ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর নাম নিয়ে সাংবাদিকদেরও খটকা লাগতো। লাগাটাই স্বাভাবিক। ‘মাসুম’ দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হওয়াদের জন্য হঠাৎ ‘নাসুম’ নামের কারো সাথে পরিচিত হওয়াটা বিস্ময়করই। সেই নাসুমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুটা সাদামাটাই। অথচ, সময়ের সাথে সাথে অন্তত দেশের মাটিতে তিনি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন। বারবার যেন তাঁর পারফরম্যান্সগুলো বলছে – ‘মাসুম’ বোলার নন নন!
এইতো এক সিরিজ আগেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ ওভারে ৩৭ রান নিয়ে প্রশ্ন উঠে নাসুম আহমেদের সামর্থ্যে নিয়ে। পরের অস্ট্রেলিয়া সিরিজেই নজরকাঁড়া বোলিং দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে জায়গাটা অনেকটাই পাঁকা করে নিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুর্দান্ত সিরিজ পার করার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও নিজের স্পিন ভেলকিতে মাত দিচ্ছেন ব্যাটসম্যানদের। আর সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ ম্যাচেও।
সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে মিরপুরে নাসুমের ঘূর্ণিতে দিশেহারা নিউজিল্যান্ড শিবির। টসে হেরে বোলিংয়ে উড়ন্ত সূচনা করেন নাসুম। ইনিংসের প্রথম ওভারেই রাচিন রবীন্দ্রকে তুলে নিয়ে প্রথম ওভারেই উইকেট মেইডেন পান তিনি। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরেক ওপেনার ফিন অ্যালেনকে নিজের শিকার বানান তিনি। ওই ওভারে ৬ রানে নেন ১ উইকেট। নিজের করা প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে দুই উইকেট শিকার করেন নাসুম।
এরপর দলীয় ১০ম ওভারে আবারো নাসুমের হাতে বল তুলে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওই ওভার থেকে নাসুম দেন মাত্র ৪ রান! এরপর নিজের স্পেলের শেষ ওভার করতে এসে সেই স্পিন বিষে আরো দুই ব্যাটসম্যানকে তুলে নেন নাসুম। শেষ ওভারে ডাবল উইকেট মেইডেন দেন তিনি। নাসুমের স্পিন ঘূর্ণি যেনো ব্ল্যাক ক্যাপসের জন্য বিষ হয়ে দাঁড়ায়।
চার ওভারের ছোট্ট স্পেলেই দুই মেইডেন দিয়ে চার উইকেট শিকার করে ইতিমধ্যেই দলের সেরা বোলিং পারফরম্যান্স করেছেন নাসুম। তাঁর স্পিন বিষেই কুপোকাত হয় নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা। চার উইকেট নিয়ে ইনিংসের মাঝ পথেই কিউইদের ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন নাসুম। নাসুমের অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচে ব্যাকফুটে চলে যায় নিউজিল্যান্ড।
এর আগে ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নাজমুল ইসলাম অপু এক ম্যাচে দুই মেইডেন দেন। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে দুই মেইডেন ওভার করার কীর্তি গড়লেন নাসুম আহমেদ। নিউজিল্যান্ড যে মাত্র ৯৩ রানে অলআউট হল তাতে মুস্তাফিজুর রহমানের সাথে বড় অবদান এই নাসুমের।
সবশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ ম্যাচে ৫.১১ ইকোনমিতে ১৮ ওভারে ৯২ রানে ৮ উইকেট শিকার করেছিলেন নাসুম। সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ এবং ওভারঅল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি সিরিজে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে ১৩ ওভারে ৫২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
আগের তিন ম্যাচে মোটে ২ উইকেট নিলেও মাত্র ৪ ইকোনমি রেটে বল করেন তিনি! অজিদের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৪ উইকেট শিকারের পর ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টিতে চার উইকেট নেন নাসুম।
খুব বেশি আগের কথা নয়, যখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা বলেছিলেন নাসুম। সেই হতাশা এখন উবে গেছে। নাসুমের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আর নাসুমে ভর করে – স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ।