মোহাম্মদ সিরাজ গাস টু অ্যাটকিনসন, বোল্ড! ইংল্যান্ডের কফিনে শেষ পেড়েক। সিরিজে এক হাজারেরও বেশি ডেলিভারি পেরিয়ে যাওয়ার পরও মোহাম্মদ সিরাজ যেন সদ্য হাঁটতে শেখা শিশুর মতই ফুরফুরে, আবার পেশাদার যোদ্ধার মতো অটল! হাতে যেন নিশানাবিদ্ধ তীর, আর তাঁর নিশানায় শুধু অ্যাটকিনসনের স্টাম্প!
স্ট্যাম্প ভাসল বাতাসে, সিরাজ উড়লেন আকাশে। বাড়ে মিয়া বুঝিয়ে দিলেন এই বলটা ছিল না শুধুই একটা ডেলিভারি নয়। এ যেন সিরাজের ধৈর্য, ক্ষুধা আর লড়াকু মানসিকতার মূর্ত রূপ। বলটা ছুটে গেল, বাতাস চিরে—আর অ্যাটকিনসনের স্টাম্প ছিটকে গিয়ে যেন বলে দিল, সিরাজ জ্বলতে জানেন আগুন হয়ে। আগের দিনের ক্যাচ মিসের যন্ত্রনা তিনি শতগুণে ফিরিয়ে দিতে পারেন প্রতিপক্ষের বুকে।
আর সেই ফিরিয়ে দেওয়াতেই নির্ধারিত হয়ে গেল সিরিজের ভাগ্য। অধিনায়কত্বের অভিষেক সিরিজেই শুভমান গিলের নামে লেখা হয়ে গেল ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ড্র করতে পারার সৌভাগ্য। খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসে তাঁকে যেন সেই জয়টা নিজের হাতেই উপহার দিলেন বাড়ে।
লন্ডনের সকাল। ওভার কাস্ট কন্ডিশন। বল হাতে দুই দানব – বাড়ে মিয়াঁ আর ছোটে মিয়া। বাড়ে মিয়াঁ মানেই তো বড়, মোহাম্মদ সিরাজ জানেন এখানে কি করতে হবে। পুৃরো সিরিজ জুড়েই তিনি এই কাজ করে এসেছেন। নি:সন্দেহে এই সিরিজে ভারতের সেরা বোলার তিনি।
আর ছোটে মিয়া সুবহানাল্লাহ! তিনি প্রসিধ কৃষ্ণা। যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন মোহাম্মদ সিরাজকে। এই দুইয়ে মিলে ফলাফল, ম্যাচটা এমন একটা জায়গায় চলে গেল যেখানে দাঁড়িয়ে মঞ্চস্থ হল টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেরই সবচেয়ে রোমাঞ্চকর মুহূর্ত।
রুদ্ধশ্বাস এক লড়াই হল। সোয়েটারের মধ্যে হাত গুজে মাঠে নামলেন ক্রিস ওকস। কিন্তু, তাকে কোনো বল মোকাবেলাই করতে হল না। এর আগেই যা করার করে ফেললেন সিরাজ। সকালের আধা ঘণ্টায় ইংল্যান্ডের লেজকে যথেষ্ট ভোগালেন সিরাজ।
চারটা উইকেট গেল। ইংল্যান্ড করতে পারল ২৮ রান। সিরাজ তিনবার প্রতিপক্ষের বুকে আঘাত হানলেন, ছোটে মিয়াঁ আঘাত হানলেন একবার। দু’টি বোল্ড, একটা এলবিডব্লিউ আর একটা কট বিহাইন্ড। ব্যস, ইংল্যান্ডের আকাশে নেমে এল দূর্যোগের ঘনঘটা।
এখন থেকে ৪০ বছর পরও এই সিরিজের কথা মনে পড়বে। মনে পড়বে, শেষ দিনে ক্রিকেট ইতিহাসেরই সম্ভবত সেরা স্পেলটা করেছিলের মোহাম্মদ সিরাজ। মনে পড়বে, একটা পটপরিবর্তনের পর রোহিত শর্মা কিংবা বিরাট কোহলিকে ছাড়াই কিভাবে ইংরেজ সাম্রাজ্য কাঁপিয়ে দিয়েছিল তরুণ ভারতীয় দল।