ক্যাসেমিরোরা কুৎসিত বলেই পৃথিবী সুন্দর

টোনিনহো সেরেজোর ফুল পরিষ্কার করার কাজ ছিল। জিকো সক্রেটিস ফ্যালকাও এডাররা যখন ফুল ফুটিয়ে পাখির গান দিয়ে সবুজ ঘাসে রামধনু খেলাতো, সেরেজো তখন ব্রাজিল দলের আপাত অস্তিত্বহীন রক্ষণকে কুম্ভের মত রক্ষা করত।

দুঙ্গা যেমন, রোমারিও, বেবেতোরা যখন ফুলে ফুলে মধু খেলে বেড়াতো, দুঙ্গা তখন ছেনো গুণ্ডার মত মাজিনহো আর মাউরো সিল্ভাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়া দাপিয়ে ‘আগলি ফুটবল’ খেলে বেড়াতো যাতে পাড়া সুরক্ষিত থাকে।

আরো পড়ুন

ফার্নান্দিনহো, গিলবার্তো সিলভাদের মতোই ক্যাসেমিরো, ব্রাজিল কিংবা রিয়াল মাদ্রিদের ক্যাসেমিরো, কার্লোস হেনরিক ক্যাসেমিরো। ক্যাসেমিরো সাও পাওলোয় জন্মেছিলেন। গলিতে। সোনার চামচ মুখে কেউ তুলে দেয়নি তাঁর। ভাইবোনদের দেখাশোনা, পড়াশোনা আর ফুটবল একই সঙ্গে চলত।

ফুটবল ক্যাসেমিরোর প্রাণ। কিন্তু ক্যাসেমিরো আর পাঁচটা জুনিয়র ব্রাজিলিয়ান ফুটবল প্রতিভার মতো রাজার আদর পাননি। ক্যাসেমিরো ফুটবল মাঠে প্রবেশ করলে কেউ টুপি ছুঁড়ে আদর করে অভিবাদন জানাননি।

তবু ক্যাসেমিরো ফুটবল পায়ে মাঠে নামেন। নিশ্ছিদ্র দুর্গের সামনে হেক্টরের মতো হৃদয় পেতে দেন। আর অ্যাকিলিসরা ভাল্লা দিয়ে ফালাফালা করে দেবার সময় তাঁর পিছনে সিলভা মারকুইনহোসদের সুযোগ দিয়ে দেন তিনি যাতে ঠাকুরঘরের গোপাল সুরক্ষিত থাকে।

জীবনে যেমন, ফুটবল মাঠেও নোংরা কাজগুলো করার জন্য লোক ঠিক করা থাকে। জার্মানির লোথার ম্যাথিউস, ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, আর্জেন্টিনার হ্যাভিয়ের মাশচেরোনো, ফ্রান্সের ক্লদ ম্যাকলেলে, প্যাট্রিক ভিয়েরা, নেদারল্যান্ডসের ফ্র্যাঙ্ক রাইকার্ড, হাঙ্গেরির জোসেফ বজসিক, আবার আয়ারল্যান্ডের রয় কিন।

ক্যাসেমিরোর উপর দাঁড়িয়ে থেকে শিল্পীরা নকশি কাঁথা তৈরি করে, কালো পাথর কুঁদে ভাস্কর্য বানায়।

আর ক্যাসেমিরো? সোনার সময়ের রিয়ালের তিন পাহারাদারের একজন, ক্যাসেমিরো? ব্রাজিলের জার্সি গায়ে না হারা ক্যাসেমিরো? ক্যাসেমিরো ইউরোপীয় ঘরানায় ব্রাজিলের দুর্গ রক্ষা করে চলে।

পাস বাড়ায়, গোলার মতো শটে বিপক্ষের তিনকাঠি কাঁপায় আর শেষ মুহূর্তের চুরি করে নেওয়া হেডে খিদে মেটায় আটকে পড়া শিল্পীদের। কখনও আবার গোল করে দলকে নিয়ে যান বিশ্বকাপের নক আউট পর্বে। তখন, তাকে আবার দৃষ্টিনন্দনও দেখায়।

এই পৃথিবী সুন্দর কারণ ক্যাসেমিরোরা কুৎসিত বলেই। কুৎসিত বলেই নর্তকীরা নির্ভয়ে নাচতে পারে, আলি আকবর তাঁর বাদ্যযন্ত্রে মূর্ছনা তোলেন, বসন্তের দোয়েল কোকিল সুর তুলে গেয়ে যায়।

রক্তের দাগ ক্যাসেমিরোরা বুক পেতে নেন যাতে নেইমাররা তাঁদের প্রতিভা দিয়ে আলো করতে পারে ঘাসের দুর্গ। আলোর তলায় অন্ধকারের মতো দণ্ডায়মান ক্যাসিমেরো, লাইটহাউসের আলো নিবতে দেন না কখনও।

কৃতজ্ঞতা: ময়দানী স্ক্র্যাপবুক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link