টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটকে বলা হয় ব্যাটসম্যানদের খেলা। এখানে বয়ে যাওয়া চার-ছক্কার বন্যা দেখতেই বেশি পছন্দ করে দর্শকরা। প্রায় প্রতিটি বলকেই যেনো সীমানা পাড় করার খেলাইয় মেতে উঠেন বোলাররা। অনেক রান করার জন্য এই ফরম্যাটে প্রায়ই ব্যাটসম্যানদের দেখা যায় নতুন সব শট আবিষ্কার করতে। ব্যাটসম্যানদের ব্যাকরণের বাইরে গিয়ে এই ব্যাটিংটাই মূলত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার মূল কারণ।
ফলে বোলারদের জন্য টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেনো শুধুই অসহায়ত্ব দেখানোর জায়গা। তবে এই ফরম্যাটেও কিছু বোলার আছেন যারা তাঁদের বোলিং বৈচিত্র দিয়ে ব্যাটসম্যানদের উপর রাজত্ব করেছেন। ব্যাটসম্যানদের বিধ্বংসী যাত্রাকে কখনো কখনো থমকে দিয়েছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা সেই বোলারদের নিয়েই আজকের এই তালিকা।
- লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)
সাদা বলের ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার অন্যতম সেরা পেস বোলার লাসিথ মালিঙ্গা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে পুরো বিশ্বের ব্যাটসম্যানদের জন্যই তিনি যে এক ভয়ানক নাম। তাঁর নিখুঁত সব ইয়োর্কার ফেরাবে ব্যাটসম্যানের সেই সাধ্য কই। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ গুলোতেও তাই তাঁকে নিয়ে এক সময় তুমুল দর কষাকষি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এই মুহূর্তে তিনিই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। এই ফরম্যাটে এখন অবধি ৮৩ টি ম্যাচ খেলা মালিঙ্গার ঝুলিতে আছে ১০৭ উইকেট। মাত্র ২০.৭৯ বোলিং গড়ে এই ১০৭ টি উইকেট নেন তিনি। তাঁর ইকোনমি রেটও মাত্র ৭.৪২। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দুইবার পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে এই পেসারের।
- সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির নাম সাকিব আল হাসান। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৭ উইকেট নিয়ে এখন তাঁর ঝুলিতে আছে ১০২ উইকেট। ৮৩ ম্যাচে ২০.৬৩ বোলিং গড়ে এই উইকেট নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের হয়ে বাঁহাতি এই স্পিনার প্রায়ই পাওয়ার প্লেতে বল করলেও তাঁর ইকোনমি রেট (৬.৮০) যেনো অবিশ্বাস্য।
এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা এই অলরাউন্ডারের ঝুলিতে ১০২ উইকেটের পাশাপাশি ১৭১৮ রানও আছে। বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০ উইকেট ও ১০০০ রানের মালিক তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে তিনিই এই ফরম্যাটে সর্বোচ্চ উইকেট ও সর্বোচ্চ রানের মালিক।
- টিম সাউদি (নিউজিল্যান্ড)
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিউজিল্যান্ড ও বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেসারদের একজন টিম সাউদি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কিংবা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ দুটিতেই আগুন ঝড়াচ্ছেন সমানতালে। ফলে মালিঙ্গা, সাকিবদের সাথে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের দৌড়ে তিনিও খুব ভালো ভাবেই আছেন।
এখন অবধি নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলা ৮১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ৯৯ টি উইকেট। টিম সাউদির বোলিং গড় ২৫.১৭। এছাড়া এই ফরম্যাটে তাঁর ইকোনমি রেট ৮.৩৯। একবার ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে সাউদির ঝুলিতে।
- শহীদ আফ্রিদি (পাকিস্তান)
পাকিস্তান ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার শহীদ আফ্রিদি। তাঁর বিধ্বংসী ব্যাটিং এর পাসজাপাশি কার্যকর লেগ স্পিন দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির এই তালিকায়।
পাকিস্তানের হয়ে খেলা ৯৭ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৪.৪৪ গড়ে তাঁর ঝুলিতে আছে ৯৮ উইকেট। অল্পের জন্য সেঞ্চুরির মাইলফলক ছুঁতে পারেননি সাবেক এই পাকিস্তানি অধিনায়ক। এই ফরম্যাটে তাঁর ইকোনমি রেটও (৬.৬৩) দারুণ প্রশংসনীয়। এই ফরম্যাটে তিনবার চার উইকেট নেয়ার কীর্তিও আছে বুম বুম আফ্রিদির।
- রশিদ খান (আফগানিস্তান)
আফগানিস্তান ক্রিকেটের মহাতারকা রশিদ খান। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ গুলোতে এই খ্যাতনামা লেগ স্পিনারকে নিয়ে রীতিমত মারামারি হয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে কার্যকরী বোলারও তিনি।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সেরা ও সফলতম বোলারও তিনি। এই তালিকা পঞ্চম অবস্থানে থাকলেও রশিদ খান ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৫১ টি। অথচ এতেই তাঁর ঝুলিতে আছে ৯৫ টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি উইকেট। এই লেগ স্পিনারের বোলিং গড় মাত্র ১২.৬৩ এবং ইকোনমি রেট ৬.২১। এই সংখ্যা গুলোই প্রমাণ করে কেন তিনি এই ফরম্যাটের সেরা। খুব দ্রুতই হয়তো সাকিব, মালিঙ্গাদের উইকেট সংখ্যায় ছাড়িয়ে যাবার সুযোগ আছে এই তারকা স্পিনারের।