নাটকীয় দলবদলের অতিনাটকীয় পথচলা

হঠাৎ ঘুম ভেঙে আবিষ্কার করলেন আপনি রয়েছেন আপনার স্বপ্নের গন্ত্যবে। অথবা তাঁর বিপরীতে। হতেই পারে। হয়ও আমাদের সাথে কালেভদ্রে। আমরা যা চাই তা পাই না, যা পাই তা চাই না এমন এক প্রবাদ বাক্যের সাথে তো আমাদের হরহামেশাই দেখা হয় কিংবা হয় অভিজ্ঞতা। ফুটবলারদের ক্ষেত্রেও এমন সব বৈচিত্রময় কাণ্ড ঘটেছে যা তাঁরা হয়ত প্রত্যাশাই করেননি। অপ্রত্যাশিত সেই সকল দলবদল নিয়েই আজকের আলোচনা।

  • পাওলিনহো (ব্রাজিল)

সারা বিশ্বের ক্লাব ফুটবলে ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদে বেশ একটা দাপট রয়েছে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কেননা কতশত যে নান্দনিক ফুটবলার উপহার দিয়েছে দেশটির তার ইয়ত্তা নেই। নানন্দিক না হোক মোটামুটি মানে ফুটবলার ছিলেন পাওলিনহো। ক্যারিয়ারের একটা বড় সময় কাটিয়েছেন ঘরের ক্লাবেই।

এরপর অবশ্য তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন চীন দেশে। মাঝে খানিকটা সময় কাঁটিয়েছিলেন ইংলিশ ক্লাব টটেনহামে। সেখানেও অনুজ্জ্বল থাকা পাওলিনহো হঠাৎ করে চলে এলেন ইউরোপিয়ান জায়ান্ট বার্সেলোনার রাডারে। ব্রাজিলের হয়ে ৪১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশ নেওয়া পাওলিনহো শুধু যে রাডারেই এসেছেন তা নয় তিনি রীতিমত যুক্ত হয়েছিলেন বার্সা স্কোয়াডে। প্রায় ৪০মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তাঁর এই দলবদল আশ্চর্য করেছিল পুরো ফুটবল বিশ্বকে। কিন্তু সেই পাওলিনহো আবার সবাইকে হতাশ করে ফিরে গিয়েছেন চীনের ঘরোয়া লিগে।

  • লুকা টনি (ইতালি)

ইতিলিয়ান স্ট্রাইকার লুকা টনি ছিলেন ভ্রমণকারী। ক্যারিয়ারে বিভিন্ন ক্লাবে খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। প্রথমত তিনি ইতালির বিভিন্ন ছোট কিংবা মাঝারি মানের ক্লাবে নিজের ভাগ্যেকে বাজিয়ে দেখতে থাকেন। ক্যারিয়ার শুরুর ১১ বছরে প্রায় আটটির মতো ক্লাবে খেলেছেন টনি।

তাঁর ক্যারিয়ারের উত্থান শুরু হয় পালেরমো ক্লাবের সাথে কাঁটানো ২০০৪/০৫ মৌসুম দিয়ে। ক্লাবের প্রমোশনের সাথে তাঁরও প্রমোশন হয়। সুযোগ পান ইতালিয়ান সিরিআতে নিয়মিত অংশ নেওয়া ফিওরেন্তিনা ক্লাবে। ফিওরেন্তিনার সাথে থাকাকালীন সময়ে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন মৌসুমের সেরা গোলদাতা হয়ে। বনে যান তারকা, ডাক আসে জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ থেকে।

সম্ভাবনা জাগানিয়া সেই ক্যারিয়ার আস্তে আস্তে মোড় নিতে শুরু করে। এক মৌসুমে জার্মান বুন্দেসলিগাতেও সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পর ক্লাব কর্তাদের সাথে ঝামেলায় জড়িয়ে গেলে আবার যাযাবর জীবন শুরু হয় তাঁর। ইতালি এমন কি আরব আমিরাতের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে শেষমেশ ক্যারিয়ার শেষ করেন ইতালিয়ান ক্লাব ভেরোনার জার্সি গায়ে।

  • হাল্ক (ব্রাজিল)

ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে অদ্ভুত ক্যারিয়ার যদি কেউ পাড় করে থাকেন তবে তাঁদের মধ্যে হাল্ক হবেন অন্যতম। যদিও তাঁর ক্যারিয়ারের শুরুর দিকটা স্বাভাবিক বিবেচনা করাই যায়। তিনি শুরু করেছিলেন জাপানের ক্লাব কাওয়াসাকি ফ্রন্টেলে হয়ে।

কিশোর বয়সেই তিনি পরে লোনে চলে যান জাপানের দ্বিতীয় বিভাগ লিগের দুই ভিন্ন ক্লাবে। টোকিও ভার্ডি নামক ক্লাবে থাকাকালীন সময়ে তিনি নজর কাড়েন পর্তুগিজ জায়েন্ট এফসি পোর্তোর। দারুণ সম্ভাবনা জাগানিয়া হাল্ক এরপর চলে যান রাশিয়ান ক্লাব জেনিথে কিন্তু অদ্ভুত ক্যারিয়ার এখানেই থেমে থাকেনি।

তার উত্থানের পরিবর্তে হয় অবনমন। তিনি চীনের ক্লাব সাংঘাইতে যান ২০১২ সালে। হাল্কের খেলার লিগগুলোর মান বিবেচনায় জাতীয় দলে খুব একটা সুযোগ পাওয়ার কথা ছিল না তাঁর। কিন্তু তিনি পেতেন, খুব সম্ভবত তাঁর মধ্যে থাকা প্রতিভার জোড়েই। আফসোস তা খুব একটা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়নি।

  • লাসানা দিয়ারা (ফ্রান্স)

লাসানা দিয়ারা, এফ এ কাপ, লা লিগা জেতা মিডফিল্ডার। তাঁর সামর্থ্য অন্তত ছিল আরো বেশকিছু সাফল্য পাওয়ার। কিন্তু অদ্ভুত সব দলবদলে তিনি খুব একটা সাফল্যের দেখা পাননি। তিনি তিন বছর খেলেছিলেন ইংল্যান্ডের দুই টপ টায়ার ক্লাব চেলসি ও আর্সেনালে।

সেখান থেকে আরেক ইংলিশ ক্লাব পোর্টসমাউথেও। সেখানে তাঁর খেলার ধরণ মুগ্ধ করে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে। তিনি চলে যান সেখানে। মাদ্রিদে তিনি ছিলেন তিন বছর। বড় ক্লাবের ধকল হয়ত তিনি সামলে উঠতে পারছিলেন না। এরপর তিনি চলে যান রাশিয়া, সেখান থেকে ফ্রান্স এবং আরব আমিরাত ঘুরে শেষমেষ ক্যারিয়ার শেষ করেন ফ্রেঞ্চ ক্লাব প্যারিস সেইন্ট জার্মেই এর হয়ে।

  • ফিলিপ কৌতিনহো (ব্রাজিল)

বছর দু’য়েক আগেও ব্রাজিলের মধ্য মাঠের অটো চয়েজ ছিলেন ফিলিপ কৌতিনহো। লোনে লোনেই কেঁটে যাচ্ছে কৌতিনহোর ফুটবলীয় ক্যারিয়ার। প্রথমে তিনি ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানের সাথে যুক্ত থাকার পর তিনি লোনে খেলেছিলেন ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ভাস্কো দ্য গামা এবং পরবর্তীতে স্পেন ক্লাব এসপানিওলে। সেখান থেকে লিভারপুলে নিজেকে পুরোপুরি মেলে ধরলেন তিনি।

তারকা ফুটবলারের তকমা গায়ে জড়িয়ে নেন। সেখান থেকে তিনি মনে করলেন স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনায় হয়ত আরো অধিক সাফল্য পাবেন। সেই সাফল্যের প্রত্যাশায় হানা দেয় ইনজুরি। আর সেই সাথে ক্লাবের সাথে মানিয়ে নিতে না পারার ব্যর্থতা। তিনি চলে যান বায়ার্ন মিউনিখে। সেই ধারে খেলতেই যান।

সেখানে গিয়ে নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখে বার্সায় আবার ফিরলেও সেই নিষ্প্রভতা চলতে থাকে সাথে মানিয়ে নিতে না পারার সমস্যায় তিনি চলে গেলেন ইংলিশ ক্লাব অ্যাস্টন ভিলাতে। তাও আবার ধারেই। এখন দেখবার পালা নতুন এই যাত্রায় তিনি কি করতে পারেন নতুন ক্লাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link