দেওয়াল ভাঙতে দিতেন না বিনাযুদ্ধে

১১ জানুয়ারি ১৯৭৩ তারিখে জন্মানো রাহুল দ্রাবিড়ের উপর নিশ্চিন্তে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ভারতীয় ক্রিকেট, ১৯৯৬ থেকে শুরু করে, প্রায় ষোল বছর, ২০১২ অবধি। যত ম্যাচে ভারত তার জন্যই উৎরে গেছে, তা নিয়ে লিখতে গেলে একটি উপন্যাসও কম পড়ে যায়।

যার মধ্যে ২০০১ সালের কলকাতা টেস্টে তার আর ভিভিএস লক্ষ্মণের সাথে জুটি আজও অন্যতম বীরগাথা ভারতীয় ক্রিকেটে। এই নির্ভরতাই তাকে ‘দ্য ওয়াল’ বা ‘দেওয়াল’ উপাধি এনে দেয়।  তিন এপ্রিল ১৯৯৬ থেকে ২৪ জানুয়ারি ২০১২ অবধি বিস্তৃত তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে মোট ৫০৯ বার ভারতের জার্সি উঠেছিল তার গায়ে।

এবং ঈর্ষণীয় কিছু পরিসংখ্যান তার জন্য বরাদ্দ হয়ে আছে ভারতীয় ক্রিকেটে। ১৬৪ টেস্টে ৫টি দ্বিশতরানসহ ৩৬টি শতরানের মালিকের মোট টেস্ট রান ছিল ১৩২৮৮। ৩৪৪ টি একদিনের ম্যাচে ১২ টি শতরান আছে তার করা ১০৮৮৯ রানের মধ্যে। জীবনের একমাত্র কুড়ি-বিশে তার রান ছিল ৩১। টেস্টে  এক এবং একদিনের ম্যাচে চারটি উইকেটও নিয়েছেন তিনি। ২০০৩ সালের পুরো বিশ্বকাপেই উইকেটকিপিং করে টিমে একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান খেলাতে ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিকে সাহায্য করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়।

বিরাট কোহলি নন, গোলাপি বলে প্রথম ভারতীয় হিসাবে সেঞ্চুরি করেন রাহুল দ্রাবিড়। গোলাপি বলের টেস্টে প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসাবে বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি করেছেন ঠিকই, কিন্তু গোলাপি বলে প্রথম সেঞ্চুরিকারী ভারতীয় ব্যাটসম্যান তিনি নন। আট বছর আগে এমসিসি’র হয়ে গোলাপি বলে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসাবেই সেঞ্চুরি করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। আবু ধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামে নটিংহ্যাম্পশায়ারের বিরুদ্ধে তিনি এই কৃতিত্বের অধিকারী হন।

ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচে পরীক্ষামূলক ভাবে খেলা হয়েছিল এই গোলাপি বলে। প্রথম ইনিংসে দ্রাবিড় মাত্র ২ বল খেলে কোনও রান না করেই ফিরে গিয়েছিলেন। কিন্তু নটিংহ্যাম্পশায়ারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে এই কিংবদন্তি ক্রিকেটার ১০৬ রান করেছিলেন। ম্যাচের সর্বোচ্চ স্কোরার হন তিনিই। ১৭৪ রানে সেই ম্যাচে জিতেছিল এমসিসি।

‘রা’ না কেড়েও ‘হুল’ ফুটিয়েছেন ব্যাটে। দেওয়াল ভাঙতে দিতেন না বিনাযুদ্ধে। সেই দেওয়ালটা বহুদিন ভারতীয় ক্রিকেটের অনেক ক্ষত ঢেকে রেখেছিল। ভারতীয় ক্রিকেট এখন ভালোমত জানে, দেওয়ালটা সরে গেছে। আর হবেনা। তিনি কিন্তু দারুণ ব্যস্ত এখনো নি:শব্দেই, নতুন নতুন দেওয়াল তৈরিতে। যে দেওয়ালগুলো তাকে ভুলিয়ে দিয়ে আসলে তাকেই মনে পড়াবে।

রাহুল দ্রাবিড় ছিলেন ২০১৮ সালের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়ী ভারতের কোচ, যিনি পরে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান পদ ছুঁয়ে আপাতত ভারতীয় সিনিয়র টিমের হেড কোচ পদে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। সেখানেও শুরুটা তাঁর ও ভারতের জন্য বেশ আশাব্যঞ্জক।

ক্রিকেট উপাসক ভারতে আপনি এক্স হবেন না কোনদিন। আপনি আর ডি এক্স-ও হবেন না কোনদিন, আপনি নাছোড়বান্দা প্রতিজ্ঞায় ধীরে ধীরে প্রতিপক্ষের সামনে দেওয়াল তৈরীর ব্র্যান্ড অ্যামবাসাডর বলেই পূজিত হবেন চিরদিন। ভাল থাকুন রাহুল দ্রাবিড় ওরফে আর ডি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link