প্রতিটা খেলোয়াড়েরই স্বপ্নের ক্লাব থাকে। সেই ক্লাবের খেলার জন্য বেশিরভাগই নিজের অনেক ক্ষতিও করে থাকেন। আবার কারো কারো ক্ষেত্রে বিষয়টি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে আর পূরণের মতো অবস্থা থাকেনা। কিলিয়েন এমবাপ্পের ক্ষেত্রে সেরকমটি মনে হলেও হঠাৎ করেই সবকিছু পাল্টে যেতে শুরু করেছে।
সেই ছোটবেলার স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে খেলার বিষয়ে ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন। চলতি মৌসুমের আগে সর্বশেষ দলবদলে অনেক নাটকীয়তার পর পুরনো ক্লাব পিএসজিতে থেকে যেতে হয়েছিল এই ফরাসী প্লে মেকারকে। এরপর গত বছরের শেষদিকে এসে যখন আবারো এমবাপ্পে বলেন, পিএসজিতেই তিনি সুখী আছেন।
আপাতত ক্লাব বদলের কোন চিন্তা নেই তার। এরপরই ঘটল তার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মুহুর্তটি। অবশেষে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে তার চুক্তিটি হয়ে গেল। সর্বশেষ ইউরোপিয়ান ফুটবলে দলবদলের শেষ মুহুর্তেও এমবাপ্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে মেলেনি অনেক প্রশ্নের জবাব। সম্প্রতি জার্মান সংবাদমাধ্যম বিল্ডের দাবি করেছেন, ইতিমধ্যে রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছেন ফরাসি ফুটবল তারকা। আগামী গ্রীস্মে নাকি ফ্রি ট্রান্সফারে সেখানে পাড়ি জমাবেন বিশ্বকাপ জয়ী এই ফরোয়ার্ড।
কোন কোন সংবাদ মাধ্যম তো তার সাথে চুক্তি হয়ে গেছে স্প্যানিশ জায়ান্টদের, এমনটাই জানিয়েছে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই রিয়ালের প্রতি এমবাপ্পের ভালোলাগার কথা অকপটে বলে বেড়িয়েছেন। গত মৌসুমের শেষে স্প্যানিশ ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেও বর্তমান ক্লাব না ছাড়ায় আর যাওয়া হয়নি। অন্যদিকে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো চলে যাওয়ার পর রিয়াল মাদ্রিদের দলে একজন মহাতারকার শুন্যতা পূরণের জোর চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
সেই পরিকল্পনায় সবচেয়ে বড় নাম ছিল এমবাপ্পে। গত বছরেও রিয়াল সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল তাকে দলে ভেড়াতে। কিন্তু বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন এই তারকাকে কোনোভাবেই ছাড়তে রাজি হয়নি পিএসজি। পাশাপাশি হাকিয়ে বসেছিল চড়া দাম। কিন্তু সেখানে অনেক ঝামেলা থাকায় আর সামনে এগেুায়নি রিয়াল। বেড়ে যায় তাদের অপেক্ষার প্রহরও।
বর্তমানে নতুন চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে মৌসুমের বাকি সময়ে যেকোনো দলের সঙ্গে চুক্তি সেরে ফেলতে পারবেন এই গোল মেশিন। যদিও জানুয়ারির দলবদলে পিএসজি ছাড়ার ইচ্ছার কথা কখনোই বলেননি এমবাপ্পে। পিএসজির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এমবাপ্পেকে ধরে রাখতে সম্ভবপর যেকোনো কিছু করতে তারা সবসময় প্রস্তুত রয়েছেন।
তবে জার্মান পত্রিকাটির খবর অনুযায়ী, ফ্রি এজেন্ট হিসেবে আসছে গ্রীষ্মে রিয়ালে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন তিনি। বেতনাদি নিয়েও নাকি এরই মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে একরকম সমঝোতা হয়ে গেছে। রিয়ালে প্রতি মৌসুমে তিনি বেতন-ভাতা মিলিয়ে ৫০ মিলিয়ন ইউরো পাবেন।
