পঞ্চপুত্র

লেখাটা আগের জায়গাতেই মোটামুটি শেষ করতাম যদি না একটা জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইটে আরও কিছু মুল্যবান পরিসংখ্যান পেয়ে যেতাম যা আমাদের বিভিন্ন কালের বোলারদের মধ্যে তুলনা করতে সাহায্য করবে।

যেমন, ধরুন আমরা জোয়েল গার্নার আর শেন বন্ডের মধ্যে তুলনা করতে চাই। গার্নার যে সময় পারফর্ম করতেন সেই সময় এক দিনের ক্রিকেটে ওভার পিছু গড়ে ৪ রান করে উঠত, বন্ডের ক্যারিয়রের কালে সেই গড় বেড়ে দাঁড়াল ৪.৮২। সুতরাং দুজনের ইকনমি রেট তুলনার ক্ষেত্রে এই তফাৎ মাথায় রাখলে দেখতে পাবো গারনারের ক্ষেত্রে তার কালের আর তার নিজের বোলিংয়ের ইকোনমি রেটের তফাৎ ওভারপিছু ০.৯ রানের। বন্ডের ক্ষেত্রে এই তফাৎ ০.৫৩। অর্থাৎ তাদের কালের অ্যাডজাস্টমেন্টের পরও গার্নার এই সন্দর্ভে বন্ডের চেয়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকলেও আপাতদৃষ্টিতে যতটা মনে হচ্ছে ঠিক ততটা নয়।

ঠিক তেমনই গার্নারের কালে ব্যাটসম্যানদের এভারেজ রান ছিল ২৯.৬, বন্ডের কালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩২.৩। তাদের নিজের বোলিং গড়কে তাদের এরার বোলিং এভারেজ থেকে বিয়োগ করলে আমরা দেখতে পাবো তারা তাদের এরার অন্যান্য বোলারদের তুলনায় কত বেশি সফল। গার্নারের ক্ষেত্রে এই বিয়োগফল ১০.৭৫, বন্ডের ক্ষেত্রে ১১.৪২। সুতরাং এই মাপদণ্ডে গারনারের তুলনায় বন্ড এগিয়ে। ইন ফ্যাক্ট, এই মাপদণ্ডে শেন বন্ড আমাদের তালিকার অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে।

কিন্তু এই দুটো ফ্যাক্টরকে একসঙ্গে কীভাবে ধর্তব্যের মধ্যে আনা যায়? একটা উপায় হচ্ছে ইকোনমির তফাৎ এবং গড়ের তফাৎ গুণ করে যে সংখ্যাটা পাবো তার তুলনা করে দেখা। অর্থাৎ গার্নারের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা হচ্ছে (০.৯*১০.৭৫ =৯.৬৮)। বন্ডের ক্ষেত্রে (০.৫৩*১১.৪২=৬.০৫)। সুতরাং দুটো মিলে গার্নার এগিয়ে থাকবেন বন্ডের চেয়ে। শুধু তাই নয়, গারনার আমাদের আলোচ্য বোলারদের সবার চেয়েই এগিয়ে থাকবেন।

এইভাবে ধরলে আমাদের সেরা পাঁচজনের ক্রম দাঁড়াবে – গার্নার (৯.৬৮), শন পোলক (৮.০৪), গ্লেন ম্যাকগ্রা (৭.৮৮), রিচার্ড হ্যাডলি (৭.০৪) এবং কার্টলি অ্যামব্রোস (৬.৭২)। আপানাদের মতো আমিও পোলকের এই স্থান দেখে বেশ অবাক। কিন্তু সংখ্যা এই কথাই বলছে।

আরও আশ্চর্যের কথা এই যে পোলকের ইকোনমি আমাদের আলোচ্য বোলারদের মধ্যে সর্বোত্তম – হ্যাঁ, গার্নারের চেয়ে তিনি তার কালের নিরিখে বেশি কিপটে। পোলকের কালে বোলারদের ওভারে দেওয়া গড় রান ছিল ৪.৬৮, পোলকের দেওয়া গড় রানের চেয়ে ১ রান করে বেশি।

