বার্সেলোনার আক্রমণের ডান পাশ ধরে, বা পায়ের মোহনীয় সুর তুলে ছুটে যাচ্ছে যেন কোন দেবশিশু। যেন কোনো কিশোর শিল্পী, যার ব্রাশের মাথায় রঙ নয়, মুগ্ধতা। ডিফেন্ডাররা শুধু ছায়ার মতো পেছনে ছুটে চলে—কেউ যেন ছুঁয়ে দেখতে চায়, সত্যি তো! এমন জাদু এখনো হয়?
রিয়াল মাদ্রিদের আক্রমণের বামপাশে কিংবা ডি-বক্সের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে, আভিজাত্যের সবটুকু গৌরব সাদায় জড়িয়ে, প্রতিপক্ষের জালে একের পর এক নিখুঁত শটে ঝুলিয়ে দেয় সেই চিরচেনা দৃশ্য—গোল, উদযাপন, রেকর্ড! মনে হয়, কোনো যন্ত্র নয়, বরং নিঃশ্বাসে গোল করে এমন এক ‘গোল-মেশিন’।
লিওনেল মেসি আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো—ফুটবলের মহাকাব্যের দুই প্রধান চরিত্র। একদিকের কবিতা, অন্যপাশে যুদ্ধ। একটি প্রেম, আরেকটি প্রতিজ্ঞা। একটা প্রজন্ম চোখের পলকে বড় হয়ে গেছে এই দ্বৈরথ দেখে—মেসি না রোনালদো? বার্সা না রিয়াল? মায়া না মর্যাদা?
নেইমার, বেল, সুয়ারেজ, বেনজেমা, হ্যাজার্ড—এই সব নামগুলো আকাশে এসেছিল, ঝলক দেখিয়েছিল, আবার হারিয়েও গিয়েছিল বাতাসে। অনেকেই ভেবেছিল, সময় বোধহয় থেমে গেছে। নতুন মেসি? নতুন রোনালদো? উত্তরগুলো যেন কেবল প্রশ্নই হয়ে থাকল।
কিন্তু ফুটবল নিজেই হয়তো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ভালোবাসে। তাই তো সেই ডান পাশ ধরেই আবার ছুটে আসে এক লা মাসিয়া পাখি—লামিন ইয়ামাল। ১৬ বছর বয়সেই সে খেলে, খেলায়, গোল করে, গোল করায়। তার বাঁ পা যেন ফের একবার ফুটবলের গান গায়। গার্দিওলা থেকে ওয়েঙ্গার—সবাই স্বীকার করে, মেসির পর এমন প্রতিভা আর দেখা যায়নি।
অন্যদিকে, ফ্রান্সের এক প্রান্তে জন্ম নেওয়া ছেলেটি, যার নাম কিলিয়ান এমবাপ্পে—তার জন্মই যেন লেখা হয়েছিল ক্রিশ্চিয়ানোর উত্তরাধিকার বহনের জন্য। হঠাৎ দৌড়ে উঠে গিয়ে গোল করে সে তাক লাগিয়ে দেয়, আবার পরের ম্যাচে নতুন উদ্দীপনায় নামে। ১৮ বছর বয়সেই বিশ্বজয়, আর রিয়ালের জার্সিতে প্রথম মৌসুমেই রেকর্ড বই উল্টে দেওয়া—একটুও কি মনে পড়ে না, এক দশক আগের সেই যুবরাজের কথা?
ফুটবল আবার হয়তো তার নতুন মহাকাব্য শুরু করেছে। কোটি কণ্ঠের প্রশ্ন—এবারের লড়াইটা কি তবে ইয়ামাল বনাম এমবাপ্পে?
নাকি, ফুটবল আমাদের চোখের সামনে ধীরে ধীরে লিখে ফেলছে পরবর্তী মেসি-রোনালদোর ইতিহাস?