অংকটায় কিছু রেকর্ডও হয়ে গেছে। যা বর্তমান ক্লাব সতীর্থ লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়েরের চেয়ে বেশি। দলবদলের মৌসুম এলেই কত গুঞ্জনই না আকাশে-বাতাসে ওড়াউড়ি করে। যেখানে বর্তমান সময়ে কিলিয়ান এমবাপ্পে বড় এক চরিত্র। গত কয়েক মৌসুম ধরে এই ফরাসি তারকার রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া নিয়ে কত আলোচনা আর খবর যে প্রকাশিত হয়েছে, তার সঠিক হিসাব দেওয়া বেশ কঠিন।
দলবদলের আলোচনা এলেই রিয়াল-এমবাপ্পে প্রসঙ্গ চলে আসে আবশ্যিকভাবে। এবার সম্ভবত সেই সংবাদের ইতি টানতে যাচ্ছে। চুক্তিতে থাকা বিষয়াটি নিয়ে জানা যায়, ফুটবল ইতিহাসের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত খেলোয়াড় হচ্ছেন এমবাপ্পে। জানা গেছে, জুনের দলবদলের জানালা খোলার অপেক্ষায় থাকেনি রিয়াল। এমবাপ্পের সঙ্গে আগেই চুক্তির ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছেছে তারা। আর এই চুক্তিতে আকাশছোঁয়া বেতন পাচ্ছেন ফরাসি তারকা। ২৩ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড নাকি চুক্তি অনুযায়ী সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন।
৫০ মিলিয়ন ইউরোকে বাংলাদেশি মুদ্রায় হিসাব করলে ৪৮২ কোটি টাকারও বেশি দাড়ায়! যদি তা-ই হয়, তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া ফুটবলার হতে যাচ্ছেন এমবাপ্পে। বেতনের অঙ্কে ছাড়িয়ে যাবেন মেসি ও নেইমারকে। এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোতে রিয়াল ও পিএসজি মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। ফেব্রæয়ারি ও মার্চে দুই লেগের খেলা মাঠে গড়ানোর কথা।
এই ম্যাচ দুটি শেষ হওয়ার আগে রিয়াল ও এমবাপ্পে কোনও প্রকার আলোচনার বসতে পারবে না বলেই এতদিন শোনা গিয়েছিল। সেই ২০১৭ সাল থেকে এমবাপ্পের দিকে ‘নিশানা’ লাগিয়ে রেখেছে রিয়াল। এরপর থেকে হওয়া প্রত্যেকটা দলবদলে ফরাসি তরুণের বার্নাব্যুতে আসার গুঞ্জন শোনা গেছে। তবে ইউরোপিয়ান মিডিয়ার খবর, পিএসজির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা তো দূরে থাক, তারা কোনও উত্তরই দেয়নি বলে জানা গেছে।
এদিকে ফরাসি ক্লাবটির সিদ্ধান্তও অনেকটাই স্পষ্ট। তারা কোনোভাবেই এমবাপ্পেকে বিক্রি করবে না। কিন্তু এবারের গ্রীষ্মে চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া এই ফরোয়ার্ড যদি পার্ক ডু প্রিন্সেসে আর থাকতে না চান, তাহলে ফ্রিতে তাকে ছেড়ে দিতে হবে। তাই এমবাপ্পেকে গত গ্রীষ্মেই বিক্রি করে দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন ফুটবলবোদ্ধারা। তবে পিএসজির পূর্ণ বিশ্বাস রেখে বলেছে , তারা এমবাপ্পেকে রাজি করাতে পারবে চুক্তি নবায়ন করার ব্যাপারে। নানা মাধ্যম থেকে জানা গেছে, যেহেতু চুক্তির মেয়াদ শেষ তাই ফ্রি খেলোয়াড় হিসেবে এমবাপ্পে নাকি কোনভাবেই পিএসজিতে থাকতে রাজি হচ্ছেন না।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ১ জুলাই থেকেই রিয়াল মাদ্রিদের সাদা জার্সি শোভা পাবে এমবাপ্পের গায়ে। গত বছরের আগস্টে এসে এমবাপ্পের জন্য ১৬ কোটি ইউরোর প্রস্তাব পাঠিয়েছিল রিয়াল। কিন্তু দলবদলের মাত্র সাত দিন বাকি থাকায় সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি পিএসজি।
রিয়াল তখন আরও এক কোটি ইউরো বাড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এরপরেও প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এবার আর এসব নিয়ে ভাবতে চাইছেন না এমবাপ্পে-রিয়াল কোন পক্ষই। তাইতো বড় কোন নাটকীয়তা না হলে মাস ছয়ের পরই এমবাপ্পে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হয়ে যাচ্ছেন। অপেক্ষাটা কেবল আনুষ্ঠানিক ঘোষণার।