জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের উত্থান, পতন, ঘুরে দাড়ানো এবং আবারও পতন; সব অধ্যায় খুব কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। নিজের জীবনেও এমন উত্থান ও পতন দেখেছেন। আজ নায়ক, তো কাল ভিলেন হয়েছেন। এমন বর্নময় জীবনের একপ্রান্তে এখন নীরব, শান্ত ও শূন্য এক সময় কাটাচ্ছেন সাবেক জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক হিথ স্ট্রিক।
২০১৯ বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়নি জিম্বাবুয়ে দল। যার কারণে আর্থিকভাবে আরো দূর্বল হয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট (জেডসি)। ওই সময়ে দলের হেড কোচের দায়িত্বে ছিলেন হিথ স্ট্রিক। এছাড়া ব্যাটিং কোচ হিসেবে ল্যান্স ক্লুজনার, বোলিং কোচ ডগলাস হন্ডো, ফিল্ডিং কোচ ওয়াল্টার ছাওয়াগুতো সহ কোচিং স্টাফের অনেকেই তাদের চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ বেতন পাননি। চুক্তির মোটা অংকের টাকাই ছিলো বকেয়া। জিম্বাবুয়ে ওই বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারলে খেলোয়াড় সহ কোচিং স্টাফের সবার বেতন অন্তত পরিশোধ করতে পারতো জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড।
অবশ্য কপাল পোড়া বলা যেতে পারে জিম্বাবুয়ের। রিভিউ সিস্টেম না থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের কাছে গিয়েও আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে হেরে যায় জিম্বাবুয়ে। হিথ স্ট্রিক বলেছিলেন, ‘শুধু আমরাই নয় স্কটল্যান্ড ভালো খেলার পরেও কয়েকটা বাজে সিদ্ধান্তের কারণে বাদ পড়ে যায়।’
কোয়ালিফাইং রাউন্ডে বাদ পড়ার এক সপ্তাহ বাদেই স্ট্রিক সহ পুরো কোচিং স্টাফদের চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। স্ট্রিক তখন বলেছিলেন, ‘তিনি ২ বছর আগে দায়িত্ব নেওয়া সময় জিম্বাবুয়ের জয়ের হার ছিলো মাত্র ২০%! সেখান থেকে তাঁর অধীনে ৩৭.৫% ম্যাচে জয় পায় আফ্রিকার দেশটি।’
এমন সাফল্যের পরেও কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আর ভাগ্য সাথে না থাকায় বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। স্রেফ এই কারণে বরখাস্ত করায় অনেকটাই ক্ষোভ দেখান স্ট্রিক।
স্ট্রিক আরও বলেন, ‘বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারস পর্যন্ত আমাদের জয়ের হার ছিলো ৩৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭ বছর পর আমরা ওয়ানডে সিরিজেও জয়লাভ করি। আমি মনে করি আমার কাছে যেমন প্রত্যাশা ছিলো আমি সেটা দিতে পেরেছি।’
এরপরেও সেসময় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের প্রধান নির্বাহী ফয়সাল হাসনাইন স্ট্রিককে একটি মেইলের মাধ্যমে পদত্যাগ করার কথা জানায়। এছাড়া সেখানে তিনি জানান পদত্যাগ না করলে তাঁকে চাকুরিচ্যুত করা হবে! অবশ্য এর এক মাস পরে ব্যর্থতার জন্য খোদ প্রধান নির্বাহী ফয়সাল নিজেই পদত্যাগ করেন। এরপরই বোর্ডের বিরুদ্ধে দেনা-পাওনা নিয়ে মামলা করেন স্ট্রিক! এমনকি জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটকে দেউলিয়া ঘোষণা করার আবেদনও জানান তিনি।
কিছুদিন পর ব্যক্তিগতভাবেও অন্ধকারে তলিয়ে যান।
এর তিন বছর পরই জুয়াড়ির সাথে মিলে ফিক্সিংয়ের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় ৮ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন হিথ স্ট্রিক। জুয়াড়ির কাছ থেকে ২টি বিটকয়েন যা প্রায় ৭০ হাজার ডলার এবং একটি আইফোন নেওয়ায় স্ট্রিককে এই শাস্তি দেন আইসিসির দুর্নিতি দমন ইউনিট (আকসু)। আকসুর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী হিথ স্ট্রিক ২০১৮ সালে আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগ সহ জিম্বাবুয়ের বেশ কিছু সিরিজের তথ্য তিনি জুয়াড়িদের কাছে দিয়েছেন।
জুয়াড়ির সাথে নিজেকে জড়ানোর ব্যাপারটা কেনো, কিভাবে আসলো? ২০০৪ সালে যখন তিনি অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন তখন? নাকি হেড কোচ অ্যালান বুচারের অধীনে বোলিং কোচ হিসেবে সফল হওয়া সত্ত্বেও হেড কোচের দায়িত্ব না পাওয়ায় তখন?
