ফুটবলের এলিট অ্যাকাডেমি!

দেশের ফুটবলের অভিবাবক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নিজস্ব তত্ত্বাবধানে তৃতীয় ফুটবল অ্যাকাডেমি চালু করা হয়েছে। যদিও খেলোয়াড়দের নিয়ে অনুশীলনের কাজটি গত ১৬ আগষ্ট থেকে শুরু হয়েছে। এবার আনুষ্ঠানিকভাবে নামের সাথে ’এলিট’ যোগ করে ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল উদ্বোধন করেন।

কিন্তু, সাদামাটা অ্যাকাডেমির সাথে এলিট নাম যোগ করায় নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বাফুফে সভাপতি কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। এর আগেও দুইবার দেশের দুই জায়গায় দুটি অ্যাকাডেমি চালু করেছিল। ৫ জন মন্ত্রী ও একাধিক এমপিকে নিয়ে বিভাগীয় শহর সিলেট নগরীর উপকণ্ঠে খাদিমনগরে বিকেএসপি মাঠে ৪০ জন ফুটবলারদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল বাফুফের প্রথম ফুটবল অ্যাকাডেমির।

এক বছরের কম সময়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এর ঠিক পাঁচ বছর পর ২০১৯ সালে বাফুফের আরেকটি উদ্যোগ নেয়। বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ফর্টিস গ্রুপের সঙ্গে পার্টনারশিপে অ্যাকাডেমি চালু হলেও পরে নানা সমস্যার কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়। দুই দফা হোচট খেয়ে এবার তৃতীয় দফায় আরও একটি অ্যাকাডেমির যাত্রা শুরু হলো এবার।

রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে নবরুপেরর এই পথচলা। তার আগে বেশ কয়েকমাস সময় নিয়ে স্টেডিয়ামটির সংস্কার কাজ করে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। স্টেডিয়ামের ভেতরে পুরনো আর ব্যবহার অনুপযোগী কক্ষগুলো থাকার উপযোগী করা হয়েছে। সেখানেই অনূর্ধ্ব ১৫ বয়সী ৫১ জন ফুটবলারকে নিয়ে অনুশীলন শুরু করা হয়েছে।

শোকের মাস আগস্টের কারণে গত মাসে আর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেনি বাফুফে। বাংলাদেশে ফুটবল উন্মাদনা থাকলেও ক্লাব কিংবা ফেডারেশন উভয় পক্ষই অ্যাকাডেমি তৈরির ক্ষেত্রে উদাসীন রয়েছে। বাফুফে সভাপতি হিসেবে কাজী সালাউদ্দিন ২০০৮ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হওয়ার পর ফুটবলপ্রেমীদের একাডেমী গড়ার স্বপ্ন দেখান।
তবে এবার নাম নিয়ে কিছুটা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। ‘এলিট’ শব্দের আরেক নাম অভিজাত।

অভিজাত একটি অ্যাকাডেমিতে খেলোয়াড়দের আবাসনের পাশাপাশি অনুশীলনের সব রকমের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ক্রিকেটেও একাডেমীর সাথে ‘এলিট’ শব্দ জুড়ে দিতে দেখা যায়নি। জিম, সুইমিংপুল থাকতেই হতো। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবকিছুরই ব্যবস্থা সেখানে থাকবে। পাশাপাশি খেলোয়াড় তৈরির প্রক্রিয়াটাও আধুনিক ও ধারাবাহিক হতে হবে। কিন্তু কমলাপুরে মাঠ আর কোনোরকমে থাকার ব্যবস্থা ছাড়া যে আর কিছুই যে নেই! এভাবে কিছু কিশোরের নামমাত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেই ‘এলিট অ্যাকাডেমি’ নাম দেয়া কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চারিদিকে।

এর চেয়ে অধিক সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বাফুফে আগে চালু করা অ্যাকাডেমির নামের সঙ্গে ‘এলিট’ শব্দটি যোগ করেনি। এবার এলিট শব্দ যোগ করার কারণ প্রসঙ্গে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘এই অ্যাকাডেমিতে মূলত দেশি- বিদেশি কোচিং স্টাফ থাকবে। পাশাপাশি বিদেশেও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। দেশব্যাপী অন্বেষণ করে আনা হয়েছে এদের। সে কারণেই এলিট শব্দটি যোগ করা হয়েছে।’

