ফক্স ইন দ্য বক্স

যার পায়ের জাদুতে উথাল-পাতাল হত বিশ্বের সেরা সব রক্ষণভাগ। তাঁর কথা স্মরণ করেই জোহান ক্রুইফ বলেছিলেন,’ অ্যা জিনিয়াস অব দ্য গোল এরিয়া’। তিনি ব্রাজিলের সর্বকালের সেরাদের একজন রোমারিও। পুরো নাম রোমারিও ডি সুজা ফারিয়া।

রিও ডে জেনিরোর ছোট্ট ক্লাব ওলারিয়া থেকে শুরু। এরপর ভাস্কো দ্য গামা হয়ে সেই সময়ের দুনিয়া কাঁপানো ব্রাজিল দলে আবির্ভাব। এরপরই শুধু ছুটে চলা আকাশপানে। তাঁর সীমান শুধুই গোলপোস্টের ওই জাল। হয়ে উঠেছিলেন ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সেরা গোল স্কোরার।

যার পায়ের জাদুতে উথাল-পাতাল হত বিশ্বের সেরা সব রক্ষণভাগ। তাঁর কথা স্মরণ করেই ইয়োহান ক্রুইফ বলেছিলেন, ‘আ জিনিয়াস অব দ্য গোল এরিয়া।’ তিনি ব্রাজিলের সর্বকালের সেরাদের একজন রোমারিও। পুরো নাম রোমারিও ডিসুজা ফারিয়া।

ওলারিয়া ক্লাবের এক কিশোরকে তাঁদের জুনিয়র দলে ডেকে নেয় বিখ্যাত ক্লাব ভাস্কো দ্য গামা। সেখানে গিয়েই হৈচৈ ফেলে দিলেন এই স্ট্রাইকার। দলটির হয়ে ১৯৮৭-৮৮ সালে দুটি লিগ জয় করে ফেলেন তিনি। সেখান থেকেই ডাক আসে তখনকার শক্তিশালি ব্রাজিল দলে। তবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম সাড়া ফেলেন ১৯৮৮ সালের অলিম্পিক ফুটবল টুর্নামেন্টে। সেখানেই ফুটবল বিশ্ব প্রথম দেখে পেনাল্টি বক্সে রোমারিওর পায়ের নিপুণ কারুকাজ। সেই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতাও ছিলেন রোমারিও।

এরপর ১৯৮৮-১৯৯৩ টানা পাঁচ বছর ডাচ ক্লাব পিএসভি এর হয়ে। পাঁচ মৌসুমে দলটির হয়ে ১৬৭ ম্যাচে রোমারিওর গোল সংখ্যা ১৬৫। সেই সময়ে দলটির অনেকেই সাক্ষী দিয়েছেন রোমারিও রীতিমত বলে কয়ে গোল করতেন সেই সময়টায়। বড় ম্যাচে নামার আগে কোচ ও সতীর্থদের বলতেন, ‘চিন্তা করো না, আমি গোল করবো এবং আমরাই ম্যাচ জিতবো।’

পিএসভিতে রোমারিওর সেই ফুটবল প্রদর্শনীর পর এই স্ট্রাইকরা পাড়ি জমান তাঁর স্বপ্নের দল বার্সেলোনাতে। তারকায় ঠাসা সেই দলেও রোমারিও হয়ে উঠেছিলেন উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। বার্সেলোনার হয়ে ১৯৯৩-৯৪ সালে নিজের প্রথম মৌসুমেই দলকে লা লিগার শিরোপা এনে দেন তিনি।

৩৩ ম্যাচে ৩০ গোল করে সেই আসরেরও সর্বোচ্চ গোল দাতা ছিলেন রোমারিও। বার্সেলোনা ভক্তরা এখনো মনে রেখেছে ন্যু ক্যাম্পে এল ক্লাসিকোতে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে তাঁর সেই হ্যাটট্রিক। সেই ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-০ গোলে হারিয়েছিল বার্সা। তবে ১৯৯৫ সালে হঠাত করেই কোচের সাথে দ্বন্দ্বে বার্সেলোনা ছেড়েছিলেন তিনি।

ব্রাজিল দলেও নানা সময় নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই ফুটবলার। না হলে হয়তো ব্রাজিলের হয়ে আরো অনেকবার বল জালে জড়াতে পারতেন এই ফুটবলার। তবুও এখনো রোমালিও ব্রাজিলের চতুর্থ সর্বোচ্চ গোলদাতা। দেশটির হয়ে ৭০ ম্যাচ খেলে তাঁর গোল সংখ্যা মোট ৫৫ টি। তবুও এই মহাতারকাকে ছাড়াই ১৯৯৪ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের সাতটি ম্যাচ খেলেছিল ব্রাজিল।

