বর্তমানে বাংলাদেশের এক নাম্বার ডিফেন্ডার হিসেবে কারো নাম উঠলে সেখানে সবার উপরে থাকবে তপু বর্মনের নাম। বসুন্ধরা কিংসের এই অধিনায়ক জাতীয় দলে নিয়মিত মুখও। জাতীয় দলের পাশাপাশি ক্লাব দলের হয়ে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের ফল পেতে চলেছেন নারায়নগঞ্জ থেকে উঠে আসা তপু। বাংলাদেশ জাতীয় দল ও বসুন্ধরা কিংসের রক্ষনভাগের নির্ভরযোগ্য এই সৈনিকের উপর নজর পড়েছে ভারতীয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (আইএসএল) দল নর্থ ইস্ট ইউনাইটেডের।
সর্বশেষ আসরে প্লে-অফ (সেমিফাইনাল) খেলা দলটির কুয়েতে জন্ম নেওয়া ভারতীয় কোচ খালিদ জামিল সরাসরি তপুকে ১৯ নভেম্বর থেকে শুরু জমজমাট প্রতিযোগিতায় নিজের দলে খেলার প্রস্তাব দিয়েছেন। গত জুনে জাতীয় দলের হয়ে কাতারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে অসাধারণ এক গোল করেছিলেন তপু বর্মণ।
আলোচিত গোলের সেই ম্যাচের পরই গত নর্থ ইস্টের কোচ খালিদ জামিল তার সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ করেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশী এই ডিফেন্ডার। গত মৌসুমের মাঝপথে নর্থ ইস্ট দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভারতের জার্সিতে ১১ ম্যাচ খেলা সাবেক এই মিডফিল্ডার। তারপর থেকেই দক্ষিন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে খেলা খেলোয়াড়দের উপর নজর পড়ে তার। আর দায়িত্ব নিয়েই প্রথম ভারতীয় কোচ হিসেবে দলকে প্লে-অফে তুলে চমক দেন। এএফসি কাপ ও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তপুর পারফরম্যান্স ছিল চোঁখে পড়ার মতো। এই পারফরম্যান্সগুলোই মূলত কোচ খালিদকে তপুর ওপর আকর্ষণটা বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুন।
সে কারণেই এখন আইএসএলে তার খেলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়ে তপু বর্মন বলেন, ‘আমি আইএসএলে খেলা প্রস্তাব পেয়েছি সরাসরি কোচের কাছ থেকে। প্রস্তাবটা আমার কাছে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। কোচ সরাসরিই বলেছেন, বাংলাদেশে খেলে যা পাই তার চেয়ে অনেক বেশি দেবেন। আমি তাকে বলেছি, আমি বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে মৌখিকভাবে চুক্তিবদ্ধ রয়েছি। তিনি সময় বিষয় ভেবে নিয়ে চিন্তা করে জানাতে বলেছেন।’
শুধু আইএসএল নয়, কাতার দ্বিতীয় বিভাগের একটি দলে খেলার প্রস্তাবও মালেতে বসেই পেয়েছেন তপু। মাসে ১০ হাজার ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে ২০২২ বিশ্বকাপ আয়োজক দেশটির ক্লাব। তবে বেতন আলোচনার মাধ্যমে বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে এজেন্ট। তপু অবশ্য কাতারের দ্বিতীয় বিভাগের চেয়ে ভারতের আইএসএল নিয়ে আগ্রহটা বেশি বলে জানিয়েছেন। নিয়মিত খেলার সুযোগ পাওয়াটাকেই বড় করে দেখছেন এই তারকা ডিফেন্ডার।
তার কাছে বিগত দিনের অভিজ্ঞতাটাকে সামনে টেনে এনেছেন, ’আগে মামুনুল ইসলাম মামুন ভাইকে অ্যাটলেটিকো ডি কলকাতা নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রেখেছিল। আমি নর্থইস্টের কোচের কাছে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাব কি না সেটি পরিস্কারভাবে জানতে চেয়েছি। তিনি আমাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তাছাড়া বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গেও ক্লাব বদল নিয়ে প্রথমে আমার কথা বলতে হবে। কারণ আমি তাদের কথা দিয়েছি, আমি আগামী মৌসুম তাদের হয়ে খেলব।’
