বিকেলের আলোটা যখন ধীরে মাঠের ঘাসে গাঢ় হচ্ছিল, তখন যেন আবারও তিনি নিজের অস্তিত্বের জানান দিলেন তিনি। মেজর লিগ সকার আবারও অনুভব করল—ফুটবল এখনো এক মানুষের পায়ের ভরসাতেই কবিতা হয়ে ওঠে। তিনি লিওনেল মেসি।
বয়স তাকে গতিহীন করেনি, বরং তাকে আরও বুদ্ধিমান, আরও ধারালো, আরও নির্বিকার জাদুকরে পরিণত করেছে। ইন্টার মায়ামি যখন সেমিফাইনালে সিনসিনাটিকে ৪–০ গোলে বিধ্বস্ত করল, স্কোরলাইনের ভেতর লুকানো একটাই নাম—মেসি। এক গোল, তিন অ্যাসিস্ট, আর একটি নীরব পূর্ণতা—১,৩০০ গোল ও অ্যাসিস্টের সম্মিলিত মাইলফলক। এ যেন খেলা নয়, ইতিহাসের এক অধ্যায় নিজের হাতেই সম্পাদনা করার অনন্য অধ্যায়।
মেসির পায়ে ফুটবল যেন এক অদ্ভুত সরলতা আর রহস্যের মিশ্রণ। তাঁর পায়ে বল মানেই ঘাসের প্রতিটি ফাইবার তার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুলে ওঠে, প্রতিপক্ষের মনে বাজে অজানা শঙ্কা। অনিবার্য পরিণতির মতো বল পৌঁছে যায় তাঁর অবধারিত ঠিকানায়।

এমএলএসেও সেই চেনা দৃশ্য—যেন ইউরোপের ব্যস্ততার পর এই মহাদেশে এসে তিনি খুঁজে পেয়েছেন নিজের তৃতীয় যৌবন। এখন তিনি মাত্র চার গোল দূরে ৯০০-এর চূড়া ছোঁয়ার, আর তার অ্যাসিস্ট সংখ্যা ৪০৪—পরিসংখ্যান বলছে, এটাই পৃথিবীর সর্বোচ্চ। বার্সায় ৯৪১, আর্জেন্টিনায় ১৭৬, মায়ামিতে ১১৭, পিএসজিতে ৬৬—এই সংখ্যাগুলো একজন ফুটবল জাদুকরের পুনরুত্থান আর নির্মম ধারাবাহিকতার সাক্ষ্য।
ইন্টার মায়ামি এখন মেসির শ্বাসে বেঁচে থাকা একটি ক্লাব। শেষ সাত ম্যাচে দলটি করেছে ২৫ গোল, যার ২২টির পিছনে সরাসরি মেসির হাত। যেন পুরো দলটি তার দৃষ্টির ওপর দাঁড়িয়ে আছে; তার পাস, তার ছোড়া আলোয় বাকি এগারোজন পথ চিনে নেয়। এমনকি ‘প্রী-অ্যাসিস্ট’ হিসাব থেকে বাদ দিলেও ২৫ গোলের ২০টিতেই তার স্পর্শ আছে — মায়ামি রাজ্যের একক অধিপতি লিওনেল আন্দ্রেস মেমি। মাঠে তার হাঁটা, গতি, দৃষ্টিভঙ্গি—সব মিলিয়ে মনে হয়, মায়ামিতে ফুটবল এখনো মেসিকে কেন্দ্র করেই ঘোরে।
কিন্তু, মেসির গল্প কখনোই শুধু সংখ্যার নয়। এটা ক্ষুধার গল্পও বলে। লক্ষ্য এখন ইস্টার্ন কনফারেন্স ফাইনাল—নিউ ইয়র্ক সিটির বিপক্ষে ২৯ নভেম্বর। তারপর অপেক্ষা সেই বৃহত্তর স্বপ্ন—২০২৫ এমএলএস কাপ। যেন এই মহাদেশের সঙ্গে তার শুভ পরিচয়ের চূড়ান্ত পরিণতি হবে সেই ট্রফির ছোয়াতেই।

মেসি জানেন, ফুটবল একদিন তাকে বিদায় জানাবে। আলো নিভে আসবে। কিন্তু এখনো, প্রতিটি ম্যাচে তিনি প্রমাণ করেন—তিনি যতটা খেলোয়াড়, তারচেয়েও বড় এক জাদুকর। সেই জাদুটাকে বারবার নিজের ভেতরে নতুন করে জন্মাতে জানেন মেসি।