ব্রাজিল তাঁর ইতিহাসে প্রথম বারের মত কোন বাছাই পর্বের ম্যাচ বলিভিয়ার কাছে হেরে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে সমর্থক ও সাংবাদিকদের তোপের মুখে রোমারিওকে খেলাতে বাধ্য হয়েছিল ব্রাজিল কোচ প্যারেইরা। সেই ম্যাচে মাঠে নামার আগেও রোমারিও বলেছিলেন, ‘আমি জানি কী হতে চলেছে। আমি উরুগুয়েকে চুরমার করে দিব।’

সত্যি তাই হয়েছিল সেদিন। পুরো বাছাই পর্বে ধুঁকতে থাকা ব্রাজিল সেদিন যেন এক অন্য দল। ওই ১১ নম্বর জার্সির ছেলেটার পায়ের তালে নেচেছিল গোটা ব্রাজিল। সেই ম্যাচে রোমারিওর করা দুই গোলে উরুগুয়েকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যায় দলটি।

১৯৯৪ বিশ্বকাপ সেই রোমারিও পায়ে চড়েই জয় করেছিল ব্রাজিল। বিশ্বকাপে তিনি করেছিলেন মোট পাঁচটি গোল। কোয়াটার ফাইনালে নেদারল্যান্ড ও সেমিফাইনালে সুইডেনের বিপক্ষে গোল করে দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। ফাইনালে ইতালিকে পেনাল্টি শ্যুট আউটে হারিয়ে চতুর্থ বারের মত শিরোপা হাতে তোলে রোমারিওরা। ওই বিশ্বকাপে তাঁর হাতেই উঠেছিল গোল্ডেন বল। তিনি শেষ ফুটবলার যিনি একই টুর্নামেন্টে বিশ্বকাপ ও গোল্ডেন বল জিতেছিলেন।

পরবর্তীকালে রোনালদোর সাথে তাঁর জুটি পুরো বিশ্বে পরিচিত হয়ে উঠেছিল রো-রো অ্যাটাক নামে। ব্রাজিলের সাবেই এই দুই স্ট্রাইকার একসাথে করেছেন মোট ৩৪ টি গোল। যার ১৯ টি এসেছে রোমারিওর কাছ থেকে। তবুও ব্রাজিলের এই ফুটবলার ব্রাজিলের হয়ে পরের দুইটি বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি।

১৯৯৮ বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান ইনজুরির কারণে এবং ২০০২ সালে আবারো যথারীতি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে দলে জায়গা হারান। ২০০৫ সালে ১১ নম্বর জার্সিতে ব্রাজিলের হয়ে শেষ ম্যাচটি খেলেন রোমারিও। সেখানেও গোল করে ভূমিকা রেখেছিলেন দলের জয়ে।

রোমারিওকে দেখেই ১১ নম্বর জার্সিতে খেলার স্বপ্ন দেখেছিলেন ব্রাজিলের এই প্রজন্মের মহাতারকা নেইমার। ২০০৭ সালে ভাস্কো দা গামার হয়ে এক ম্যাচে নিজের ১০০০ তম ক্লাব গোল করেন এই স্ট্রাইকার। সেই হাজারতম গোলের উদযাপন করতে গিয়ে দর্শকরা মাঠের খেলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রায় বিশ মিনিট। ২০০৮ সালে ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েও আবার ২০০৯ সালে আমেরিকার একটি ক্লাবের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। বলেছিলেন তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্যই নাকি সেই ক্লাবের হয়ে খেলেছিলেন তিনি।

২০১০ সালে পুরোপুরি ব্রাজিলের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে যান এই ফুটবল তারকা। ২০১৪ সালে ব্রাজিলের সাধারণ নির্বাচনে জিতে এখন তিনি দেশটির সিনেটের সদস্য। ওই নির্বাচনে ফুটবল মাঠের মতই রীতিমত বাজিমাত করেছিলেন তিনি। রিও ডে জেনারিও এর প্রতিনিধি হিসেবে ইতিহাসের সর্বাধিক ভোট পেয়েছিলেন ব্রাজিল ফুটবলের এই মহাতারকা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...