সদ্যই এক ট্যুর শেষ করে পরিবারের সাথে গল্প আড্ডায় মশগুল। হঠাৎ আড্ডার মাঝেই এলো ফোন, ড্রয়িং রুম ছেড়ে উঠে গেলেন নিজের রুমে। সেখান থেকে ফিরলেন আস্ত বড় এক হাসি মুখে নিয়ে। গল্পটা ভারত টেস্ট দলে ডাক পাওয়া প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চালের। প্রিয়াঙ্ক বলেন, ‘ আমি বাসায় ছিলাম যখন আমার কাছে ফোন আসে। আমি অত্যন্ত খুশি।’
ভারত টেস্ট দলের নিয়মিত ওপেনার রোহিত শর্মার ইনজুরিতে যেন ভাগ্য খুলে গেলো ভারতের গুজরাট অঙ্গরাজ্যের ছেলে প্রিয়াঙ্কের। বড়দিনের পরেরদিন অর্থাৎ ২৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার সেন্টুরিয়নে তিন ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হবে ভারত। সেই টেস্টকে সামনে রেখেই অনুশীলনরত অবস্থায় সাইড স্ট্রেইনের ইনজুরিতে পড়েন রোহিত শর্মা। তাতেই ডাক পড়েছে প্রিয়াঙ্কের।
অনেকের মনেই হয়ত প্রশ্ন জেগেছে কে এই প্রিয়াঙ্ক, কিভাবে এলেন তিনি দলে? প্রশ্নের জবাবে এতটুকু বলা যায় প্রিয়াঙ্ক কোন নতুন মুখ নন। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি যুক্ত আছেন ভারতের ‘এ’ দলের সাথে। সম্প্রতি তিনি খেলে এসেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। শুধু যে খেলেছেন তা নয়। তিনি নেতৃত্বও দিয়েছেন দলকে। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন এই মাহেন্দ্রক্ষণের।
‘এটা প্রতিটা খেলোয়াড়দের স্বপ্ন ভারত জাতীয় দলের জার্সি জড়ানো এবং এই সুযোগ পাওয়ার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি কেননা আমি আমার স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে চলেছি। আমি খুবই উৎফুল্ল এবং মুখিয়ে আছে দলের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্যে। আর তাছাড়া ভারত জাতীয় ক্রিকেট দলের সাথে যুক্ত হতে পেরে আমার ভীষণ গর্ববোধ হচ্ছে।’ এমনটাই বলছিলেন প্রিয়াঙ্ক জাতীয় দলে ডাক পাবার পর।
প্রিয়াঙ্ক এর আগেও অবশ্য ছিলেন ভারত দলে ড্রেসিং রুমে। তাঁকে এই বছরের শুরুর দিকে ইংল্যান্ড সিরিজের জন্যে স্ট্যান্ডবাই খেলোয়াড় হিসেবেও রাখা হয়েছিল। যদিও তখন তিনি খেলার বা দলের পূর্ণ সদস্য হওয়ার সুযোগ পাননি। তবে এবার পূর্ণ সদস্য হয়েই তিনি যাবেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। অপেক্ষায় থাকবেন ক্রিকেটের বনেদি ফরম্যাটে নিজের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবার।
যেহেতু সম্প্রতি প্রিয়াঙ্ক ফিরেছেন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সেহেতু তাঁর কন্ডিশনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাইবে দল। তাছাড়া ব্যাট হাতেও সেখানে রান করেছিলেন প্রিয়াঙ্ক। অল্পের জন্যে মিস করেছিলেন শতক। আউট হয়েছিলেন ১৭১ বলে ৯৬ রান করে। সুতরাং ব্যাটিং দক্ষতার কথা মাথায় রেখে হয়ত তাঁকে একাদশেও সুযোগ দেবে ম্যানেজমেন্ট।
হয়ত প্রিয়াঙ্ক জানেন তিনি সুযোগ পেলেও তাঁর চিরায়ত পজিশনে সুযোগ পাবেন না। সে বিষয়ে অবগত প্রিয়াঙ্ক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে খেলে এসেছি এবং সেখানকার কন্ডিশন সম্পর্কে আমি বেশ ভালভাবেই অবগত। দলে সুযোগ পেলে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলের জন্যে ভাল কিছু করতে পারবো বলে আমি মনে করি। তাছাড়া আমি দলের প্রয়োজনে যেকোন পরিস্থিতিতে, যেকোন পজিশনে ব্যাট করতে প্রস্তুত।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ ভাল অভিজ্ঞতাই রয়েছে প্রিয়াঙ্কের। তিনি ১০০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে তাঁর সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ৩১৪ রানে অপরাজিত। তাছাড়া প্রায় ৪৬ গড়ে তাঁর মোট রান সংখ্যা ৭০১১। ২৪টি শতকের বিপরীতে অর্ধশতক রয়েছে ২৫টি।
৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটারের প্রথম বিভাগ ক্রিকেটে উইকেটও রয়েছে ১৪টি। মিডিয়াম পেস বোলিং করতে জানেন ডান-হাতি খেলোয়াড় প্রিয়াঙ্ক। সুতরাং তাঁর এই বোলিং গুণও কাজে লাগাতে পারবে টিম-ইন্ডিয়া। এখন দেখবার পালা প্রিয়াঙ্ক পাঞ্চাল সুযোগ পাননি কিনা টেস্ট একাদশে। আর সুযোগ পেলেও তিনি কেমন পারফর্ম করবেন তা সময় বলে দেবে।