ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে প্রথম দিনের শেষ বিকেলে যেন হঠাৎ জমে উঠলো এক নতুন নাটক, যার কেন্দ্রবিন্দু ঋষাভ পান্ত। ব্যাট হাতে তখন দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি—তাঁর সেই চেনা আগ্রাসী ছন্দ, রানের চাকা সচল, ম্যাচের মোমেন্টাম ভারতের দিকে ঘুরতে শুরু করেছে—ঠিক তখনই চুপিসারে নামলো অন্ধকার।
ক্রিস ওকসের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ডান পায়ের ওপর সজোরে লাগে। শট তো হয়নি, উল্টে ঘটে গেল মারাত্মক এক দুর্ঘটনা। ব্যথায় কুঁকড়ে যেতে দেখা যায় পান্তকে, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই ফুলে ওঠে পায়ের সেই অংশ। সেখান থেকেই শুরু হয় উদ্বেগ—ভারতীয় ড্রেসিংরুমে, টিম ম্যানেজমেন্টে, এমনকি ভারতজুড়ে লাখো ভক্তের হৃদপিণ্ডে।
পান্তের অবস্থা তখন আশঙ্কাজনক। তড়িঘড়ি মাঠে ছুটে আসে মেডিকেল টিম, এরপর অ্যাম্বুলেন্স কার্টে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ড্রেসিংরুমে। তখন সারা মাঠ নিস্তব্ধ, কেবল উদ্বেগের গুঞ্জন।
স্ক্যান রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত কিছুই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে যদি চোট গুরুতর হয়, তাহলে এই টেস্ট তো বটেই, পুরো সিরিজের গতিপথ পালটে যেতে পারে। কারণ পান্ত শুধু একজন উইকেটরক্ষক বা মিডল অর্ডার ব্যাটার নন—তিনি ভারতের টেস্ট ব্যাটিংয়ের ‘এক্স-ফ্যাক্টর’। যিনি চাপের মাঝে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে পারেন একাই।
রিকি পন্টিং তো বলেই দিলেন, ‘পান্ত পা মাটিতে রাখতে পারছেন না, এর অর্থ হল ওর পা শরীরে ভর নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এরকম মেটাটারসাল ইনজুরি আমারও হয়েছে। তবে, সেগুলো ছোট। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এটা দ্রুত সাড়া খুব কঠিন। ঋষাভকে দেখে এই মুহূর্তে ইতিবাচক কোনো আভাস মিলছে না।’
এই মুহূর্তে ম্যাচের গতি ঠিক কোন দিকে যাচ্ছে, তা নির্ধারণ করতে পারে একটি স্ক্যান রিপোর্ট। ভারতের ইনিংস কি ২৬৪ থেকে তিনশো পেরোবে, না কি সকালে নতুন বলের ধাক্কায় ধসে পড়বে মিডল ও লোয়ার অর্ডার—সব প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে পান্তের স্ক্যান রিপোর্টে।
ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টের প্রথম দিন শেষ হলো এক প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে। আর সেই প্রশ্নের নাম—ঋষাভ পান্ত। ভারত এখন অপেক্ষায়, ব্যাট হাতে আবার হাসতে হাসতে ফিরবেন কি সেই ক্রেজি জিনিয়াস? নাকি তাঁর চুপচাপ বিদায়েই শেষ হয়ে যাবে ভারতের সম্ভাবনার গল্প?