বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশ

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ভিড়ে হওয়া ওয়ানডে সিরিজগুলোকে নিয়ে আলাদা করা আলোচনা করার খুব একটা সুযোগ হয়নি। তাইতো বছরের শেষপ্রান্তে এসে সেদিকটায় একটুখানি নজর দেওয়া যাক। যা টুকটাক ওয়ানডে হয়েছে তাঁর মধ্যে থেকেই খেলা ৭১ নির্বাচন করেছে বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশ।

২০২১ সালে ক্রিকেটের অধিকাংশ সময়ে কেটেছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে। প্রথমত এই বছর অনুষ্ঠিত হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার উপর চলমান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২১-২৩ চক্র। যার ফলে অধিকাংশ দলের মনোযোগটা ছিলো সেই দুই ফরম্যাটে। তবুও বেশকিছু ওয়ানডে সিরিজ সংগঠিত হয়েছে এবছর। যেখানে নিজের দেশের হয়ে বেশকিছু খেলোয়াড় দারুণ পারফর্ম করেছেন বছর জুড়েই। 

টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির ভিড়ে হওয়া ওয়ানডে সিরিজগুলোকে নিয়ে আলাদা করা আলোচনা করার খুব একটা সুযোগ হয়নি। তাইতো বছরের শেষপ্রান্তে এসে সেদিকটায় একটুখানি নজর দেওয়া যাক। যা টুকটাক ওয়ানডে হয়েছে তাঁর মধ্যে থেকেই খেলা ৭১ নির্বাচন করেছে বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশ। 

  • পল স্টার্লিং (আয়ারল্যান্ড)

এই বছরে সর্বাধিক ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে আয়ারল্যান্ড। ১৪টি ম্যাচ খেলেছেন আয়ারল্যান্ড। এই সময়ে ব্যাট হাতে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন আয়ারল্যান্ডের অভিজ্ঞ ওপেনিং ব্যাটার পল স্টার্লিং। তিনি দলটির হয়ে সবগুলো ওয়ানডে ম্যাচেই অংশ নিয়েছেন এবং নিয়মিত রান করেছেন। এ বছর প্রায় ৫৪ এর বেশি গড়ে ১৪ ওয়ানডেতে তাঁর ব্যাট থেকে রান এসেছে ৭০৫। অপরাজিত ১৩১ রানের একটি বিশাল বড় ইনিংসও ছিলো তাঁর।

  • তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)

পল স্টার্লিং-কে সঙ্গ দিতে থাকছেন বাংলাদেশের অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। বছরের একটা বড় সময় জুড়ে ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে থাকা সত্ত্বেও দলের হয়ে ১২টি ওয়ানডে ম্যাচে অংশ নিয়েছিলেন তিনি।

অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রায় ৩৮.৬৬ গড়ে রান করেছেন তিনি। তাঁর ওপেনিং পার্টনারের অদল-বদল যেন নিয়মিত এক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবুও তিনি যেন রয়েছেন নিজের আপন ছন্দের। একটি শতক ও চারটি অর্ধশতকের কল্যাণে তাঁর মোট রান ৪৬৪।

  • বাবর আজম (পাকিস্তান)

তৃতীয় উইকেটে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার পাকিস্তানের বাবর আজম। তিনি বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর ওয়ানডে ব্যাটারও ৮৭৩ রেটিং পয়েন্ট নিয়ে রয়েছেন সবার উপরে। এই বছর দারুণ কিছু ইনিংস খেলার পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে সদা হাস্যজ্জ্বল ছিলো তাঁর ব্যাট। এই বছর মাত্র ছয় ইনিংসে বাবর আজম ৬৭.৫০ গড়ে রান করেছেন ৪০৫। তাঁর মধ্যে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করা দূর্দান্ত এক দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসটা ছিলো মনোমুগ্ধকর।

  • জেনম্যান মালান (দক্ষিণ আফ্রিকা)

দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নবাগত জেনম্যান রয়েছেন দারুণ ফর্মে। ওয়ানডেতে তাঁর গড় এক কথায় অসাধারণ। ৮৪.৮৩ গড়। বছরের সেরা গড়। তিনি রয়েছেন রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে। ৫০৯ রান রয়েছে এই বছর তাঁর নামের পাশে। নিজের ক্যারিয়ারের ১১ ম্যাচের মধ্যে আটটি ওয়ানডে তিনি খেলেছেন ২০২১ সালে। সমান দুইটি করে শতক ও অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন জেনম্যান মালান।

  • সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)

বাংলাদেশ দলের আস্থার জায়গা সাকিব আল হাসান। তাছাড়া বর্তমান বিশ্বক্রিকেটে তাঁর মতো কার্যকরী অল রাউন্ডার খুঁজে পাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। ব্যাট ও বলে সমান তালে পারফর্ম করতে পারা সাকিব আল হাসান পুষিয়েও দিতে পারেন কোন জায়গার ঘাটতি।

এই বছরে বাংলাদেশের হয়ে ১৭.৫২ গড়ে উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য যে এখনও সাকিব ধারণ করে তার প্রমাণস্বরুপ একটি ম্যাচে একাই প্রতিপক্ষের পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তিনি এই বছরেও। তাছাড়া ব্যাটটাও মোটামুটি ভালই চালিয়েছেন সাকিব। ৩৯.৫৭ গড়ে রান করেছেন ২৭৭ নয় ম্যাচে অংশ নিয়ে।

  • মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (বাংলাদেশ)

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন দক্ষ এবং অভিজ্ঞ সেনানী। দলের বিপর্যয়ে বারংবার  নিজেকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছেন তিনি। এই বছরও তাঁর ব্যতিক্রম ঘটেনি। দশটি ইনিংস খেলেছেন রিয়াদ এবছর। এর মধ্যে প্রায় ৪৯ এর অধিক গড়ে ৩৯৯ রান করেছেন রিয়াদ। তাছাড়া মাঝেমধ্যে বল হাতেও প্রতিপক্ষের রানের গতিটায় লাগাম টেনে নিতেও পটু তিনি। তাছড়া ২০২১ সালে দেশের হয়ে কয়েকটি ম্যাচ বাঁচানো এবং জয় এনে দেওয়া ইনিংস উপহার দিয়েছেন রিয়াদ।

  • ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)

দলের আরেকজন অলরাউন্ডার হিসেবে যোগ দিতে পারেন শ্রীলঙ্কান প্রমিসিং লেগ স্পিন অলরাউন্ডার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। এই বছর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সবচেয়ে বিধ্বংসী আচরণ করার পাশাপাশি ওয়ানডেতেও ছিলেন বেশ কার্যকরী।

বল হাতে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১২টি অন্যদিকে ব্যাট হাতে ২৭ পাড় করা গড়ে মোট রান সংগ্রহ করেছেন ৩৫৬। খেলেছেন ১৪টি ইনিংস। বল হাতে বেশ ইকোনমিকাল হাসারাঙ্গার এই বছরের ইকোনমি রেট পাঁচের নিচে।

  • ক্রুনাল পান্ডেয়া (ভারত)

এই বছরে অভিষেক হওয়া ভারতীয় স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার ক্রুনাল পান্ডেয়া বেশ আশা জাগানীয়া পারফর্মেন্স উপহার দিয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচেই দেখা পেয়েছেন অর্ধশতকের। তাছাড়া তিনি একটু হাত চালিয়ে খেলতে পছন্দ করেন। ইনিংসের শেষের দিকে দ্রুত রান তুলতেও জানেন ক্রুনাল। এছাড়াও বা-হাতি অফ স্পিনটাও মন্দ জানেন না তিনি। ওয়ানডেতে চার ইনিংস ব্যাট করে ৬৫ গড়ে তাঁর রান ১৫০। এর বিপরীতে পাঁচ ম্যাচে রয়েছে দুইটি উইকেট।

  • দুশমন্থ চামিরা (শ্রীলঙ্কা)

ওয়ানডেতে বছরে সর্বাধিক উইকেট শিকারিদের তালিকার শীর্ষস্থান নিজের দখলে রেখেছেন দুশমন্থ চামিরা। লঙ্কানদের হয়ে এই বছর তিনি ১৩টি ইনিংসে বল করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি প্রায় ২৯.৩০ গড়ে তিনি উইকেট নিয়েছেন মোট ২০টি। পাঁচের ঘরের ইকোনমি রেট নিয়ে বেশ ভাল লাইন ও লেন্থ মেনে পেসটাও ঠিকঠাক ডেলিভার করতে পারেন চামিরা।

  • মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)

উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে এই বছরটি কেটেছে  মুস্তাফিজুর রহমানের। তবুও বল হাতে খুব যে খারাপ একটা সময় পার করেছেন তা বলা যাচ্ছে না। অন্তত ওয়ানডেতে। এই বছর তিনি বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন মোট ১০টি।

ৎএর মধ্যে তাঁর নামের পাশে তিনি ১৮টি উইকেটের ট্যালি কেটেছেন। ইকোনমি রেটটাও পাঁচের সামান্য বেশি। গড় ২১.৫৫। ওয়ানডে ফরম্যাটের জন্যে মানানসই বোলিং পারফর্মেন্স। তাছাড়া তাঁর অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বিবেচনায় তিনি থাকছেন আজকের একাদশে। 

  • মিশেল স্টার্ক (অস্ট্রেলিয়া)

গোটা ক্রিকেট বিশ্বে বর্তমানে সবচেয়ে বিধ্বংসী বোলারদের মধ্যে অন্যতম অস্ট্রেলিয়ান বা-হাতি পেস বোলার মিচেল স্টার্ক। অস্ট্রেলিয়া যদিও এই বছর ওয়ানডে খেলেছে মোটে তিনটি ম্যাচ। সেই তিন ম্যাচেই একাদশে ছিলেন মিচেল স্টার্ক। ছিলেন না শুধু তাণ্ডব চালিয়েছেন তিনি।

মাত্র ১০.৬৩ গড়ে তিনি উইকেট নিয়েছেন ১১টি। ইকোনমি রেটটা ছিল চারের ঘরে। ম্যাচের সংখ্যা যদি একটু বেশি থাকতো তাহলে নিঃসন্দেহে এই বছরের সেরা উইকেট সংগ্রাহকদের তালিকায় শুরুর দিকেই থাকতেন তিনি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...