গল্পটা একটু পেছন থেকে শুনতে হবে।
হিথ স্ট্রিক আসলে নিজের ভাগ্য বদলাতে চাচ্ছিলেন। স্ট্রিক বুলাওয়েতে নিজের একটি অ্যাকাডেমি খোলার পাশাপাশি তিনি বিদেশেও আয়ের ব্যবস্থা করতে চাচ্ছিলেন!
স্ট্রিক বেশ ভালো কথা বলতে পারতেন এনদেবেলে ভাষায়। যে ভাষা প্রায় ৪ মিলিয়ন মানুষ বলে থাকে। জিম্বাবুয়ের ব্ল্যাক আফ্রিকান্স এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। এবং স্ট্রিক এই ভাষায় কথা বলতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেবোধ করতেন। এমনকি তিনি ইংরেজী বা অন্য ভাষার চেয়েও এনদেবেলেতে সবচেয়ে ভালো কথা বলতে পারতেন।
স্ট্রিকের বড় দাদা ছিলেন মূলত ইংল্যান্ডের। ১৮৯৬ সালে বুলাওয়ে থেকে ৬০ কি.মি উত্তরে তুর্ক মাইন এলাকায় তিনি জায়গা কিনেন। প্রায় চার জেনারেশন ধরে গরুর ফার্ম, জেব্রা, জিরাফ এসব পালন করতো স্ট্রিক পরিবার। সেখানে একটি সাফারি কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করে তাঁরা।
সেসময় জিম্বাবুয়েতে প্রচুর কৃষ্ণাঙ্গ থাকলেও সব জমির মালিকানাই ছিল শ্বেতাঙ্গদের দখলে। এরপর ১৯৮০ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে রবার্ট মুগাবে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেলে শুরু হয় পরিবর্তন। এরপর মুগাবের নির্দেশে শ্বেতাঙ্গদের কাছ থেকে অধিকাংশ জমিই নিয়ে নেওয়া হয়। স্ট্রিকদের ৭০% জমিই তখন চলে যায় সরকারের দখলে!
তবুও স্ট্রিক কখনোই কৃষ্ণাঙ্গদের উপর ক্ষোভ দেখাননি। স্ট্রিকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ব্যাপার যেটি বা যে কারণে স্ট্রিককে সব শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটারের মধ্যে আলাদা চোখে দেখার হতো সেটি হলো তিনি কালো, সাদা কখনো বিভেদ দেখতেন না। তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের ভাষায় অনর্গল কথা বলতেন, তাদের সাথে মিশতেন এবং বেশ ভালো ব্যবহার করতেন। তিনি বর্ণবাদী কখনোই বর্ণবাদী আচরণ করতেন না।
জিম্বাবুয়ের সাবেক ক্রীড়া মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘স্ট্রিক আমার বেশ ভালো বন্ধু। সে রাজনীতির পছন্দ করেনা। সে তার কাজটা ঠিকভাবে করতে চায় এবং বুঝতে চায় যে কাজটা ঠিক আছে। যারা ক্রিকেট পছন্দ করে এবং রাজনৈতিক ভাবে যারা ক্রিকেটকে ভালোবাসে উভয়পক্ষকেই স্ট্রিক পাশে রাখতে চায়।’
১৯৯৯ সালে হিথ স্ট্রিক যখন জাতীয় দলের তারকা তখন পেসার ক্রিস্টোফার এমপফু ছিলেন স্কুলে। এমপফু সবসময়ই স্ট্রিককে ফলো করতেন। ২০০৩ সালে সুযোগ পেলেন নেটে বোলিংয়ের। সেসময় স্ট্রিকের সাথে কাছ থেকে কথা বলার সুযোগ হয় এমপফুর। এবং বেশ সাদরেই এগিয়ে এসে এমপফুর সাথে সময় দিয়েছিলেন স্ট্রিক।
২০০৪ সালের এপ্রিলে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে অধিনায়কত্ব ছাড়ার ব্যাপারে বোর্ডকে চিঠি দেন স্ট্রিক! এর মাঝে একটি ছিলো নির্বাচক প্যানেলে পরিবর্তন আনা। এতো সাহস দেখানোয় এটা নিশ্চিত যে স্ট্রিককে নিজে সরে না দাঁড়ালেও অধিনায়কত্ব থেকে তাঁকে অব্যহতি দেওয়া হবে।
পরবর্তীতে তাঁর বাবা ডেনিস স্ট্রিক গণমাধ্যমে জানান যে স্ট্রিক জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট কে কোনো আল্টিমেটামই দেননি! এরপরই হিথ স্ট্রিককে সরিয়ে টাটেন্ডা টাইবুকে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ডেনিস স্ট্রিক জানান জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট আইন না মেনে স্ট্রিকের সাথে চুক্তিভঙ্গ করেছে!
