ৩-০ থেকে হারলেন মিলান। কিন্তু কাকার অ্যাসিস্ট এবং গোল ছিল নজরকাড়া। ২০০৬-০৭ মৌসুমে কাকা হয়ে উঠলেন আরও তীক্ষ্ণ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আবার লিভারপুলকে হারিয়ে ট্রফি জেতেন। সবচেয়ে বেশি গোল, সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট, সবই তাঁর দখলে।
তবে কাকার ক্যারিয়ারের পথে ছিল কিছু বাধা। ২০০৮ সালের পর, কাকা’র পারফরম্যান্সে ধীরে ধীরে অস্থিরতা দেখা দেয়। বারবার ইনজুরির কারণে খেলার ধরনে ছন্দপতন ঘটে। তবে, তার উদ্যম থেমে থাকেনি। রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর ইনজুরির কারণে অনেক কিছুরই সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। তবে তিনি প্রিয় ছিলেন, খেলার প্রতিটা মুহূর্তে।
রিয়াল মাদ্রিদে ১২০ ম্যাচে ২৯ গোল এবং ৩৯ অ্যাসিস্ট। তবে, তাঁর নামের পাশে এই সংখ্যা যথেষ্ট ছিল না। ২০১৩ সালে ফিরলেন এসি মিলানে। অরল্যান্ড সিটিতে গিয়েও নিজের সেরা ফুটবল দেখান কাকা। ২০১৭ সালে বিদায় নেন তিনি।
ব্রাজিলের হয়ে কাকা প্রথম বিশ্বকাপে খেলেন ২০০২ সালে। কোস্টারিকার বিপক্ষে মাত্র ২৫ মিনিট। সেবার শেষবারের মত বিশ্বকাপ জিতে ব্রাজিল। ২০০৫ এবং ২০০৯ কনফেডারেশন কাপেও ছিলেন সেরা। ২০১০ বিশ্বকাপে বিতর্কিত লাল কার্ডের কারণে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল কাকাকে। ৯২ ম্যাচে ২৯ গোল করেছিলেন তিনি ব্রাজিলের হয়ে। কে বলবে, ব্রাজিল ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা আবিষ্কার তিনি!
কাকা ছিলেন পুরো একটা প্রজন্মের নায়ক। ইনজুরি তাকে থামাতে পারেনি, তবে তাকে আরও বড় কিছু হতেও দেয়নি। ক্যারিয়ার ছিল ক্ষণস্থায়ী। অনেক কিছু দেখানোর ছিল। কিছুই দেখাতে পারেননি।
কাকা রাজপুত্র হয়েই থাকলেন, কিন্তু কখনও যুবরাজ হতে পারলেন না। তাঁর বুক ভরা যন্ত্রনা, রাজা হতে না পারার যন্ত্রনা!