ইংলিশ লিগে দলবদলের মৌসুমটা ইতোমধ্যেই জমে উঠেছে। ম্যানচেস্টারের দুই ক্লাব পাল্লা দিয়ে খেলোয়াড় কিনছে, সাজিয়ে নিচ্ছে নিজেদের স্কোয়াড গুছিয়ে নিয়েছে। সেদিক দিয়ে একটু পিছিয়েই ছিল চেলসি। আগের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিয়েছে দল, সে আনন্দে মার্কেটেই হয়তো আসেনি তারা; এমনটা ভেবেছিলেন অনেকেই।
কিন্তু যত শেষ গড়িয়ে আসছে তত জোড়ালো হচ্ছে রিউমার। থমাস টুখেল তার ‘নিয়ার পারফেক্ট’ দলের স্ট্রাইকার খুঁজে পেয়েছেন। নামটা শুধু চেলসি নয়, ইংলিশ লিগের দর্শকদের কাছে খুব পরিচিত। গত মৌসুম আর ইউরো কাঁপানো রোমেলু লুকাকুকে দলে ভেড়াচ্ছে লন্ডন ব্লুজরা।
নিজেদের খেলোয়াড়কেই আবার কিনে আনার প্রচেষ্টা করছে চেলসি। চেলসির কাছে লুকাকু নামটা খুব একটা অপরিচত নয়। কাগজে কলমে এই দলেই চার বছর কাটিয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু সর্বসাকল্যে খেলার সুযোগ হয়েছে মাত্র ১৫ বার। গোলের দেখা পাননি। চেলসির লোনে সিস্টেমে হুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত বিক্রিই হয়ে গিয়েছেন তিনি।
কিন্তু সময়ের চাকা ঘুরতে ঘুরতে আবারও সেই পুরাতন, নিজের ড্রিম ক্লাবে পদার্পন করতে যাচ্ছেন লুকাকু। ৯৮ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে লুকাকুর চেলসিতে ফেরত আসা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সেদিক দিয়ে প্রশ্নও জমা হচ্ছে। কেন লুকাকু? খেলোয়াড় হিসেবে তার মান নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু মার্কেটে যখন এত এত স্ট্রাইকার, তখন লুকাকুকেই কেন বেছে নেওয়া হছে?
সত্যি বলতে এই ট্রান্সফারটা চেলসির বড্ড প্রয়োজন। গত মৌসুমে তাদের স্ট্রাইকে ভরসা ছিল টিমো ভের্নার। খেলোয়াড় হিসেবে তার মানের ধারে কাছেও যেতে পারেননি তিনি। কারনটা নিজেই বলেছেন, জার্মান লিগে এমন ফিজিক্যাল ফুটবল তিনি আগে খেলেননি। ফলে কোচ থমাস টুখেলের সিস্টেমে দরকার ছিল একজন ফিজিক্যাল স্ট্রাইকারের। যার কাছ থেকে প্রতি মৌসুমে কম করে হলেও ১৫ গোল পাওয়া যাবেই। এবং সেটা কোনো ছোটখাটো নাম দিতে পারবে না।
কিন্তু মার্কেটের সব বড় নামই কারো না কারো পকেতে। হ্যারি কেন সিটি রাইভাল, দল ছাড়ছেন না। লেওয়ান্ডস্কিও ছাড়বেন ছাড়বেন করে বায়ার্নেই রয়ে গিয়েছেন, বহু চেষ্টা করেও আর্লিং হাল্যান্ডকে ছাড়ানো সম্ভব হয়নি বুরুশিয়া। ফলে নিজেদের পুরান খেলোয়াড়ের কাছেই ফিরতে হয়েছে চেলসিকে।
অন্যদিকে লুকাকুর অবস্থানও খুব একটা ভালো না। মৌসুম শেষে ইন্টারের অবস্থা এতটাও খারাপ ছিল না। কিন্তু আগামী কয়েক মাসের মধ্যে বিশাল অঙ্কের দেনা শোধ করতে হবে; সে চিন্তা মাথায় রেখে পুরো ক্লাবের বড় বড় সকল খেলোয়াড়কেই ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের। যদিও লুকাকু বলেছিলেন যে তিনি ক্লাবের যেরকম অবস্থাই হোক না কেন, তিনি ছাড়বেন না ক্লাব। কিকন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও বুঝতে পেরেছেন, তার ক্লাব ছাড়াটাই ক্লাবের জন্য ভালো।
অন্যদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগে জেতার পর চেলসির লক্ষ্যও এখন লিগে। অনেক বছর হয়ে গিয়েছে ইংলিশ লিগে সাফল্য আসে না চেলসির। ট্রফি, নইলে কোচকে বরখাস্ত; এই নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে দলে ধারাবাহিকতাও আসেনি খুব একটা। দলের অবস্থান ভালো, থমাস টুখেলও দলকে সাজিয়ে নিয়েছেন, সব মিলিয়তে দলের সুসময় চলছে। এমন সময় যদি লিগ শিরোপার জন্য লড়াই করতে না পারেন, তবে করবেন কোন সময়?
গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ বিশাল অঙ্কের টাকা পেতেছে চেলসি। যার বড় একটা অংশ তারা কাজে লাগাতে পারছে মার্কেটে। যদিও তারা চেষ্টা করছে বুক ব্যালেন্স করার। এর আগেও বুক ব্যালেন্স না করতে পারার এফএফপির খড়গ পড়েছিল তাদের মাথায়। এবার আর সে ভুল করতে চায় না।
তাদের ইচ্ছে লুকাকুর পুরো অর্থটাই তারা খেলোয়াড় বিক্রি দিয়ে তুলে আনবে। ট্যামি আব্রাহাম, কার্ট জুমা, মার্কোস অলোন্সো, ডেভিড জাপাকোস্তা, বাকায়োকো, ড্রিংকওয়াটার, কেনেডি; সকলকে বিক্রি করে দিয়ে সে অর্থটা কাজে লাগাতে চাইছে তারা লুকাকুর পেছনে।
সব ঠিক ঠাক থাকলে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই লুকাকু নাম লেখাতে পারেন নিজের স্বপ্নের দলে। আগের যাত্রাটা ভালো হয়নি তার। এবারের যাত্রায় নিজের স্বপ্নের ক্লাবে মানিয়ে নিতে পারবেন তো লুকাকু?