এরপর এর প্রতিবাদ জানিয়ে স্ট্রিক সহ ১৩জন শ্বেতাঙ্গ ক্রিকেটার দল থেকে সরে দাঁড়ায়! পরবর্তীতে ঘরের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইবুর নেতৃত্বে মাত্র ৩৫ রানেই গুড়িয়ে যায় জিম্বাবুয়ে!
ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকায় স্ট্রিক তখন কাউন্টি লিগে ওয়ারউইকশায়ারের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন। অভিষেকেই ১৫৮ রানে শিকার করেন ১৩ উইকেট! প্রথম মৌসুমেই শিরোপা জেতেন দলের হয়ে। এরপর এক বছরের কম সময়েই আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে জিম্বাবুয়ের হয়ে ফিরেন তিনি!
অবশ্য তাঁর সাথে দল ছেড়ে দেওয়া বাকিরা ফিরেননি। কাউন্টিতে ভালো আয়ের সুযোগ থাকলেও দলের প্রয়োজনে ফিরে আসেন আবারও! তবে খুব বেশি সময় খেলতে পারেননি তিনি! এমপফুর অভিষেক ম্যাচই ছিলো তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ।
হিথ স্ট্রিক তাঁর ক্যারিয়ারে বর্ণবাদী আচরণ তো করেননি বরং জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের প্রতি সবসময়ই দেখিয়েছেন প্রচন্ড রকমের ভালোবাসা।
২০১৭ সালে প্রথমবার জুয়াড়ি দিপক আগারওয়ালের সাথে পরিচয় হয় হিথ স্ট্রিকের। দিপক প্রথমে জিম্বাবুয়েতে একটি টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজনের কথা জানায় স্ট্রিককে। স্ট্রিক এতে বেশ খুশি হয়ে যান। কারণ ৩ বছরের বেশি সময় ধরে কোনো লিগ হয়নি জিম্বাবুয়েতে।
স্ট্রিক ভেবেছিলেন একটি টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করা গেলে সেখানে বোর্ডেরও লাভ হবে ক্রিকেটারদেরও বেশ আয় হবে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএলের) মতো না হলেও অন্তত চোখে লাগে এমন একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট চাচ্ছিলেন স্ট্রিক।
২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বোলিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান স্ট্রিক। অবশ্য তখন তিনি ভেবেছিলেন প্রধান কোচের দায়িত্বটাও তিনিই পাবেন। কিন্তু ২০১০ সালে অ্যালান বাচারকে প্রধান কোচের দায়িত্বে আনে জিম্বাবুয়ে। পরের বছর বিশ্বকাপে সময়টা খারাপ গেলেও বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্টে দারুন জয় পায় তাঁরা।
ওই মৌসুমের পর জিম্বাবুয়ের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগে ক্রিস গেইল, শন টেইট, রায়ান টেন ডেস্কাট, ডার্ক ন্যানিসের মতো তারকারা খেলেছেন। প্রথম মৌসুমে স্ট্যানবিক ব্যাংক স্পনসর করলেও পরের মৌসুমেই তাঁরা সরে যায়! এরপরের বার স্পন্সর ছাড়া লিগ চললেও এক মৌসুম পরেই সেটি বন্ধ হয়ে যায়!