এদিকে ঢাকার ফুটবলে গুঞ্জন রয়েছে, এরই মধ্যে বসুন্ধরা কিংস তপুকে এবার রেকর্ড অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। এর সঙ্গে দেশসেরা দলটির অধিনায়কত্বও করার প্রস্তাব রয়েছে। এসব ছাপিয়ে আইএসএল-এ খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা মোটেও সহজ নয় তার কাছে। যদিও পেশাদার ফুটবলার হিসেবে তিনি অনেকটা পরিস্কারভাবে জানিয়েছেন, ‘যেখানে সুযোগ সুবিধা বেশি পাবেন এবং যেখানে খেলার সুযোগও নিয়মিত থাকবে, সেখানেই তিনি খেলার সিদ্বান্ত নেবেন।’
তপু নর্থইস্টের প্রস্তাবে যদি সম্মত হয় মামুনুলের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে খেলবেন আইএসএল-এ। তবে গত মৌসুমে ধারে বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া খেলেছেন আই-লিগের দল কলকাতা মোহামেডানে খেলেছিলেন। সেবার বাংলাদেশী ক্লাব সাফ স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড থেকে ধারে ভারতীয় ক্লাবটিতে খেলতে গিয়েছিলেন। সেখানে দেশের মান রেখেছিলেন জাতীয় দলের এই অধিনায়ক।
আইএসএলে খেলার প্রস্তাব পাওয়ার পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে দেশে ফেরে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। এই ব্যর্থতার মাঝেও বড় সুখবর পেয়েছেন ডিফেন্ডার তপু বর্মণ। ২০১৪ সালে যশোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে অভিষেক হয় তপুর। এরপর টানা সাত বছর ধরে জাতীয় দলের হয়ে ৫০টির বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই ডিফেন্ডার।
দলের রক্ষণভাগ সামলানোর পাশাপাশি পাঁচটি গোলও করেছেন তিনি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দারুণ এক গোল করে দলকে এক পয়েন্ট পাইয়ে দিয়েছিলেন এই ফুটবলার। সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলেছেন এই তারকা ডিফেন্ডার। তার পেলান্টি গোলেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসরে একমাত্র জয় পায় বাংলাদেশ।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ক্লাব নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড। কোচ হিসেবে গত মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে দলটির দায়িত্ব নেন খালিদ জামিল। হাঁটুর চোটের কারণে মাত্র ৩২ বছর বয়সে মাঠের ফুটবল ছেড়ে কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। টানা ছয়টি মৌসুম মুম্বাই এফসিতে থাকার পরে যোগ দেন মিজোরাম আইজল এফসিতে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে অভিষেকের পর একঝাঁক তরুণ ও অখ্যাত ফুটবলারকে নিয়ে দলকে আই লিগে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন খালিদ।
ভারতীয় জাতীয় দল থেকে ক্লাব ফুটবল, সর্বত্রই রয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ফুটবলারদের দাপট। অথচ সর্বভারতীয় আসরগুলোতে সেভাবে এই অঞ্চলের ক্লাবের সাফল্য চোঁখে পড়ার মতো নয়। আইজলকে আই লিগ জিতিয়ে সেদিন খালিদ শুধু ইতিহাস গড়েননি, পাশাপাশি প্রমাণ করেছিলেন পরিকল্পনা নিখুঁত হলে যেকোনো ক্লাবকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সেই দর্শন নিয়েই প্রথম ভারতীয় কোচ হিসেবে নর্থ ইস্টকে আইএসএলের সেমেফিাইনালে তুলেছিলেন তিনি। এবার শিরোপায় চোখ রেখেই দলটাকে সাজাতে চাইছেন খালিদ। এ কারণেই ব্যাকলাইন শক্তিশালী করতে তপুকে দলে ভেরাতে চাইছেন কুয়েতে জন্ম নেয়া এই ভারতীয় কোচ।