তবে এই লিস্ট একটু অন্যভাবেও তৈরি করা যায়। একদিনের খেলা সাধারণত ৫০ ওভারের হয়ে থাকে। আমরা প্রথমে দেখব ৫০ ওভারে আমাদের আলোচ্য বোলারেরা কত রান দেবেন। তারপর তাদের যুগে ব্যাটসম্যানেরা ৫০ ওভারে কত রান করতেন তার সঙ্গে সেই রানের তুলনা করে দেখব এই তফাৎ কার ক্ষেত্রে সর্বাধিক হয়।

একটা উদাহরণ দিই। গ্লেন ম্যাকগ্রাকে ধরা যাক। তিনি ওভার প্রতি ৩.৮৮ রান দিতেন। অর্থাৎ ৫০ ওভারে তার দেওয়া রান দাঁড়াবে ১৯৪। ম্যাকগ্রার সময় ব্যাটসম্যানেরা ওভার পিছু গড়ে ৪.৬৩ রান স্কোর করতেন। অর্থাৎ ৫০ ওভারে মোট রান দাঁড়াতো ২৩২। মোট তফাৎ (২৩২-১৯৪) = ৩৮ রানের।

শুধুমাত্র শেন বন্ডের ক্ষেত্রে এই ফর্মুলায় একটু পরিবর্তন হবে।

এর, কারণ বন্ডের অসাধারণ স্ট্রাইক রেটের জন্যে ৫০ ওভার শেষ হওয়ার আগেই বিপক্ষকে অল আউট করে ফেলবেন বন্ড। সুতরাং ইনিংসে তিনি মোট ২০৯ রান দেবেন (তার উইকেট প্রতি গড় রান *১০)।

এই পদ্ধতিতে যদি একদিনের ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ফাস্ট বোলারদের লিস্ট তৈরি করা হয় তাহলে সেটা এইরকম দাঁড়াবে – পোলক (৫০), গার্নার (৪৫), অ্যামব্রোস (৪০), হ্যাডলি (৩৯) এবং ম্যাকগ্রা (৩৮)। এবার শন পোলক গার্নারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছেন।

তবে ক্রিকেটে নিছক পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে শ্রেষ্ঠত্বের নির্ণয় করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। বিস্তীর্ণ ক্যারিয়র জুড়ে সাফল্যের জন্যে আক্রাম বা ম্যাকগ্রাকে হয়ত অনেকে এগিয়ে রাখবেন অন্যান্যদের চেয়ে। তেমনই মাইকেল হোল্ডিং বা অ্যলান ডোনাল্ডের অসাধারণ গড় এবং স্ট্রাইক রেটকেও অনেকে এক্সট্রা গুরুত্ব দিতে চাইবেন।

আবার ওয়াসিম আকরাম বা ম্যাকগ্রা ওয়ার্ল্ড কাপে দুর্দান্ত সফল, সেই জন্যে তাদের কিছু অতিরিক্ত পয়েন্ট দেওয়ার কথাও অনেকে ভাবতে পারেন। বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশ ছাড়া কার কেমন পারফর্মেন্স। সুতরাং অন্য মত থাকবেই।

তবুও ওপরে দেওয়া দুটো মডেলের বোলারদের ক্রমে সামান্য হেরফের হলেও নামগুলো কিন্তু এক। সুতরাং একদিনের ক্রিকেটে এই পাঁচজনের সাফল্য নিয়ে খুব বেশি প্রশ্ন ওঠার সম্ভাবনা কম। এবং দুটো তালিকাতেই ছয় এবং সাত নাম্বার নাম দুটি এক – যথাক্রমে শেন বন্ড এবং ওয়াসিম আকরাম। এই অ্যানালাইসিস আরও একবার মনে করিয়ে দিল কত বড় মাপের প্রতিভা ছিলেন বন্ড।

পোলক, গার্নার, হ্যাডলি, অ্যামব্রোস, ম্যাকগ্রা – বোলিং আক্রমণ হিসেবে খারাপ নয় একেবারেই। এর মধ্যে আবার দুইজন অলরাউন্ডার। কারা নতুন বল পাবে এদের মধ্যে? স্লগ ওভারেই বা কার হাতে বল তুলে দেবেন? আর যদি শেষের পাঁচজনকে পেয়েই গেলাম, তাহলে প্রথম ছয়জনের কথাও চিন্তা করে ফেলা যায় কি? চেষ্টা করে দেখবেন নাকি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link