মিষ্টি রোমান্টিক মৃদু হাওয়া

মজা করে বলা হত – একজন নয়, ‘দুজন’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের। পুরো নাম পিটার জেফরি লেরয় ডুজন।

যা করার, মাত্র দশ বছরেই করে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। যাকে ব্যাটসম্যান উইকেটরক্ষকও বলা যেত স্বাচ্ছন্দে। তিনি ১৯৮১ সালের ২৬ আগস্ট থেকে ১৯৯১ সালের ৮ আগস্টের মধ্যে খেলে ফেলেছিলেন ৮১ টি টেস্ট। আর ১৯৮১ সালের পাঁচ ডিসেম্বর থেকে থেকে ১৯৯১ সালের ২২ অক্টোবরের মধ্যে তিনি খেলে দিয়েছিলেন ১৬৯ টি একদিনের ম্যাচ। ১৯৮৯ সালের উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

মানে গড়ে বছরে আটটি টেস্ট আর ১৭ টি একদিনের ম্যাচ। সমান ধারাবাহিকতায় একটা নির্দিষ্ট মানে খেলেছেন তিনি টানা দশটা বছর, নতুবা এটা অসম্ভব ছিল। ৮১ টেস্টে মাত্র ১১৫ ইনিংসে (তখন অধিকাংশ টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটই করতে হত না তাকে, এতটাই অবিসংবাদিত আধিপত্য ছিল তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের) পাঁচটি শতক ও ১৬ টি অর্ধশতকসহ ৩৩২২ রান ছিল তার ব্যাটে। সর্বোচ্চ রান ছিল ১৩৯, যেটা করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে পার্থের মত দ্রুততম পিচে। আর ১৬৯ একদিনের ম্যাচে ১২০ ইনিংসে তার রান ছিল ১৯৪৫ (সর্বোচ্চ রান ছিল ৮২)।

উইকেটের পেছনে ৮১ টেস্টে তাঁর শিকার ছিল ২৭০, যার মধ্যে ক্যাচ ছিল ২৬৫ আর স্ট্যাম্পিং ছিল ৫। তার কেরিয়ারের একদম শুরুর দিকে, যখন ডেভিড মারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেটররক্ষার দায়িত্বে ছিলেন, তখন স্লিপে ফিল্ড করেও দুটি ক্যাচ ছিল আজকের আলোচ্য ব্যাটসম্যানের, যা তাঁর মোট টেস্ট শিকারসংখ্যাকে নিয়ে যায় ২৭২-তে।

আর ১৬৯  একদিনের ম্যাচে তার শিকার ছিল ২০৪, যার মধ্যে ক্যাচ ছিল ১৮৩ আর স্ট্যাম্পিং ছিল ২১।তার কেরিয়ারের সময়কালে তার টিমে স্পিনাররা খুব কম সুযোগ পেতেন নতুবা তার স্ট্যাম্পিং শিকারসংখ্যা আরো অনেক বেড়ে যেত, নি:সন্দেহে। প্রবাদপ্রতিম ফাস্ট বোলারদের বদান্যতায় তখন স্পিনার হওয়াটা ল্যান্স গিবসের অতীতসমৃদ্ধ ওয়েস্ট ইন্ডিজেও খুব খারাপ ‘ক্যারিয়ার অপশন’ছিল। আর এই কারণেই নিন্দুকেরা আজও বলেন যে স্পিনারদের বিরুদ্ধে তিনি পরীক্ষিত হননি সেভাবে।

যোগ্যতার তুলনায় অনেকটাই আন্ডাররেটেড ছিলেন এই উইকেটরক্ষক। যা প্রমাণ করে তার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যরিয়ার। ২০০ টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ২১ টি শতকসহ ৯৭৬৩ রান ছিল তার আর উইকেটকিপিংয়ে শিকার ছিল ৪৬৯।

একটা দীর্ঘ সময় ধরে বিশ্বত্রাস ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাফল্যের পিছনে তাঁর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। যদিও তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা নিরুচ্চারেই থাকত, তখনকার অতি বিখ্যাত ব্যাটসম্যান ও বোলারদের তুলনায়। গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, রিচি রিচার্ডসন, ম্যালকম মার্শাল, জোয়েল গার্নার, অ্যান্ডি রবার্টস, মাইকেল হোল্ডিং, কোর্টনি ওয়ালশ কিংবা প্যাটারসনদের ছায়াতেই চিরদিন ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন তিনি।

ইয়ান হিলিকে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের চেয়ে বড় উইকেটরক্ষক মানতেন জেফ্রি দুজন, শুধু শেন ওয়ার্নকে অনেক বেশি ভালভাবে সামলাবার জন্য। অবসরের পরে জাতীয় দলের সহকারী কোচ হয়েছিলেন তিনি। ধারাভাষ্যকার হিসেবেও নিজের একটা আলাদা মান ধরে রেখেছিলেন তিনি।

ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ‘আনসাং হিরো’, ছিলেন বিশ্ব ক্রিকেটের উইকেটরক্ষণের মিষ্টি রোমান্টিক মৃদু হাওয়া। ভাল থাকবেন, জেফ্রি দুজন – ঠিক আপনার ক্যারিয়ারের মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link