আবিদ আলী ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন

অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানের টেস্ট দলে বেশ সাফল্য পাওয়া ওপেনার আবিদ আলী। সম্প্রতি ঘরোয়া লিগের এক ম্যাচে হৃদপিণ্ডের সমস্যা নিয়ে মাঠ ছেড়ে করাচির এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিলেন তিনি।

এনজিওপ্লাস্ট শেষে জানা গেলো তিনি আক্রান্ত হয়েছেন অ্যাকুট করোনারি সিনড্রম নামক একটি হৃদযন্ত্রের ব্যধিতে। প্রায় সপ্তাহ খানেক পর তিনি ছাড়া পেলেন হাসপাতাল থেকে। বর্তমানে তিনি পার করছেন পুনর্বাসন সময়। করাচির বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টদের সাথে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) মেডিকেল কর্মকর্তারা মিলে ঠিক করছেন আবিদ আলীর পুনর্বাসন পন্থা।

কি কি নিয়ম কানুন তাঁকে মেনে চলতে হবে সেসবে সব পরিকল্পনা ইতোমধ্যে করে ফেলেছেন আবিদ আলীকে পরিচর্যাকারী চিকিৎসক দল। সেই বিধিনিষেধ মেনেই আবার যেন ক্রিকেটে ফিরতে চান আবিদ আলী। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এমনটাই জানান আবিদ আলী।

ট্রেডমিলে হেঁটে সেই পুনর্বাসন পরিকল্পনা মাফিক যে তিনি চলছেন সে বিষয়ে সমর্থকদের অবগত করেন তিনি। এছাড়াও সেই পোস্টে তিনি আরো লেখেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ডাক্তারদের পরামর্শ মেনে আগের অবস্থানে ফিরে আসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

তাছাড়া তাঁর এই কঠিন সময়ে পরিবার, বন্ধু এবং সমর্থকদের কাছে থেকে পাওয়া প্রেরণার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি, ‘আমার এমন খারাপ সময়ে সাপোর্ট জানানোয় আমার সকল পরিবার, বন্ধু ও সমর্থকদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।’

পাকিস্তানের ৩৪ বছর বয়সী ওপেনার গেলো সপ্তাহে পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেট লিগ কয়েদ-এ আজম ট্রফির সেন্ট্রাল পাঞ্জাব বনাম খায়বার পাখতুনওয়ারের মধ্যকার ম্যাচে ব্যাটিং চলাকালীন সময়ে বুকে ব্যথা অনুভর করেন। এরপর তিনি যখন ৬১ রানে ব্যাটিং করছিলেন তখন আবার ব্যথা অনুভব করায় তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং দুইবার এনজিওপ্লাস্ট শেষে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয় হাসপাতাল থেকে।

যেহেতু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সেন্ট্রাল চুক্তির আওতাধীন রয়েছেন আবিদ আলী সেহেতু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) বিশেষভাবে নজর রাখছে তাঁর উপরে। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট অভিষেক হয় আবিদ আলীর।

এরপর থেকে টেস্টে পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি এখন পর্যন্ত নিজের আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্যারিয়ারে চারটি শতকের পাশাপাশি তিনটি অর্ধশতকের কল্যাণে ১৬ ম্যাচে আবিদ সংগ্রহ করেছেন ১১৮০ রান। গড় পঞ্চাশের কাছাকাছি।

কিন্তু প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। আদৌ কি তিনি আবার ফিরতে পারবেন ক্রিকেটে? হয়ত পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে ফিরে আসতে পারবেন তিনি। কিন্তু যদি সময়টা একটু বেশি প্রয়োজন হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে কি তাঁকে আবার জাতীয় দলের হয়ে খেলতে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কেননা একটু দেরীতেই শুরু করেছিলেন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। এখন তাঁর বয়স ৩৪।

তাছাড়া তিনি শুধুমাত্র টেস্ট দলের জন্যেই বিবেচিত হতেন। হৃদপিণ্ডের অসুখ নিয়ে আদৌ তিনি টেস্টে ক্রিকেটের ধকল সামলে নিতে পারবেন সেই প্রশ্নও থেকে যাচ্ছে। বেশ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেলেন আবিদ আলী।অথচ কী দারুণ ছন্দে ছিলেন আবিদ।

এইতো ক’দিন আগেই বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হয়েছিলেন সিরিজ সেরা। ৮৭.৬৬ গড়ে রান করেছিলেন ২৬৩ রান। চার ইনিংসের একটিতে শতক ও দুইটিতে অর্ধশতক করেছিলেন আবিদ। তাছাড়া এ বছর টেস্টে রান সংগ্রাহকদের তালিকায় রয়েছেন পঞ্চমস্থানে। অন্যদিকে ঘরোয়া লিগে ষষ্ঠ টেস্ট ম্যাচ খেলতে থাকা আবিদের রান সংখ্যা ছিলো ৭৬৬। 

শেষমেশ কি ঘটবে আবিদ আলীর সাথে তা এই মুহূর্তে বলা বেশ কঠিন। পাকিস্তানের ক্রিকেট বর্তমানে উত্থানের পথে অগ্রসর হচ্ছে। দ্রুতই কোন একজন ভাল মানের খেলোয়াড়ের দেখাও পেয়ে যেতে পারে দল। কিংবা পাইপলাইনে থাকা কোন একজনকে সুযোগ দেবে পিসিবি। তবুও আশাহত হয়ত হতে চাইবেন না আবিদ আলী কিংবা তাঁর সমর্থকেরা। ফিনিক্সের ন্যায় ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট মাতাবেন আবিদ আলী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link