এক বলে দরকার এক রান।
মালয়েশিয়ার কিলাত ক্লাব মাঠ অপেক্ষায়। দেশের মাটিতে রেডিওতে অপেক্ষায় কোটি ভক্ত-সমর্থক। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বাঁধ আর মাত্র এক রান।
স্ট্রাইকে হাসিবুল হোসেন শান্ত। শেষ বলটা তাঁর ব্যাটে লাগলো কি লাগলো না – বোঝার উপায় নেই। তিনি দৌঁড় শুরু করলেন। সেই দৌড় রান শেষ করার পরও কোথায় গিয়ে থামলো সেই খবর কেউ নিল না।
আসলে, সেই দৌঁড়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় হওয়ার দৌড়ও।
আচ্ছা, সেদিন ওই শেষ ডেলিভারি বা শেষ ওভারটাতে কেনিয়ার বোলারটার নাম মনে আছে? না, মনে না থাকাটা দোষের কিছু নয়। কেনিয়ার ক্রিকেট সুদিনে থাকতে থাকতে এমন ভয়াবহ দুর্দিনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে – যার কারণে তাঁদের কথা আর কেউই আজকাল মনে রাখে না।
যাই হোক, সেই বোলারটি হলেন মার্টিন সুজি। কেনিয়ার ইতিহাসের সেরা পেসারদের একজন। তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছেন, তিনটি আইসিসি ট্রফি খেলেন। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় সময় ২০০৩ সালের বিশ্বকাপ অবশ্যই।
সেই বিশ্বকাপের সুপার সিক্সে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি মাত্র ১৯ রান দিয়ে নেন তিনটি উইকেট। প্রথমবারের মত তাতেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের টিকেট পায় কেনিয়া। তবে, এরপরই তো লম্বা সময়ের হন্য নির্বাসনে চলে যায় কেনিয়ার ক্রিকেট। এর আগে বিশ্বকাপের ২০ টি ম্যাচ খেলে নেন ১৪ উইকেট।
২০০৬ সালে মার্টিন সুজি ফিরেছিলেন। তবে, মারাত্মক এক হাঁটুর ইনজুরি তাঁর ক্যারিয়ার শেষ করে দেয় চিরতরে! বাংলাদেশের মাটিতে কেনিয়ার সফরটাই তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। শেষ ওয়ানডে খেলেন ফতুল্লা স্টেডিয়ামে। ক্যারিয়ার শেষ হয় ৬৪ ম্যাচে ৪৩ উইকেট নিয়ে।
সুজিরা তিনি ভাই খেলতেন ক্রিকেট। বাকি দুই ভাই হলেন টনি সুজি ও ম্যাকডোনাল্ড। টনি ও মার্টিন – দু’জন এক সাথে ১৯৯৯ ও ২০০৩ বিশ্বকাপ খেলেছেন। তবে, ম্যাকডোনাল্ড খুব বেশিদিন এগোতে পারেননি।
এক দশকেরও বেশি সময় সুজি কেনিয়ার বোলিংয়ের মেরুদণ্ড ছিলেন। তাঁর বোলিংয়ের মধ্যে ক্যারিবিয়ান এক সৌন্দর্য্য ছিল। ১৯৯০ সালে অভিষেকের পর ১৯৯৬, ১৯৯৯ ও ২০০৩ – তিনটি বিশ্বকাপেই খেলেছেন। ২০০৭ বিশ্বকাপেও দিব্যি খেলতে পারতেন। কিন্তু, শেষ মুহূর্তে তিনি বাদ পড়েন দল থেকে।
তবে, জাতীয় দলে তিনি ফিরেছিলেন। না, খেলোয়াড় হিসেবে আর নয়। কোচ হিসেবে। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর তিনি কেনিয়ার সহকারী কোচের দায়িত্ব পান। ২০১১ সালে তিনি উগান্ডা দলের প্রধান কোচ হন। ২০১৩ সাল অবধি সেই দায়িত্বে ছিলেন।
সেখানে তাঁর সহকারী ছিলেন সাবেক সতীর্থ স্টিভ টিকোলো। ২০১৮ সালে তিনি রুয়ান্ডা জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পান। তখন স্বল্প মেয়াদে কাজ করার পর আবার ২০১৯ সালে সেখানকার টেকনিক্যাল ডিরেক্টর হিসেবে যোগ দেন মার্টিন সুজি।
ওয়ানডে ক্রিকেট বাংলাদেশের বিপক্ষে সুজি নিয়েছিলেন আট উইকেট। সেরা বোলিং ফিগারটাও বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ১৯৯৭ সালে নাইরোবির সেই ম্যাচে মাত্র ২৪ রান দিয়ে তিনি নেন চার উইকেট। বাংলাদেশ মাত্র ১০০ রানে অলআউট হয়। জবাবে ১৭ ওভারে মাত্র দুই উইকেট হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় কেনিয়া।
একটা সময় এতটাই ছিল দু’দলের পার্থক্য। সেই কেনিয়া আজ কোথায়, সুজিই বা কোথায়!