ওয়ানডে সিরিজে মাঠে নামার আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিতে জিম্বাবুয়ে নির্বাচিত একাদশের বিপক্ষে আজ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। প্রস্তুতি ম্যাচে ব্যাটে বলে দাপট দেখিয়ে দারুণ ভাবে নিজেদের প্রস্তুতি সেরেছে সফরকারীরা। বাংলাদেশ জয়ের পথে থাকলেও ম্যাচের দশ ওভার বাকি থাকতেই দুই দলের সম্মতিতে ম্যাচটি ড্র ঘোষণা করা হয়।
তাকাসিঙ্গা স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া প্রস্তুতি ম্যাচে দলের হয়ে একমাত্র হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তামিম ইকবাল। এই ওপেনার ছাড়াও রান পেয়েছেন সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। বল হাতে নিজেদের প্রস্তুতি ভালো ভাবেই সেরেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতরা।
প্রস্তুতি ম্যাচে বল হাতে ভালো করেছেন এবাদত হোসেনও। তবে এই পেসার ওয়ানডে স্কোয়াডে নেই। ব্যাট করলেও বল হাতে দেখা যায়নি সাকিব আল হাসানকে। আর মাত্র পাঁচ বল করে হালকা চোটের কারণে বল করেননি মুস্তাফিজুর রহমান। স্কোয়াডে থাকলেও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন।
পারিবারিক কারণে ঢাকায় চলে আসায় প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেননি মুশফিকুর রহিম। সিরিজের বাকি অংশেও দেখা যাবে না এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে। তাই চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমেছিলেন লিটন দাস। তবে ব্যাট হাতে ব্যর্থ ছিলেন তিনি। লিটনের পরিবর্তে তামিমের সাথে ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি নাঈম শেখও।
নাঈম মন্থর ইনিংস খেললেও তামিম ইকবালের ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পায় টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ। এই ওপেনারের দারুণ ব্যাটিংয়ে উদ্বোধনী জুটিতে ১৭ ওভারে ৮৭ রান তোলে বাংলাদেশ। ৪৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। নাঈম ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। ৫২ বলে ২৫ রান করেন এই ওপেনার।
এই জুটি ভাঙার পরই সফরকারীদের ইনিংসে জোড়া আঘাত হানেন ওয়েস্লি মাধেভেরে। এই পেসারের পরপর দুই ওভারে ফিরে যান তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। তামিম করেন ৬২ বলে ৬৬ রান ও লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৬ বলে ২ রান। ১১৮ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ মিথুন।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে দুই জন যোগ করেন ৭২ রান। তবে উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিব আল হাসান। ৬০ বলে ৩৭ রান করে ফারাজ আকরামের প্রথম শিকার হয়ে ফিরে যান তিনি। সাকিবের বিদায়ের পর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন মিথুন। তবে অন্যদের ব্যাটিংয়ের সুযোগ দিতে বিশ্রাম নেন দুজনই।
৪২ বলে ৩৯ রান করে মাঠ ছাড়েন মিথুন আর মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে ৩৬ রান। এরপর শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতে জিম্বাবুয়ের বোলারদের উপর চওড়া হন নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকতে পারেননি কেউই। ১২ বলে ১৮ রান করে সোহান ও ২৩ বলে ২৮ রান করে বিদায় নেন আফিফ।
দুজনের বিদায়ের পর শেষের দিকে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১০ বলে ১২ ও মেহেদী হাসান মিরাজের ৩ বলে ৫ রানে ভর করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৯৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন ফারাজ আকরাম, ওয়েস্লি মাধেভেরে ও তানাকা চিভাঙ্গা।
২৯৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটাই ভালো হয়নি জিম্বাবুয়ের। দলীয় ২৪ রানে ফিরে যান দুই ওপেনার ওয়েস্লি মাধেভেরে ও তাদিওয়ানাশে মারুমানি। ১৩ বলে ১৪ রান করা মাধেভেরেকে ফিরিয়ে দেন সাইফউদ্দিন আর ৯ বলে ৯ রান করা মারুমানি ফিরে যান শরিফুল ইসলামের প্রথম শিকার হয়ে।
এরপর দলের হাল ধরেন ডিয়ন মেয়ার্স ও চামু চিবাবা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫২ রান যোগ করেন দুজন। এই জুটি যখন স্বাচ্ছন্দ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখনই জোড়া আঘাত হানেন এবাদত হোসেন। এই পেসারের প্রথম শিকার হয়ে ৪২ রান করা মেয়ার্স ফিরে যাওয়ার পর রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান তিনাশে কামুনহুকামওয়ে।
এরপর ১৭ রান করা চিবাবাকে সাইফউদ্দিন ফিরিয়ে দেওয়ার পর মোসাদ্দেকের জোড়া ধাক্কায় বিদায় নেন সিকান্দার রাজা ও রায়ান বার্ল। রাজা করেন ২৪ রান ও বার্লের ব্যাট থেকে আসে ২ রান। ১৩০ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর মারুমার ব্যাটে ঘুঁড়ে দাঁড়ায় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু ৭ উইকেট হারিয়ে ৪০.১ ওভারে ১৮৯ রান করার পরই ম্যাচটি ড্র ঘোষণা করা হয়।
৫৯ বলো ৫৯ রান করে অপরাজিত থাকেন মারুমা। বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, এবাদত হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন শরিফুল ইসলাম।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ২৯৬/১০ (ওভার: ৫০; তামিম- ৬৬, নাঈম- ২৫, লিটন- ২, সাকিব- ৩৭, মোসাদ্দেক- ৩৬ (বিশ্রাম), মিথুন- ৩৯ (বিশ্রাম), সোহান- ১৮, আফিফ- ২৮, সাইফউদ্দিন- ১২*, মিরাজ- ৫*) (মাধেভেরে- ৪-০-১২-২, ফারাজ- ১০-০-৭৩-২, চিভাঙ্গা- ৮-১-৪৪-২)
জিম্বাবুয়ে নির্বাচিত একাদশ: ১৮৯/৭ (ওভার: ৪০.১; চিবাবা- ১৭, মেয়ার্স- ৪২, সিকান্দার- ২৪, মারুমা- ৫৯*) (সাইফউদ্দিন- ৭-০-৩৩-২, মোসাদ্দেক- ৬.১-১-১৬-২, এবাদত- ৭.১-০-৩৭-২)
ফলাফল: ম্যাচ ড্র।