এরপর জিম্বাবুয়ের হয়ে দায়িত্বে আর চুক্তির মেয়াদ না বাড়লে স্ট্রিক যুক্ত হন বাংলাদেশের কোচিং প্যানেলে। তবে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে কিছু একটা করার ইচ্ছেটা ছিলো মনের ভিতর। বুলাওয়েতে নিজের ফান্ডিংয়ে করেছিলেন বেশ ভালো একটি অ্যাকাডেমি। জাতীয় দলের হেড কোচ হবার ইচ্ছে টাও ছিলো দীর্ঘদিনের।
জিম্বাবুয়ের হতাশাজনক পারফরম্যান্সে সেই সুযোগটাও এলো ২০১৬ সালে। হিথ স্ট্রিক দায়িত্ব পেলেন জিম্বাবুয়ের হেড কোচ হিসেবে। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পরেও ২০১৯ পর্যন্ত কোনো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টই ছিলো না জিম্বাবুয়েতে। ২০১৯ সালে কোচিং প্যানেল থেকে বরখাস্ত হবার পর সেই জুয়াড়ি দিপক আগারওয়ালের সাথে কাজ শুরু করেন স্ট্রিক! সাফারি ব্লাস্ট প্রজেক্ট নামে টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজনের কথাও জানায় আগারওয়াল।
এর আগে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) সময় হিথ স্ট্রিকের সাথে যোগাযোগ করেন আগারওয়াল। বাংলাদেশের চার ক্রিকেটারদের মোবাইল নাম্বার সহ বেশ কিছু তথ্য নেন তিনি। হিথ স্ট্রিক তখন বাংলাদেশের কোচ না থাকলেও খেলোয়াড়দের সাথে যোগাযোগ থাকায় তিনি অনেক তথ্যই সহজে দিয়ে দেন আগারওয়ালকে। আগারওয়াল অবশ্য স্ট্রিককে বলেছিলো, ‘আমি এখানে টাকা বিনিয়োগ করে যা আয় করবো সেটা দিয়েই আমরা জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করবো।’
পরের বছর ২০১৮ সালে স্ট্রিকের কাছে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ও আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগের (এপিএল) খেলোয়াড়দের তথ্য চায় আগারওয়াল। বিনিময়ে ২টি বিটকয়েন যা ৭০ হাজার ডলারের সমান এবং একটি আইফোন পান স্ট্রিক।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আকসু থেকে স্ট্রিককে জানানো হয় শ্রীগ্রই এক সাক্ষাতের জন্য তাঁকে ডাকা হবে। এতে স্ট্রিক অনেক কিছু আঁচ করতে পারেন। আগারওয়ালকেও এর মাঝে আকসু ডেকে সাক্ষাত করেছেন সেটি জানার পর কিছুটা ভয় পেয়ে যান স্ট্রিক। আগারওয়ালের সাথে আলাপ করে দু’জনেই আকসুকে একই তথ্য দেওয়ার পরামর্শ করেন এবং আদান-প্রদান করা সমস্ত মেসেজই ডিলেট করে দেন স্ট্রিক!
যার কারণে স্ট্রিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে লম্বা সময় অতিবাহিত হয়। প্রায় আড়াই বছর তদন্ত শেষে স্ট্রিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় স্ট্রিককে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয় আকসু। স্ট্রিক বলছিলেন, ‘আট বছর আর আজীবন তাঁর জন্য একই ব্যাপার কারণ নিষেধাজ্ঞা শেষে তাঁর বয়স হবে ৫৫ বছর!’
স্ট্রিকের এমন কান্ডে পরিবার, অ্যাকাডেমি, মাতৃভূমি সবকিছু থেকেই সম্পর্কে যেনো ফাটল ধরেছে। নিষেধাজ্ঞার পরই অ্যাকাডেমির দায়িত্ব থেকে বাধ্য হয়ে নিজের নাম তুলে নেন স্ট্রিক। তাঁর বাবা-মা ছিলেন ক্রিকেটের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। সবশেষ অ্যাকাডেমির মিটিং শেষেও অশুসিক্ত ছিলেন স্ট্রিকের মা। নিষেধাজ্ঞার পর ব্যক্তিগত ফার্ম, আর মাছের খামারেই সময় দিচ্ছেন সাবেক জিম্বাবুয়ের এই তারকা।
আফ্রিকার একটি প্রবাদ আছে, ‘আপনি একজনকে হয়তো আফ্রিকার বাইরে নিয়ে যেতে পারবেন কিন্তু তাঁর ভেতরের আফ্রিকাকে কখনো বাইরে নিতে পারবেন না।’
স্ট্রিকের কথায় সবসময়ই পরিষ্কার ছিলো তিনি জিম্বাবুয়েকে কতটা ভালোবাসেন। তবে জুয়াড়ির সাথে কাজ করে ক্যারিয়ারের সব অর্জন যেনো ঢাকা পড়ে গেছে কালো ছায়ায়! এখন তিনি ক্রিকেট থেকে দূরে শূন্য একজন! বুলাওয়ের আকাশের অজস্র নীলের মত, কিংবা আফ্রিকান ঘন বনের নীরবতার মতই এখন তাঁর জীবন। ভয় হয়, ভবিষ্যতে হয়তো এই শূণ্যতা আর নীরবতার মাত্রাটা আরো বাড়বে।