বিরাট কোহলির সিদ্ধান্তের জন্য ৪৮ ঘণ্টা অপেক্ষা করে বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই)। কি সিদ্ধান্ত? কিছুদিন আগেই টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। বিসিসিআই চায় ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্বটাও রোহিতের কাঁধে দিতে। তবে বিরাট নিজের জায়গা থেকে সরে আসেননি। বেঁধে দেওয়া সময়ের এক ঘণ্টা পার হতেই বোর্ড থেকে অফিসিয়াল ভাবে জানানো হয় ওয়ানডেতে ভারতের নতুন অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
কোহলির মতের বিরুদ্ধে গিয়েই বিসিসিআই ও নির্বাচক কমিটি তাকে দায়িত্ব অব্যাহতি দিয়ে রোহিতকে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা দেন। ২০২৩ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে নিজের মধ্যেও বেশ পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন বিরাট। তবে চলতি বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের ভরাডুবির পরই যেনো সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অধিনায়কত্ব থেকে বিরাটকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ফাইনাল করে রেখেছিলো বিসিসিআই। একপ্রকার জোরপূর্বক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ায় বিরাটেরও কিছু করার নেই! সাড়ে চার বছর অধিনায়কত্বের পর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই দায়িত্ব কেড়ে নেওয়া হলো।
ক্যারিয়ারের শুরুটা করেছিলেন ক্যাপ্টেন কুল খ্যাত মহেন্দ্র সিং ধোনির অধীনেই। এবং ধোনিই পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে বিরাটকে তৈরি করেছিলেন। এমনকি বিরাটকে আরো প্রস্তুত করার জন্য ২০১৯ বিশ্বকাপের ২ বছর আগেই অধিনায়কত্ব তুলে দেন ধোনি। প্রথম দু’বছর দারুনভাবেই দায়িত্ব পালন করেন বিরাট। তাঁর অধীনে দেশে এবং দেশের বাইরে দারুন সাফল্য পাচ্ছিলো দল।
মাস খানেক আগেই ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছিলো দলের ভিতরের অনেক ক্রিকেটারই অধিনায়ক হিসেবে বিরাটকে পছন্দ করে না। নাম গোপন রাখার শর্তে বছর খানেক আগে এক ক্রিকেটার টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেছেন, ‘বিরাটের সাথে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিশ্বাসের ব্যাপার।সে সবসময়ই বলে যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেনো কোনো ঘাটতি না থাকে কিন্তু সে নিজেই যোগাযোগ রক্ষা না করায় সেই সম্মানটা হারিয়েছে ড্রেসিং রুমে।’
সাবেক ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রীও সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন বিরাটের উচিত ব্যাটিংয়ে মনযোগী হওয়া। অনেকের মতেই স্পিনার কুলদীপ যাদবের এভাবে পিছিয়ে পড়ার পেছনেও কোহলি দায়ী। কিভাবে কুলদীপকে ব্যবহার করতে হবে সেটিই জানতেন না তিনি। কুলদীপ ছাড়াও আরো বেশ কিছু ক্রিকেটাররা দলে বুঝতেই পারতেন না আসলে তাদের ভূমিকাটা কি!
মহেন্দ্র সিং ধোনি জুনিয়র ক্রিকেটারদের সাথে খুব মিশতেন, তাদের সময় দিতেন। বলতে গেলে অনেক ক্রিকেটারের মতে ধোনির সাথে জুনিয়রদের বন্ডিং বেশ ভালো ছিলো। তবে পরবর্তী সময়ে সেই নিবিড় সম্পর্কটা বিরাটের সাথে গড়তে পারেনি জুনিয়র ক্রিকেটাররা। খেলার বাইরে হোটেল রুমে অনেকটা নিজের মতো থাকায় বিরাটের সাথে জুনিয়র ক্রিকেটাররা আলাদাভাবে কিছু জানার কিংবা একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলার সেই সুযোগটা পাননা, যার বিপরীত আবার রোহিত! সবার সাথেই নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে সবাইকে সাপোর্ট দিতে জুনিয়রদের কাছে বেশ প্রশংসিত রোহিত।
বেশ কিছু ক্রিকেটারের মতে কেউ যদি খারাপ খেলতে থাকে তাহলে রোহিত নিজে গিয়ে আলাদাভাবে তার সাথে কথা বলেন। কেউ যদি ভালো খেলে তাদের নিয়ে বাইরে খেতে যাওয়া সহ সবাইকে পরিস্থিতি অনুযায়ী সমর্থন করায় রোহিতের বেশ সুনাম রয়েছে ড্রেসিং রুমে।
আপাতত বিরাটের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ। অধিনায়কত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটি পাশ কাটিয়ে ব্যাট হাতে হয়তো চেনা রুপেই ফিরতে চাইবেন সাবেক এই ওয়ানডে অধিনায়ক। আপাতত সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অধিনায়ক হিসেবে বিরাট যুগের সমাপ্তি আর রোহিতের শুরু।