উদ্ভট-প্রশ্নবিদ্ধ-দুর্ভাগ্যজনক

১৯ ওভারে লক্ষ্য ১৩৬। রান তাড়া করা দল পুরো ওভার খেলে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে করল ১১৩! উদ্ভট ব্যাটিংয়ে অদ্ভুত এক টি-টোয়েন্টি দেখলাম বৃহস্পতিবার, মিরপুর শেরে বাংলায়।

আবাহনীর বিপক্ষে ওই লক্ষ্য ছিল ওল্ড ডিওএইচএস দলের। তারা মাত্র ৩ উইকেট হারালেও আবাহনীর রানের কাছাকাছি যেতে পারেনি। যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিনা, সেটা প্রশ্ন বটে।

উইকেট মন্থর ছিল, শট খেলা কঠিন ছিল। তাই বলে জয়ের চেষ্টা করা হবে না? শট খেলার চেষ্টায় বা দ্রুত রান তোলার তাড়নায় আউট হয়ে গেলেও না হয় বোঝা যেত। কিন্তু ব্যাপারটা ছিল, রানও হচ্ছে না, ব্যাটের মারও হচ্ছে না।

ম্যাচের একটি দল যখন আবাহনী, তখন প্রতিপক্ষের এমন ব্যাটিং নিয়ে বাড়তি কৌতূহল কাজ করা স্বাভাবিক। ওল্ডডিওএইচএসের দুই ওপেনার ৮ ওভারে রান করেছেন ৩৬! ঠিক পড়ছেন, আউট হননি, কিন্তু রান ৩৬।

ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন এমনিতে সহজাত আগ্রাসী ব্যাটসম্যান। আজকে তার রান ২৭ বলে ২০। আরেক ওপেনার রাকিন আহমেদ এমনিতে খুব মারকুটে নন, ধীরস্থির ব্যাটসম্যান। তার পরও, প্রায় ১৫ ওভার উইকেটে কাটিয়ে ৪৪ বলে ৪৩ রানের ইনিংস যথেষ্টই কৌতূহল জাগানিয়া।

মাহমুদুল হাসান জয় তিনে নেমে ২০ বলে ১৫। অধিনায়ক মোহাইমিনুল খান ১১ বলে ১০। শেষ দিকে যখন দ্রুত রান প্রয়োজন, এই সংখ্যাগুলি তখন প্রশ্নের জন্ম দেয়।

ক্রিকেট খেলার ধরনটাই এমন, যে কোনো কিছুকে ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা দিয়ে জাস্টিফাই করা যায়। যে কোনো কিছুকেই। এই ম্যাচের স্কোরকার্ড যারা দেখবেন, চাইলে এই প্রশ্ন জাগানিয়া সংখ্যাগুলির ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু সংখ্যার বাইরে থাকে ধরণ, অ্যাটিটিউড।

রান হয়নি, এটার চেয়ে বড় ব্যাপার, রান করার চেষ্টা দেখা যায়নি খুব একটা। রান-বলের টানাপোড়েন যখন বাড়ছে, ওল্ড ডিওইএচএসের ব্যাটিংয়ে তাড়না খুব একটা দেখা যায়নি।

ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে এখন দলগুলি প্রতিদ্বন্দ্বী যতটা, তার চেয়ে বেশি যেন প্রতিবেশী। প্রায় সবাই ভাই-ভাই। বিসিবি পরিচালক, প্রভাবশালী বিসিবি পরিচালকদের দল বা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দল এখন এত এত, হিসাব রাখাই কঠিন। আবাহনী ও ওল্ড ডিওএইচএসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথাও একরকম ওপেন সিক্রেট।

এটি আবার বিসিবি নির্বাচনের বছর। ঢাকা লিগে দলগুলির অবস্থানের ওপর বিসিবি নির্বাচনের ভোট নির্ভর করে। ম্যাচটি ঘিরে প্রশ্ন তাই কেবল বাড়তেই থাকে।

ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবে মাহমুদুল হাসান জয়, রকিবুল হাসান, আনিসুল ইমনের মতো তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটাররা খেলছেন। তাদেরকে যদি দেশের ক্রিকেটের কলুষিত রাজনীতিতে জড়ানো হয়, ইচ্ছে করে ধীরে খেলতে বলা হয়, তাহলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও দু:খজনক।

বলছি না, তাদেরকে সেটি বলা হয়েছে। বলছি না, ওল্ড ডিওএইচএস ইচ্ছে করেই ম্যাচ ছেড়েছে। প্রমাণ ছাড়া সেসব বলার উপায় নেই। আগেই বলেছি, ক্রিকেট খেলায় সবকিছুর ক্রিকেটীয় ব্যাখ্যা হয়। কিন্তু ম্যাচটি যারা দেখেছি আজ, আমাদের দৃষ্টিকটু লেগেছে। আশা করি, এতটুকুই যথেষ্ট। আমার কাজের জায়গায় ম্যাচ রিপোর্টেও প্রশ্নগুলিই তুলেছি।

ওল্ড ডিওইএচএসের এমন ব্যাটিংয়ের কারণ ক্রিকেটীয় হোক বা অক্রিকেটীয়, ম্যাচটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের, তথা দেশের ক্রিকেটের খুব বাজে বিজ্ঞাপন হয়ে থাকবে।

– ফেসবুক থেকে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link