ফিয়ারলেস ফেয়ারওয়েল

স্যাবাইনা পার্কের ড্রেসিংরুম, সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছেন একজন, নেমে আসছেন আন্দ্রে রাসেল। জাতীয় দলের জার্সি শেষবার আবেগ জড়িয়ে হয়তো ধরে আছে তাকে। গ্যালারিতে আজ উচ্ছ্বাস নেই, সবকিছুই কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে আছে। গার্ড অব অনার, বেদনার করতালি—সবকিছুই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল গন্তব্য এবার শেষ, এবার না থামলেই নয়।

স্যাবাইনা পার্কের ড্রেসিংরুম, সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছেন একজন, নেমে আসছেন আন্দ্রে রাসেল। জাতীয় দলের জার্সি শেষবার আবেগ জড়িয়ে হয়তো ধরে আছে তাকে। গ্যালারিতে আজ উচ্ছ্বাস নেই, সবকিছুই কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে আছে। গার্ড অব অনার, বেদনার করতালি—সবকিছুই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল গন্তব্য এবার শেষ, এবার না থামলেই নয়।

১৪ বছরের কত শত স্মৃতি, হারের ক্ষত, জয়ের আনন্দ—আজ রাসেল সবকিছু বাক্সবন্দি করে তুলে রাখতে চাইলেন। হয়তো মনে পড়ছিল শুরুর দিনের কথা। প্রথমবার এই জার্সি পরেই স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছিলেন, আজ তাকে তুলে রাখতে হবে!

রাসেল ব্যাট হাতে নামলেন, দলের বিপর্যয় যে এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কতবারই তিনি দেখেছেন দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া এই দলটাকে, অনেকবার টেনে তুলেছেন, কখনোবা হার মেনে নিয়ে চোয়াল শক্ত করে সাজঘরে ফিরেছেন।

এবার সব হিসাব চুকিয়ে দেওয়ার পালা, দলের সাথে কিংবা কিংস্টনের এই ২২ গজে। ব্যাটে ঝড় তুললেন, ফেরারওয়েল ঝড়। ১৫ বলে ৩৫ রানের রাসেলসুলভ ইনিংস। চারখানা ছয় আছড়ে পড়ল গ্যালারিতে, মাঠটা যেন প্রাণ ফিরে পেল।

আউট হয়ে যখন ফিরে যাচ্ছিলেন, ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন রাসেল। না, এটা ফিফটি কিংবা সেঞ্চুরির জন্য না। গ্যালারি থেকে ভেসে আসা ভালোবাসার প্রতিউত্তর কেবল।

দল হেরে গিয়েছে, রাসেলের ইনিংসটা যেন অভিমানে ছিঁড়ে ফেলা প্রেমিকার গোলাপ তোড়া। বিদায়বেলায় কণ্ঠটা ভারি হয়ে এলো। অবলীলায় বলে দিলেন—এটাই থেমে যাওয়ার সময়। বয়সের পৃষ্ঠায় ভেসে উঠলো সংখ্যাটা—৩৭ পেরিয়েছে।

ক্যারিয়ার জুড়ে একটা মাত্র টেস্ট খেলেছেন, ওয়ানডেতে সংখ্যাটা ৫৬। জাতীয় দলের জার্সিতে নামের পাশে ৮৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখলে খুব বেশি কিছু পাওয়ার নেই।

রানের পাহাড় তিনি গড়েননি, ভুরি ভুরি ফিফটি কিংবা সেঞ্চুরিও নেই। তবে তাঁর পরিচয় তো পাওয়ার হাউস হিসেবে—তাবড় তাবড় বোলারদের বলকে ছাতুপেটা করার জন্যই তো তিনি বিখ্যাত। এসব পরিসংখ্যান তো তার কাছে স্রেফ কাগজ-কলমের অপচয়।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের ফেরিওয়ালা তিনি। প্রশ্ন উঠতেই পারে—জাতীয় দলের জন্য করেছেনটা কী? তাকে কেন মনে রাখবে ক্যারিবীয়রা? তিনি লড়েছেন, এক হাতে অবিশ্বাস্য সব ম্যাচ বের করে এনেছেন।

তাঁকে মনে রাখতে হবে ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিতে ২০ বলে ৪৩ রান করে ভারতকে চুপ করিয়ে দেওয়া ইনিংসের জন্য। তাঁর নাম উঠে আসবে দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পাতায়। তাঁকে মনে রাখতে হবে ফিয়ারলেস ক্রিকেট কিংবা ছোট ছোট কিছু ধ্বংসাত্মক ইনিংসের জন্য।

লেখক পরিচিতি

প্রত্যয় হক কাব্য

স্বপ্ন লেখার কি-বোর্ড

Share via
Copy link