কাজী সালাউদ্দিনের এই ব্যাখ্যা এলিটের সঙ্গে কতটা যাচ্ছে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ এর আগে চালু করা দুই অ্যাকাডেমিতেও বিদেশি কোচি স্টাফ ছিলেন। তখনও প্রতিভা অন্বেষণের মাধ্যমে কিশোর ফুটবলারদের সারা দেশ থেকে বাছাই করে আনা হয়েছিল। এখন বাফুফে এই একাডেমীটি পরিচালিত করতে পারবে কিনা সেটি আর্থিক জোগানের ওপর নির্ভর করছে।

অর্থের বিষয়টি নিয়ে বাফুফে কাজ করছে বলে জানা গেছে। যদিও আগের দুইবার অর্থের বিষয়ে প্রায় একই রকম উত্তর দিয়েছিলেন বাফুফে সভাপতি। তবে এবার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সহায়তার বিষয়টি নিয়ে বলেন, ‘আশা করি এখান থেকে ভালো মানের ফুটবলার আসবে। আমরা বাফুফেকে সর্বাত্মক সহায়তা করবো।’

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগেই অনেকটা নতুন রুপ পেয়েছে কমলাপুর ষ্টেডিয়াম। ভেতরে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে সর্বত্র অনেক নতুনত্বের ছাপ। গ্যালারি, হসপিটালিটি বক্স, প্রেসবক্স, পূর্ব পাশে সুবিশাল জায়ান্ট স্কিন, পরিচ্ছন্ন ঝকঝকে টার্ফ এবং অন্যান্য স্থাপনায় নতুনত্বের ছোঁয়ায় অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। যদিও এর সবই বাফুফে নয় করে দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।

সবকিছুই হয়েছে বাফুফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে। বাফুফে সুত্রে আরও জানা গেছে, আগের যে একাডেমীগুলো শুরু করেও শেষ পর্যন্ত চালু রাখা যায়নি, সেখান থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছে। সময় সবসময় এক রকম থাকেনা, পরিবর্তন আসে, আর অনেক কিছু বদলে যায়। এই বদলে যাওয়ার হাওয়ায় ভেসেই নতুন স্বপ্ন নিয়ে ফুটবল অ্যাকাডেমি শুরু করেছে বাফুফে।

তবে স্টেডিয়ামে কোন ক্যান্টিন থাকবেনা বলে জানা গেছে। বাইরের হোটেল থেকে খেলোয়াড়দের জন্য খাবার সরবরাহ করা হবে, যাতে করে সআবস্থ্যঝুকিতে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ফুটবলের সাথে সংশ্লিদের মত। আপাতত এ অ্যাকাডেমিতে দেশের পাঁচজন প্রশিক্ষক সার্বক্ষনিক নিয়োজিত থাকবেন।

এদিকে এই অ্যাকাডেমি চালুর পর আরও চালু করার কথা বলে বাফুফে সভাপতি জানিয়েছেন, ’এই অ্যাকাডেমি চালুর মধ্যদিয়ে নতুন যুগের সূচনা হলো। আমরা জানি, একটা অ্যাকাডেমি দিয়ে আমাদের ফুটবলের খুব বেশি উন্নয়ন হবেনা। আমি যতদুর জানি চীন গত বছর ৩০০টা একাডেমি চালু করেছে। চীনের মতো আর্থিকভাবে শক্তিশালী হলে আমিও একাধিক একাডেমী চালু করতাম। তবে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আগামী দুই বছরের মধ্যে পাঁচ থেকে সাতটি একাডেমী করব। যাতে করে জাতীয় দলের পাইপ লাইনে খেলোয়াড় পেতে কোন সমস্যা না হয়।’

কিন্তু, বাফুফে পরিচালিত এই অ্যাকাডেমি কতদিন স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হয় সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link