ডগলাস ‘ড্রেডলকড’ হন্ডো

বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা গ্রিসের ফ্রিসকোস নামে একধরণের চিত্রকর্মে প্রথম এইধরনের চুলের স্টাইল দেখা যায়। ছোট ছোট রশি দিয়ে চুল অনেকগুলো ভাগে ভাগ করে বেঁধে রাখা, যাকে বলে ড্রেডলকস। পরবর্তীকালে নানা ঋষীদের এভাবে চুল বেঁধে রাখতে দেখা যায়। ভাবছেন হঠাত ড্রেডলকসের ইতিহাস নিয়ে পড়লাম কেনো? কেননা এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে ড্রেডলকসের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছিলেন ডগলাস হন্ডো।

জিম্বাবুয়েতে বেড়ে উঠা আর দশটা আশির দশকের ছেলে-মেয়ের মত হন্ডোও জড়িয়েছিলেন কয়েকটি খেলায়। বিশেষ করে রাগবি ও বাস্কেটবলে দারুণ আগ্রহ ছিল তাঁর। তবে বড় ভাইকে দেখে প্রথম ক্রিকেট খেলতে শুরু করেন প্রাইমারি স্কুলে থাকতেই। আস্তে আস্তে ব্যাটিং, বোলিং – দুই বিভাগেই নিজেকে প্রতিভার পরিচয় দিতে থাকেন হন্ডো। ফলে একসময় স্কুল দলের অধিনায়কও বনে যান তিনি।

তবে হন্ডোর আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট যাত্রাটা শুরু হয় চার্চিল স্কুলে। চার্চিল স্কুল জিম্বাবুয়ের ক্রীড়া জগতের এক সমৃদ্ধ নাম। এই স্কুল থেকেই বিভিন্ন খেলার সেরা খেলোয়াড়রা বেড়িয়েছে। টাটেন্ডা টাইবু, হ্যামিলটন মাসাকদজা কিংবা এলটন চিগম্বুরার মত আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেটাররা উঠে এসেছেন এই স্কুল থেকেই।

সেই স্কুলের অনুর্ধব-১৫ দল হয়ে একসময় মূলদলের অধিনায়ক হন এই পেস বোলিং অলরাউন্ডার। সেখান থেকেই হন্ডোর ডাক আসে জিম্বাবুয়ে অনুর্ধব-১৫ দলের হয়ে খেলার জন্য। দারুণ একটা সময় পাড় করতে থাকেন হন্ডো। ব্যাটে, বলে দলের মূল অস্ত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

এভাবেই একদিন হন্ডো সুযোগ পেয়ে যান জিম্বাবুয়ে অনুর্ধব-১৯ দলেও। তবে সেবারই প্রথম দেখা দেয় তাঁর পিঠের ইনজুরিটা। যা এরপর থেকে পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে ভোগাবে সম্ভাবনাময় এই ক্রিকেটারকে।

পুরো একবছর পর ইনজুরি কাটিয়ে ২০০০ সালে আবার ক্রিকেটে ফিরেছিলেন ডগলাস হন্ডো। সেই সময় তিনি মিডল্যান্ডের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলতে থাকেন। যদিও ইনজুরি থেকে ফিরে এসে নিজের স্বাভাবিক ছন্দে আসতে পারছিলেন না ডানহাতি এই পেস বোলার। তবে তাঁর দুইদিকে বল স্যুইং করাতে পারার দক্ষতা নির্বাচকদের নজর কেড়েছিল।

পুরষ্কার হিসেবে ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের আগে নেট বোলার হিসেবে ডাকা হয় হন্ডোকে। নেটেই তাঁর স্যুইং দিয়ে ব্যাটসম্যানদের চমকে দিয়েছিলেন এই পেসার। ফলে টেস্ট দলেও জায়গা হয়ে যায় তাঁর।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেই টেস্টেই অভিষিক্ত হন তিনি। অভিষেকেই চমকে দিতে না পারলেও গ্যারি কার্স্টেনের উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর ভারতের সাথে ওয়ানডে দলেও ডাক পান তিনি। ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি বেশ প্রিয় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছিল হন্ডোর।

আট বারের দেখায় তিনবারই সৌরভকে আউট করেছিলেন এই বোলার। ২০০২ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ভারতের বিপক্ষে চার উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে সৌরভ, শচীন ও যুবরাজ সিং এর উইকেটও ছিল। এরপরের ম্যাচেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবার চার উইকেট নেন এই পেসার।

তবে ২০০৫ সালে আবার তাঁর পিঠের ইনজুরি মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। এছাড়া বোর্ড থেকেও তাঁকে ড্রেডলকস চুল কেটে ফেলতে বলা হয়। এই ক্রিকেটার ক্রিকেট ও তাঁর ড্রেডলকসের মধ্যে দ্বিতীয়টাই বেঁছে নিয়েছিলেন। সবাইকে অবাক করে ২০০৫ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে ইংল্যান্ডের পাড়ি জমিয়েছিলেন এই পেসার। চুল কাটতে অনীহা জানিয়ে ক্রিকেটকে বিদায় আগে আর কেউ কি জানিয়েছেন? ঠিক জানা নেই।

এর আগে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলা ৯ টেস্ট ও ৫৬ ওয়ানডে ম্যাচে এই পেসারের ঝুলিতে আছে যথাক্রমে ২১ ও ৬১ উইকেট। ইংল্যান্ডে তিনি কয়েকটি ক্লাবের হয়েও ক্রিকেট খেলেছিলেন। এরপর তিনি মনযোগ দেন কোচিং এ। নানা ক্লাবের কোচ হয়ে অবশেষে তিনি ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের কোচ হন। এবার অবশ্য তাঁর ড্রেডলকস কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি ।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link