ভারতের স্পিন বোলিং আক্রমণের মূল ভরসা ছিলেন তিনি। ভারতের ক্রিকেটে তাঁর মানের স্পিনারও বোধ হয় খুব বেশি আসেনি। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাতশো এর বেশি উইকেট। ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ও করেছেন। খেলা যেখানেই হোক হরভজন সিং কে ঘিরেই সাজানো হবে ভারতের বোলিং আক্রমণ। তবে কলকাতা সব সময়ই দুহাত ভরে দিয়েছে বর্তমানে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলা এই স্পিনারকে।
বয়স প্রায় ৪০ এর কোটায়। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন সেটাও ১০ বছর হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকেও বিদায় বলেছেন। আজকাল রূপালি পর্দায়ও দেখা যায় এই স্পিনারকে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এখনো খেলে যাচ্ছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে।
এবারে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে খেলেছেন তিন ম্যাচ। কলকাতায় এসে নিশ্চয়ই আনন্দিত হবার কথা তাঁর। কলকাতার মাঠে হরভজনের রয়েছে অসাধারণ সব কীর্তি। কলকাতায় সাতটি টেস্ট খেলে মাত্র ২১.৭৬ গড়ে নিয়েছেন ৪৬ উইকেট। ইডেন গার্ডেন্সে ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন মোট ছয় বার। টেস্টে ১০ উইকেটও নিয়েছেন কলকাতার এই মাঠেই। সব মিলিয়ে কলকাতায় যেন অনবদ্য তিনি।
সেসব স্মৃতি মনে করেই গণমাধ্যমকে হরভজন বলেছেন, ‘আমি যখন কলকাতায় খেলতে নামি তখন বোধহয় আমার উপর কোনো ঐশ্বরিক ক্ষমতা ভর করে। খুব কম বোলারই কলকাতায় এত ভালো বল করেছে। আমার মনে হয় আমি কলকাতার প্রিয় সন্তান। আমি খুবই আনন্দিত যে আমি টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাটট্রিকও করেছিলাম এই ইডেন গার্ডেন্সে।’
হরভজন সিংয়ের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগারও এই কলকাতাতেই। ২০০৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন সাত উইকেট। ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাথে সেই ঐতিহ্যবাহী টেস্টেও নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। ওই টেস্টে ভারত ফলো অনে পড়েও ম্যাচ জিতেছিল। আইপিএলে এখন অবধি তিন ম্যাচ খেললেও কলকাতায় এখনো খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। এই তিন ম্যাচে ৭ ওভার বোলিং করে এখনো উইকেটশূন্য এই বোলার।
আইপিএল আবার মাঠে গড়ালেও হয়তো আর কলকাতায় খেলার সুযোগ হবেনা। আইপিএলে দ্বিতীয় পর্বের খেলা হবার কথা আরব-আমিরাতে। এছাড়া হরভজনের দল কলকাতাও এবারের আইপিএলে সুবিধাজনক অবস্থানে নেই। সাত ম্যাচ খেলে মাত্র দুই জয় নিয়ে আছে পয়েন্ট টেবিলের সপ্তম অবস্থানে। তাই কলকাতায় না হোক অন্তত কলকাতার হয়ে যেন আবার চেনা রূপ ফিরে পান সেটাই চাইবে তাঁর দল।
কলকাতার মাঠ সব সময়ই হরভজনের জন্য বিশেষ কিছু। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘যখনই আমি ইডেনে খেলতে আসি, এই মাঠ আমাকে খালি হাতে ফেরায় না। ইডেন খুব স্পেশাল, আমি হৃদয় দিয়ে সেটা অনুভব করতে পারি। যখন আমি যে দলের হয়ে খেলি না কেন, ইডেন আমাকে সবটুকু উজাড় করে দেয়। এটা আমার জন্য আরেকজন মায়ের মত।’
এখানে একটু বলে রাখা দরকার যে, কলকাতার যুবরাজ সৌরভ গাঙ্গুলির ভূমিকাও ভাজ্জির ক্যারিয়ারে বিস্তর। এই সৌরভই নির্বাচকদের বৈঠকে সাফ বলেছিলেন, ‘হয় ভাজ্জিকে নেবেন, না হয় আমি এই ঘর ছেড়ে বের হবো না।’ আবার ভাজ্জির ক্যারিয়ার সেরা সময়ও এসেছে এই প্রিন্স অব ক্যালকাটার অধিনায়কত্বেই। সৌরভের কাছেও তাই ঋণী ভাজ্জির ক্যারিয়ার।
এক ইউটিউব শো-তে হরভজন বলেছিলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারে সৌরভ গাঙ্গুলির ভূমিকা বলে শেষ করা যাবে না। আমি জীবনের এমন একটা সময় ছিলাম, যখন আমি জানতামও না যে কে আমার পাশে আছে আর কে নেই। কারণ, অনেকেই বলতো পাশে আছে, কিন্তু থাকতো তা। ওই সময় সত্যিই আমাকে সমর্থন করেছেন দাদা (সৌরভ গাঙ্গুলি)।’
সবার বিরুদ্ধে গিয়ে ভাজ্জিকে দলে নিয়েছিলেন এই সৌরভই। হরভজন বলেন, ‘নির্বাচকরা আমাকে চায়নি। তাঁরা অনেক কিছুই বলেছিল যা এখন আমার মুখে নেওয়া উচিৎ না। ওই সময় সৌরভ আমাকে দলে নেয়। তাঁর কাছে আমার কতটা ঋণ তা আসলে বলে শেষ করা যাবে না। ওই সময় যদি অন্য কেউ অধিনায়ক থাকতো – আমি আদৌ নিশ্চিত না যে এতটা সমর্থন পেতাম কি না। আমার ক্যারিয়ারে কেউ একজন যিনি আমাকে প্রতিনিয়ত পেছন থেকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন – তিনি হলেন সৌরভ গাঙ্গুলি। তাঁর জন্যই আমি ভয়শূন্য হয়ে খেলতে পেরেছি, খেলতে পেরেছি ১০০ টা টেস্ট।’