ইন্টার মিয়ামির জন্য মঞ্চটা নতুন, লিওনেল মেসির জন্য নয়। প্রায় এক দশক পর আবার ফিরেছেন সেই চেনা আবহে। মঞ্চ বদলেছে, জার্সি বদলেছে, কিন্তু মঞ্চের আলো আজও তাঁকেই খুঁজে ফেরে।
ক্যারিয়ারের শেষ অধ্যায়ে, ক্লাব বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতায় এক নতুন দল নিয়ে এসেছেন তিনি, ইন্টার মিয়ামি। তবে আশঙ্কাটা ছিলই, এই মঞ্চে অংশ নেওয়া দলগুলোর তুলনায় বড্ড অগোছালো, অনভিজ্ঞ ইন্টার মিয়ামি। আর মেসি তো কখনোই কোন টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েননি, এবার বুঝি সেই ধরলো চিড় সেই রেকর্ডে!
প্রথম ম্যাচে আল আহলির বিপক্ষে এক পয়েন্টে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। দ্বিতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ ইউরোপের পুরনো দৈত্য, পোর্তো। প্রথমার্ধেই এগিয়ে যায় ১-০ গোলে।
এদিকে মেসির বানিয়ে দেওয়া নিখুঁত পাসে, বয়সের ভারে নুয়ে পড়া লুইস সুয়ারেজ মিস করেন পরপর দুটো সহজ সুযোগ। ফুটবলের ঈশ্বর যেন তাকিয়ে ছিলেন নিরাসক্ত দৃষ্টিতে। তবে কি এবার মেসির দলই প্রথমে বিদায় নিবে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে?
৪৭ মিনিটে সেগোভিয়ার এক দুর্দান্ত ভলিতে ফেরে সমতা। আশার প্রদীপটা টিমটিম করতে থাকে, তবু জ্বলে। কারণ, লিও মেসি থাকলে সব সম্ভব। সুয়ারেজ সুযোগ নষ্ট করুন, গোটা দল ছন্নছাড়া খেলুক, মেসির দরকার কেবল একটামাত্র ‘ম্যাজিক মোমেন্ট’।
সেই মূহূর্তটা এলো ৫৪ মিনিটে। ডি-বক্সের ঠিক বাইরে, সেই চেনা জায়গায়, ‘মেসি জোনে’ ফাউল করে বসলো পোর্তো। রেফারির বাঁশি বাজতেই যেন থমকে গেল স্টেডিয়াম। মেসি দাঁড়ালেন বলের সামনে, গ্যালারিতে নিস্তব্ধতা, ক্যামেরা তাক করে একদৃষ্টে তাঁর বাম পা।
এরপর? এরপর রূপকথা। বাম পায়ের এক নিখুঁত মোচড়, বল উড়ল গোলপোস্টের ডানদিক লক্ষ্য করে। গোলরক্ষক ডানদিকে সরেই দাঁড়িয়েছিলেন, ঝাঁপিয়েও পড়েছিলেন। কিন্তু কি যায় আসে? নিখুঁত জাদু হয়ে বল যে জড়াবে জালে।
মেসির ক্যারিয়ারের ৬৮তম ফ্রি কিক গোল। সমর্থকরা ভালোবেসে বলেন ‘লং রেঞ্জ পেনাল্টি’। ১২৫০ গোল ও অ্যাসিস্টের রেকর্ড, কাছাকাছিও নেই কেউ। মানুষের নয়, যেন রূপকথার কোনো চরিত্রের কীর্তি।
ফলাফল? ইন্টার মিয়ামি এখন দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে নকআউট পর্বের দোরগোড়ায়। যেখানে প্রথম দল হিসেবে বিদায়ের শঙ্কা ছিল, সেখানে এখন সম্ভাবনা, প্রথম দল হিসেবেই ‘রাউন্ড অব ১৬’ নিশ্চিত করার। মেসি থাকলে, সবই সম্ভব।