চোখের আড়াল মানেই মনের আড়াল – কথাটা যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটে খাটানো যায়, তাহলে সবচেয়ে বড় উদাহরণ হবেন তিনি। ২০১৮ সালেই তিনি সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন। এমনকি ২০১৭-১৮ মৌসুমের দিকেই কেন তিনি জাতীয় দলে ডাক পাচ্ছেন না, সেই নিয়ে নিয়মিত প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নির্বাচক প্যানেলকে।
অথচ, সেই নাসির হোসেন এখন কোনো রকম আলোচনাতেই নেই। চোখের আড়াল হয়ে তিনি বিসিবি, সমর্থক ও সাংবাদিক – সবার মনের আড়ালেই পড়ে রয়েছেন। অথচ, কি অমিত প্রতিভা নিয়ে তিনি হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। একজন কার্যকর ক্রিকেটার হওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন – সবই তো ছিল রংপুরের ছেলে নাসিরের মধ্যে।
মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করতেন। বিপদে দেয়াল তুলে দাঁড়াতেন, খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে দলকে বিজয়ের নিশানা দেখাতেন। বলা হত, তিনিই নাকি বাংলাদেশের সেরা ফিনিশার, বাংলাদেশের মাইকেল বেভান। এখন এসব উপমা শুনলে হাস্যকর মনে হয়।
বোলিংয়ে কার্যকর ছিলেন, গুরুত্বপূর্ন সব সময়ে উইকেট এনে দিতে মুশফিক-মাশরাফিরা বারবারই ডাকতেন নাসিরকে। নাসির সেই ভরসার প্রতিদান দেননি – এমন নজীর খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না।
ফিল্ডিংয়ে ছিলেন ওই সময়ের সেরা। কি দারুণ রিফ্লেকশন, কি ডেডিকেশন। আর শারীরিক অভিব্যাক্তির কথা তো না বললেই নয়, তার মত আত্মবিশ্বাস মাঠে কম খেলোয়াড়েরই থাকতো। কেন মাত্র ২৮ বছর বয়সেই তাঁর নামের আগে ‘সাবেক’ জুড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে!
টেস্টের প্রায় ৩৫ গড়, কিংবা ওয়ানডেতে ৩০ গড় – কোনোটাই তো মন্দ নয়। দু’টি সেঞ্চুরি করেছেন, তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ১৪ টি হাফ সেঞ্চুরি, ৩৯ টি উইকেট – এখানেই কেন নাসিরের এপিটাফ লেখার সময় চলে এলো?
এই প্রশ্নের জবাবটা নাসিরই দিতে পারবেন। কারণ, পরিশ্রম করতে অনীহা, অতি-আত্মবিশ্বাসই তার এই পরিণতির কারণ। তার বিরুদ্ধে টিম ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে বড় অভিযোগ হল – তিনি একদমই মন দেন না অনুশীলনে। সময় মত আসেন না, ফিটনেস নিয়ে কাজ করতে বললে করেন না।
আর ক্রিকেটের বাইরে তার ব্যক্তিগত জীবনও বেশ এলোমেলো। শৃঙ্খলাজনিত অনেক ইস্যুতে অনেক বারই নাসিরকে নিয়ে সরব ছিল গণমাধ্যম। গুরুত্বপূর্ণ সব ম্যাচের আগেরদিন রাত করে টিম হোটেলে ফেরা, টিম মিটিংয়ে না থাকা – ইত্যাদি অসংখ্য অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে হর-হামেশাই পাওয়া যেত।
সেজন্য নাসিরকে ২০১৮ সালের পর ২০২২-এর বিপিএল ছাড়া আর জাতীয় দলে নেওয়ার কোনো প্রসঙ্গই আর ওঠেনি। আর মাঠের পারফরম্যান্সেও তিনি এমন আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি যে, ‘ব্যাড বয়’ ইমেজ ভেঙে তাঁর ক্রিকেটীয় চরিত্রকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে। তাই নাসির তাই চলে গেলেন বিস্মৃতির অতল গহ্বরে!
অবশ্য এখনও তিনি মাঝেমধ্যে ঝলক দেখান। কখনও বিপিএলে দল পান। এমন সব ইস্যুতেই দুই একবার পত্রিকার পাতায় নাম আসে তাঁর। তাঁকে ঘিরে আলোচনা এখন এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ। ক্রিকেট তাঁর ইতিহাসের সেই ‘ব্যাড বয়’-দেরই মনে রাখে যারা মাঠের পারফরম্যান্স দিয়ে বাকি সব ভুলিয়ে দিতে পারেন। নাসির সেটা পারেননি!
নাসিরের এখন যা বয়স, তাতে তিনি চাইলেই জাতীয় দলে ফিরতে পারেন। দু’টো ভাল মৌসুম আর শৃঙ্খলাগত কিছু পরিবর্তন – ব্যস এটুকুই দরকার। কিন্তু, প্রশ্ন হল নাসিরের নিজের মধ্যে কি সেই ফেরার তাড়নাটা আছে!