পার্থক্য গড়ে দিলেন মিরাজ

হারারের উইকেট থেকে বড় কোনো সহায়তা মেলেনি বোলারদের। তৃতীয় দিনেও উইকেট পুরোপুরি কথা বলেছে ব্যাটসম্যানদের পক্ষে। বাংলাদেশের বোলিংয়েও বৈচিত্র্যের অভাব ছিল লক্ষ্যণীয়। তবে এমন ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও শেষের দিকে দারুণ বোলিংয়ে পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

দিনের প্রথম অংশে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা দাপট দেখালেও শেষের দিকে এই স্পিনারের ঘূর্ণিতেই পথ হারিয়েছে স্বাগতিকরা। মিরাজের আগে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনে ছিলেন সাকিব আল হাসান। দুই স্পিনারের বোলিং নৈপুণ্যেই প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানে অলআউট হয় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানের বড় লিড পায় বাংলাদেশ।

টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্ঠম বারের মত পাঁচ উইকেট শিকার করেন মিরাজ। এছাড়া সাকিব পেয়েছেন চার উইকেট। তৃতীয় দিন শেষে দশ উইকেট হাতে রেখে জিম্বাবুয়ের থেকে ২৩৬ রানে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। তবে প্রথম সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে  স্বাগতিকারা এগিয়েছে অনায়াসেই।

দিনের শুরুতে ১ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে জিম্বাবুয়ে। পেস স্পিন কোন কিছু পাত্তা না দিয়ে প্রথম সেশনে দারুণ ব্যাট করেন আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান তাকুজওয়ানাশে কাইতানো ও ব্রেন্ডন টেইলর। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশ করে ৯৫ রান যোগ করেন দু’জন। কাইতানো দেখে শুনে ব্যাট করলেও বেশ আগ্রাসী ছিলেন টেইলর।

২০৯ রান নিয়ে মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। তবে বিরতির পর অতি আগ্রাসীই কাল হয় টেইলরের। মেহেদী হাসান মিরাজের সাধারণ এক বলে স্লগ করতে গিয়ে ইয়াসির আলী রাব্বির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই ব্যাটসম্যান। টেইলরের ব্যাট থেকে আসে ৯২ বলে ৮১ রান। অধিনায়ক বিদায় নেওয়ার পর কাইতানোর সাথে দলের হাল ধরেন মেয়ার্স।

তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৫১ রান। এই জুটি যখন বিপদজনক হয়ে যাচ্ছিল তখন ত্রাতা হয়ে হাজির হন সাকিব। সাকিবের লেগ স্ট্যাম্পের বল সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে মিরাজের হাতে ক্যাচ দেন মেয়ার্স। ৬৫ বলে ২৭ রান করা মেয়ার্সকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর জিম্বাবুয়ের ইনিংসে আবার আঘাত হানেন সাকিব।

এবার লাইন মিস করে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়ে কোন রান না করেই ফিরে যান টিমিসেন মারুমা। পরের ওভারেই জিম্বাবুয়ের ইনিংসে আবার ধাক্কা দেন পুরো ইনিংস জুড়েই দারুণ বল করা তাসকিন আহমেদ। এই পেসারের ভেতরে ঢোকা বল ছেড়ে দিতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে শূন্য হাতে ফিরে যান রয় কাইয়া।

মাত্র চার রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। ২২৯ রানে ৫ উইকেট হারানোর পর রেগিস চাকাভাকে নিয়ে দলের হাল ধরেন কাইতানো। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ৩২ রান। কিন্তু এই জুটিকে বেশি দূর যেতে দেননি মিরাজ। তৃতীয় সেশনের শুরুর দিকে বল হাতে ধংসযজ্ঞ চালান এই স্পিনার।

মিরাজকে একে একে ফিরিয়ে দেন কাইতানো, ডোনাল্ড টিরিপানো, ভিক্টর নিয়াউচি ও ব্লেসিং মুজারাবানিকে। এরপর সাকিব এনগারাভাকে ফিরিয়ে দিলে ২৭৬ রানে অলআউট হয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশের পক্ষে মিরাজ পাঁচটি ও সাকিব চারটি উইকেট শিকার করেন। বাকি উইকেটটি পেয়েছেন তাসকিন।

প্রথম ইনিংসে ১৯২ রানের লিড পেয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের বাকি ১৭ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ৪৫ রান সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ। সাইফ হাসান ২২ রান করে ও সাদমান ইসলাম ১৭ রান করে অপরাজিত রয়েছেন।

  • সংক্ষিপ্ত স্কোর: (তৃতীয় দিন শেষে)

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৪৬৮/১০ (ওভার: ১২৬; সাদমান- ২৩, সাইফ- ০, শান্ত- ২, মুমিনুল- ৭০, মুশফিকুর- ১১, সাকিব- ৩, মাহমুদউল্লাহ- ১৫০*, লিটন- ৯৫, মিরাজ- ০, তাসকিন- ৭৫; মুজারাবানি- ২৯-৪-৯৪-৪, নিয়াউচি- ১৭-১-৯১-২, টিরিপানো- ২৩-৫-৫৮-২)

দ্বিতীয় ইনিংস: ৪৫/০ (ওভার: ১৭; সাইফ- ২২*, সাদমান- ২০*; মুজারাবানি- ৫-৩-৬-০)

জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংস: ২৭৬/১০ (ওভার: ১১১.৫; শুম্বা- ৪১, কাইতানো- ৮৭, টেইলর- ৮১, মেয়ার্স- ২৭, চাকাভা- ৩১; সাকিব- ৩৪.৫-১০-৮২-৪, মিরাজ- ৩১-৫-৮২-৫, তাসকিন- ২৪-১০-৪৬-১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link