মারিও জাগালো, ফুটবলের গডফাদার

পঞ্চাশের মারাকানা ট্র্যাজেডি। উরুগুয়ের কাছে সেদিনের অবিশ্বাস্য হারে ব্রাজিল সমর্থকরা যখন বিধ্বস্ত, তখন মারাকানায় দর্শকদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পড়েছিল এক সেনা সদস্যের। হয়তো কাছ থেকে ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ভঙ্গের দৃশ্য দেখেছিলেন বলেই, সেদিন ভিন্ন এক গল্পে চোখ রেখেছিলেন সেই সেনা সদস্য। গল্পটা এক সেনাসদস্য থেকে ফুটবলার হওয়ার আইকনিক যাত্রার। সেদিনের সেই সেনা সদস্য হলেন মারিও জাগালো, যাকে বলা হয় ‘ফুটবলের গডফাদার।’

পঞ্চাশের মারাকানা ট্র্যাজেডি। উরুগুয়ের কাছে সেদিনের অবিশ্বাস্য হারে ব্রাজিল সমর্থকরা যখন বিধ্বস্ত, তখন মারাকানায় দর্শকদের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পড়েছিল এক সেনা সদস্যের। হয়তো কাছ থেকে ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ভঙ্গের দৃশ্য দেখেছিলেন বলেই, সেদিন ভিন্ন এক গল্পে চোখ রেখেছিলেন সেই সেনা সদস্য। গল্পটা এক সেনাসদস্য থেকে ফুটবলার হওয়ার আইকনিক যাত্রার। সেদিনের সেই সেনা সদস্য হলেন মারিও জাগালো, যাকে বলা হয় ‘ফুটবলের গডফাদার’।

সেনা সদস্য হিসেবেই কাটিয়ে দিতে পারতেন জীবন। কিন্তু সেদিনের পর সবকিছু বদলে গিয়েছিল জাগালোর। ব্রাজিল ফুটবলের পতন দেখা এ মানুষটির হাত ধরেই লেখা হয় ব্রাজিল ফুটবলের উত্থানের গল্প। 

১৯৫০ এর পর ১৯৫৮। ব্যবধানটা ৮ বছরের। সেদিনের সেই সেনা সদস্যই ব্রাজিলের হয়ে প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের নায়কদের একজন হয়ে  দেশে ফেরেন জাগালো। এ যেন উত্থান নয়, রীতিমত রূপকথা ছিল ব্রাজিলিয়ানদের জন্য।

১৯৫৮ বিশৃবকাপে সুইডেনকে ফাইনালে হারিয়েই কিন্তু সেই রূপকথার ইতি টানেনি জাগালো। জয়ের খোঁজেই যার চোখ, শিরোপা তাঁকে দূরে রাখে কীভাবে। বৈশ্বিক শিরোপা তাঁকে বারবার আপন করে টেনে নিয়েছে। 

১৯৫৮ সালের পর ১৯৬২ সালেও বিশ্বকাপ জেতেন জাগালো। টানা দুই বিশ্বকাপ জেতার পর ১৯৬৪ সালে ইতি টানেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। দুই বিশ্বকাপ জেতা জাগালোর গল্পটা শেষ হতে পারত সেখানেই। কিন্তু না। জাগালো এরপর ব্রাজিলের জেগে ওঠার রসদ হয়ে উঠেছিলেন বারবার।

খেলোয়াড়ি জীবনে লেফট উইঙ্গার জাগালো এরপর আবির্ভূত হন একজন কোচ হিসেবেও। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে খেলতে নেমে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল। সেই ব্যর্থতার পর ১৯৭০ সালের কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাগালোকে। অবশ্য সে সময় কোচ ছিলেন সালদানা। কিন্তু সামরিক শাসন, পেলের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার কারণে বিশ্বকাপের আগে জায়গা হারান সালদানা। আর তাতেই কপাল খুলে যায় মারিও জাগালোর। 

মাত্র ৩৮ বছর বয়সে ডাগআউটে বসেই পাল্টে দেন ব্রাজিলের ইতিহাস। ১৯৭০ সালে তাঁর অধীনে বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। প্রথম দুইবার খেলোয়াড় আর পরের বার কোচ হিসেবে, ব্রাজিলের প্রথম ৩ বিশ্বকাপে জয়ের গল্পেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন জাগালো। 

এরপর ১৯৭৪ সালেও ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ নিয়ে যান জাগালো। তবে এবার আর পেরে ওঠেননি। জাগালোর জয়যাত্রায় সেখানেই শেষ ভেবেছিল অনেকে। তবে ক্লাব ফুটবলে এবার দেখান নিজের মুনশিয়ানা। ফ্লামেঙ্গো ও ফ্লুমিনিন্সে কোচ হিসেবে একাধিক শিরোপা জেতেন তিনি। এরপর কুয়েতের ফুটবলে গিয়ে ১৯৭৬ সালে জিতেছেন গালফ কাপ। সে বছর উঠেছিলেন এশিয়ান কাপের ফাইনালেও।

ব্রাজিলের ফুটবলের আরেকটি ‘অপরাজেয়’ অধ্যায়েও রয়েছেন জাগালো। ১৯৯৪ যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে ব্রাজিল জাতীয় দলের টেকনিক্যাল পরিচালক হিসেবে ডাক পড়ে জাগালোর। কোচ কার্লোস আলবার্তো পেরেইরার সঙ্গে জুটি বেঁধে সেবার ব্রাজিলের চতুর্থ বিশ্বকাপ জয়ে দারুণ অবদান ছিল জাগালোর। ফাইনালে ইতালিকে টাইব্রেকারে হারিয়েছিল ব্রাজিল।

ব্রাজিল পাঁচ বিশ্বকাপের চারটিতেই রয়েছে জাগালোর ছোঁয়া। সেনা সদস্য থেকে পঞ্চাশের দশকে ফুটবলার বনে যাওয়া, এরপর বিশ্ব ফুটবলে ‘কিংবদন্তি’র আসনে আসীত— গল্পটা এক কিংবদন্তির, একজন মারিও জাগালোর। ব্রাজিল ফুটবল ইতিহাস নয়, গোটা বিশ্ব ফুটবলেই যে নামটা এখন অবিনশ্বর, চিরায়ত, চিরস্মরণীয়।  

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...