জীবনের সাথে তাঁর লড়াইটা অনেক আগে থেকেই। সেই ছোটবেলা থেকেই নানারকম বাঁধার সাথে লড়াই করে আসছেন। মাত্র ১৬ বছয় বয়সে ক্যান্সার যখন বলেছিল তুমি আর খেলতে পারবেনা, ওয়েড তখন রোগটাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিলেন। এরপর চোখ দুটোও ঠিক করে রঙ চিনতে পারেনা, সেটাও ম্যাথু ওয়েড থোরাই কেয়ার করেন। এবার যখন নিজের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নটা উঠলো তখনো জবাবটা দিলেন একজন প্রকৃত লড়াকুর মতই।
অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া রাজ্যের হোবার্ট শহরে বেড়ে উঠেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলার। তিনি তাসমানীয়া ফুটবল লিগেও খেলেছেন। এছাড়া তাঁর দাদা ছিলেন হোবার্ট ফুটবল ক্লাবের সভাপতি। ওদিকে ম্যাথু ওয়েডও ছোটবেলায় যাত্রাটা ফুটবল দিয়েই শুরু করেছিলেন। তবে হঠাতই একদিন পায়ের কুঁচকিতে বল লেগে ব্যাথা পান।
সেটা নিয়ে হাসপাতালে গেলে নানারকম পরীক্ষা করা হয়। এসব করতে গিয়ে বেড়িয়ে আসে ১৬ বছর বয়সী ম্যাথু ওয়েড টেস্টিকুলার ক্যান্সারে আক্রান্ত। সেই থেকেই লড়াইটা শুরু হয়। কেমোথেরাপি নিতে থাকেন। যে করেই হোক ক্যান্সারকে জয় করা চাই। ঠিকই ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে আবার ফিরে আসলেন ম্যাথু ওয়েড।
তবে পেশাদার খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্নে বড় এক বাঁধা হয়ে থাকে এই ক্যান্সার। তবুও জীবনটাকে উপভোগ করার জন্য খেলাটা চালিয়ে যান। তখন অবশ্য রুলস ফুটবল ছেড়ে ক্রিকেটেই বেশি মনোযোগী ওয়েড। আস্তে আস্তে এবার তাসমানীয় ক্রিকেট দলেও জায়গা করে নিলেন। তবে সেই দলে আরেক উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান টিম পেইন থাকায় পাড়ি জমান ভিক্টোরিয়া রাজ্যে। সেখান থেকেই শুরু ওয়েডের পেশাদার ক্রিকেট যাত্রা।
শেষ পর্যন্ত ২০১১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নাম লেখান। সময়ের হিসেবে প্রায় ১০ বছরের লম্বা ক্যারিয়ার। টি-টোয়েন্টিও একেবারে কম খেলননি, অজিদের হয়ে খেলেছেন ৫৪ টি ম্যাচ। তবুও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে খুব বড় কোন নায়ক ছিলেন না। তবে তাঁর লড়াইটা সবাই জানতো, তাঁর জিততে পারার ক্ষমতায় সবাই বিশ্বাস করতো।
গত তিন বছরে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে অন্যতম সেরা পারফর্মার তিনি। টপ অর্ডারে ব্যাটিং করে ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইকরেট দুটোই ধরে রেখেছেন। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ফলটা পাওয়া যাচ্ছিল না। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে শেষ ১৫ ম্যাচেও কোন হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ফলে তাঁর বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাওয়া নিয়েও নানা বিতর্ক ছিল।
তবে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান ওয়েডকে অস্ট্রেলিয়া এবার দেখতে চাইলো ভিন্ন রূপে। বিশ্বকাপে তাঁকে বিবেচনা করা হলো ফিনিশার হিসেবে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সেই যোগ্যতার খানিক পরিচয় দিলেন। লো স্কোরিং সেই ম্যাচে ১০ বলে ১৫ রান করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। তবে এরপর আবার সেই চেনা রূপে। নিজেকে যেনোব হারিয়ে খুঁজছিলেন।
উড়তে থাকা পাকিস্তানের বিপক্ষে সেমিফাইনালে যখন একাদশে সুযোগ পেলে তখন তিনি বুঝে গেছেন এটাই হয়তো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তাঁর সুযোগ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে টিকিয়ে রাখার শেষ মঞ্চ। আরেকবার দেয়ালে পিঠ ঠেকলো ম্যাথু ওয়েডের জীবনে। অন্য কেউ হলে হয়তো শেষ দেখতেন, তবে ওয়েডের কাছে স্রেফ আরেকটা লড়াই।
এবারো লড়াইটা করলেন ওয়েড। নিজে জিতলেন, জেতালেন অজিদেরও। আরেকবার প্রমাণ করলেন অজিরা হারার আগে হার মানেনা। বর্ণান্ধ্য হওয়ার কারণে অনেক সময় বিভিন্ন রঙের বল দেখতে অসুবিধা হবার কারণেও তিনি হার মানেননি। ক্যান্সার, কেমো থেরাপি, হসপিটালের বেডে শুয়ে কাটানো কত রাতও তাঁকে থামাতে পারেনি। আর ক্রিকেট তো ওয়েডের লড়াই করার প্রিয় মঞ্চ। এখানে তো তিনি জিতবেনই।