বাঞ্চ অব জোকার্স

ভারত কবে শেষ টেস্ট খেলেছিল মনে পড়ছে? নাহ, খুব বেশিদিন পেছনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এই মাস দুয়েক পিছিয়ে গেলেই চলবে, ভারতের ইংল্যান্ড সফরে কেনিংটন ওভালে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ। দুই সেপ্টেম্বরের এক সকালে বিরাট কোহলি আবারও টসে হেরেছেন, এবং ইংল্যান্ড ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়েছে। ১১৭ রানের মধ্যেই রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, চেতেশ্বর পুজারা, আজিঙ্কা রাহানে, রবীন্দ্র জাদেজার মত রথী মহারথীরা প্যাভিলিয়নের রাস্তা দেখেছেন।

ওভাল টেস্টে ভারতকে বাঁচাতে পারে তখন বোধহয় একমাত্র ভগবানই, আগের টেস্টেই ৭৮ অলআউটের মত কোনো লজ্জা আবারও কী ফিরে আসবে এরকমই ভাবনা যখন ফিরে ফিরে আসছে সেই সময়ই প্যাভিলিয়ন থেকে বেরিয়ে এলেন এক মুম্বাইকর – শার্দুল ঠাকুর। তারপর ঘন্টাখানেক যেটা ঘটলো ওভালের বাইশগজে, তার জন্য ইংল্যান্ড নির্ঘাত প্রস্তুত ছিল না। ১৯০ রানে ভারতের যখন অষ্টম উইকেটের পতন ঘটলো ঠাকুরের নামের পাশে ৩৬ বলে ৫৭, গোটা সাতেক বাউন্ডারি আর পেল্লায় তিনটে ওভার বাউন্ডারি সমেত।

ইংরেজদের ব্যাটিংয়ের প্রথম ইনিংসে শার্দুলের ফাস্ট মিডিয়াম বোলিংয়ে এলো ৮১ রান করা ওলি পোপের অতি মূল্যবান একখানা উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় ব্যাটিং দারুণ শুরু করার পরে লিডটাকে ইংরেজদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য শার্দুলের ব্যাট থেকে আবারও এলো অত্যন্ত দামি ৭২ বলে ৬০ রানের একটা ইনিংস।

৩৬৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ইংরেজ ওপেনাররা এবার ওভালের বাইশ গজে ঘর সংসার পেতে বসেছেন, এমন সময়েই ররি বার্নসকে ফেরানোর জন্য ডাক পড়লো আবারও ঠাকুরের, এবারেও হতাশ করলেন না তিনি, পরে অধিনায়ক জো রুটকে বোল্ড করে ইংরেজদের কফিনে শেষ পেড়েকটাও পুঁতে দিলেন সেই শার্দুল ঠাকুরই।

যাই হোক সেই ইংল্যান্ড টেস্টের পরে গঙ্গা বা টেমস দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গিয়েছে, আইপিএল হওয়ার পরে ভারতের টি২০ বিশ্বকাপ বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। কিন্তু ভারতের নির্বাচকরা কী সেই টেস্ট ম্যাচটা ভুলে গেলেন? যদি ভুলে না গিয়ে থাকেন তাহলে আসন্ন নিউজিল্যান্ড সিরিজের টেস্ট দলে শার্দুল নেই কেন? শার্দুলের চোট আছে, এরকম কোনো খবর তো শোনা যায়নি। তাহলে?

শার্দুলের না থাকা কী কোচ – ক্যাপ্টেনের সিদ্ধান্ত নাকি নির্বাচকদের? যদি নির্বাচকদের হয় তাহলে সেই মহিন্দর অমরনাথের সুরেই নির্বাচকদের বলতে হবে ‘আ বাঞ্চ অব জোকার্স’। পেস বোলিং অলরাউন্ডার নিয়ে ভারতে বিজ্ঞাপন দেওয়া তো বহুকাল ধরেই চলছে, কিন্তু সেই সম্ভাবনা কারোর মধ্যে দেখা গেলেও তাকে সেই ভাবে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া কতোটা আদৌ চলে?

ভারতের মাটিতে হওয়া টেস্ট সিরিজে টিম কম্বিনেশনের জন্য শার্দুল প্রথম একাদশে না ও সুযোগ পেতেন এমন সম্ভাবনা তর্কের খাতিরে যদিও বা ধরে নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রেও ১৬ জনের দলেও সুযোগ পেলেন না কেন আগের টেস্টের অন্যতম নায়ক শার্দুল? ইংল্যান্ড সিরিজে তেমন পারফরমেন্স না করেও ইশান্ত শর্মা বা গোটা ইংল্যান্ড সিরিজে ড্রেসিংরুমে কাটানো প্রসিধ কৃষ্ণা কিভাবে দলে থাকলেন শার্দুলের জায়গায়? প্রশ্নগুলো আসলে থেকেই যাবে, উত্তর পাওয়া যাবে কী? মনে তো হয়না।

সত্য সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link