বিশ্বফাইনালের শতক-কাব্য

একজন ক্রিকেটারের জন্য বিশ্বকাপ খেলা যেনো স্বপ্নের মত। নিজেকে প্রমাণ করার সবচেয়ে বড় মঞ্চ এই ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ১৯৭৫ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি বিশ্বকাপই অসাধারণ কিছু ক্রিকেটারকে পেয়েছে। তবে বিশ্বকাপের ফাইনাল যেনো আরো বড় কোনো মঞ্চ। লাখো ক্রিকেটপ্রেমীর প্রত্যাশার চাপ মিটিয়ে বিশ্ব জয় করা তো আর মুখের কথা নয়।

বিশ্বকাপের ফাইনাল ব্যাটসম্যানদের জন্য ভীষণ চাপের। ফলে ফাইনাল ম্যাচে বড় কোনো পারফর্মেন্স একজন ক্রিকেটারকে বইয়ের পাতায় জায়গা করে দিতে পারে। একটি বলে শেষ হয়ে যেতে পারে স্বপ্নের ফাইনাল। তবে সেই চাপ সামলে কয়েকজন হয়ে উঠেছেন কিংবদন্তি। এখন অবধি বিশ্বকাপের ফাইনালে সেঞ্চুরি করেছেন ছয় জন ব্যাটসম্যান। সেই ছয় মহারথীকে নিয়েই আজকের তালিকা।

  • ক্লাইভ লয়েড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

ক্লাইভ লয়েড তাঁর সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারদের একজন ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ক্রিকেট বিশ্বের একচ্ছত্র রাজা তখন দেশটির হয়ে টানা দুই যুগ ক্রিকেট খেলে গেছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই দাপুটে দল হয়ে উঠার পিছেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানের বেশ কিছু ইনিংসই আজীবন গেঁথে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে।

তবে ১৯৭৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে তাঁর ইনিংসটি যেন অবিস্মরণীয়। ১৯৭৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ফাইনাল ম্যাচে করে বসলেন ৮৮ বলে ১০২ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস। তাঁর ব্যাটে ভর করেই ফাইনালে একটি সম্মানজন স্কোড় দাড় করিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ১৭ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল ক্যারিবিয়ানরা। প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপেই এই কীর্তি করে আজীবন স্বরণীয় হয়ে থাকবেন ক্লাইভ লয়েড।

  • ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)

বিশ্ব ক্রিকেটের আরেক মহাতারকা স্যার ভিভ রিচার্ডস। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের সোনালি সময়ের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র ছিলেন তিনি। প্রায় দেড় যুগের ক্যারিয়ারে মাত করে রেখেছিলেন গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। ৫০ এর উপর গড়ে টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে আছে ৮৫৪০ রান।

১৯৭৯ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডের দেখানো পথেই হেটেছিছেল ভিভ রিচার্ডস। প্রথম বিশ্বকাপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতেছিল ক্লাইভ লয়েডের ব্যাটে চড়ে। এবার দ্বিতীয় বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের নায়ক হয় স্যার ভিভ রিচার্ডস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ফাইনালে ১৫৭ বলে খেলেছিলেন ১৩৮ রানের বিশাল এক ইনিংস।

  • অরবিন্দ ডি সিলভা (শ্রীলঙ্কা)

১৯৯৬ বিশ্বকাপে গোটা ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। অর্জুনা রানাতুঙ্গার সেই দল প্রথম বারের মত বিশ্বকাপ জয় করে। তবে ফাইনাল ম্যাচে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন অরবিন্দ ডি সিলভা। পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই দারুণ ফর্মে ছিলেন এই ব্যাটসম্যান।

তবে ফাইনাল ম্যাচে কোটি মানুষের চাপ সামলে নিজেকে এবং দলকে করেছিলেন বিশ্বজয়ী। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই ফাইনালে ১২৪ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন জয়ের বন্দরে। ১৩ টি চারের সেই ইনিংসে চড়েই প্রথম বারের মত ঐ ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখে শ্রীলঙ্কা। ক্রিকেট বিশ্বের জন্ম নেয় এক নতুন পরাশক্তির।

  • রিকি পন্টিং (অস্ট্রেলিয়া)

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা রিকি পন্টিং। অস্ট্রেলিয়ার সোনালি সময়ে দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এই ব্যাটার। টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই ১৩ হাজারের বেশি রান করেছেন এই ব্যাটসম্যান। এছাড়া ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে পরপর তিনবার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জয় করেন তিনি। এরমধ্যে দুইবারই দলটির অধিনায়ক ছিলেন রিকি পন্টিং।

২০০৩ বিশ্বকাপের ভারতের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে সেঞ্চুরি করেন তিনি। সেই ম্যাচে মাত্র ১২১ বলে খেলেছিলেন ১৪০ রানের ইনিংস। পন্টিং এর ব্যাটে চড়ে ৩৫৯ রানের বিশাল সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া।

  • অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (অস্ট্রেলিয়া)

২০০৭ সালে রিকি পন্টিং এর নেতৃত্বে আবার বিশ্বকাপ জয় করে অস্ট্রেলিয়া। তবে এবারের ফাইনালের নায়ক ছিলেন গিলক্রিস্ট। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এই ওপেনার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আন্তির্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রায় ১০ হাজার রানের মালিক এই ব্যাটসম্যান।

২০০৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ফাইনালে ওপেন করতে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন এই ব্যাটসম্যান। ঝড়ো এক ইনিংসে ভেঙে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইন আপ। সেই ম্যাচে ১০৪ বলে খেলেছিলেন ১৪৯ রানের বিশাল এক ইনিংস। এটি বিশ্বকাপ্ ফাইনালে কোনো ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস।

  • মাহেল জয়াবর্ধনে (শ্রীলঙ্কা)

শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের সফল তম ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনে। টেস্ট ও ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই দেশটির হয়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ১০ হাজারেরও বেশি রান। ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও অসাধারণ পারফর্মেন্স করেছিলেন তিনি। তবে সেবার আর চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি দেশটি।

২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত জিতলেও সবার মন কেড়ে নিয়েছিলেন মাহেলা জয়াবর্ধনে। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকার টস জিতে ব্যাট করা সিদ্ধান্ত নিলে তাঁর প্রতিদান দেন জয়াবর্ধনে। তাঁর ১০৩ রানের ইনিংসে ২৭৪ রানের পুঁজি পেয়েছিল দলটি। তবে শেষ পর্যন্ত ধোনির অসাধারণ ইনিংসে বিশ্বকাপ জয় করে ভারত।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link