স্বপ্ন ছোয়ার দূরত্বে

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিলেট সানরাইজার্সের বিপক্ষে ম্যাচ। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের হয়ে অভিষিক্ত হলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী নিপুণ। চট্টগ্রামের একেবারে ব্যাটিং পিচ। বোলাররা বল ফেলার জায়গাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না যেন। এমন সময় প্রথম বিপিএল খেলতে নামা এক পেসার উত্তাল হয়ে উঠলেন। বোলারদের জন্য মৃত পিচকেও জয় করলেন মৃত্যুঞ্জয়।

নিজের অভিষেক ম্যাচে ডেথ ওভারে বল করতে এসে প্রথম দুই বলেই দিলেন ১০ রান। আসলে ব্যাটসম্যানকে এই দুটি বাউন্ডারি মেরে ফাঁদে ফেলেছিলেন তিনি। প্রমাণ পাওয়া গেল সেই ওভারেই। যেই এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে চড়ে জয় পেতে চাইছিল সিলেট তাঁর উইকেট নিয়েই খাতা খুললেন। এরপরের দুই বলে আরো দুই উইকেট। বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক।

এরপর ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে আরো ভয়ংকর মৃত্যুঞ্জয়। মাত্র ১২ রান দিয়ে নিলেন ৪ উইকেট। তবে এতেই আলোচনার শেষ হয় না। ক্রিকেটের আরো গভীরে ঢোকা প্রয়োজন। সাকিব ব্যাট হাতে কী দারুণ ফর্মে আছেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। সেদিনও তখন মাত্র হাফ সেঞ্চুরিটা করেছেন। তবে এবারো সেট সাকিবের উইকেট নিয়ে মৃত্যুঞ্জয়ের মাত্রাটা শুরু। এরপর নিয়েছেন আরো তিন উইকেট।

ডেথ ওভারে চট্টগ্রামের বিপক্ষে রান তোলা তো দূরের কথা। মৃত্যুঞ্জয়ের কারণে বাইশ গজে টিকতেই পারছেন না বিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানরা। ডেথ ওভারে তিনি বোলিং করতে আসা মানেই উইকেট নিবেন। তাও আবার বেঁছে বেঁছে সেট ব্যাটসম্যানদের। খেলা ৭১-কে দেয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছিলেন ডেথ ওভারে ব্যাটসম্যানদের সাথে এই মাইন্ড গেমটাই তিনি উপভোগ করেন। আর সেট ব্যাটসম্যানদের শট খেলার লোভ দেখিয়েই উইকেট গুলো নেন।

কথা গুলো তিনি শুধু বলার জন্য বলেননি। আজও সিলেটের বিপক্ষে নিজেদের বাঁচা মরার লড়াইয়ে তাঁর প্রমাণ মিললো। এই ম্যাচ জিতলেই পরের কোয়ালিফায়ার খেলতে পারবে চট্টগ্রাম। তবে বিজয় আর সিমন্সের জুটি চট্টগ্রামকে বেশ ভোগাচ্ছিল। ৩৮ বল থেকে এই দুই ব্যাটসম্যান যোগ করেন ৫৪ রান। এমন সময়েই আবার বোলিংয়ে আনা হয় এই বাঁহাতি পেসারকে।

এবারো মৃত্যুঞ্জয়ের একই স্ট্র্যাটেজি। আগের ওভারে শেষ বলটায় সিমন্স একটা বাউন্ডারি মারলেন মৃত্যুঞ্জয়কে। তবে পরের ওভারে বল করতে এসেই তুলে নিলেন এই ক্যারিবিয়ানের উইকেট। সেই ওভারেই ফেরালেন আরেক সেট ব্যাটসম্যান বিজয়কে। তাঁর বোলিংয়ে আবারো ম্যাচে ফিরেছে চট্টগ্রাম। নিজের শেষ ওভারেও আরেকটি সুযোগ তৈরি করেছিলেন। তবে শরিফুল ক্যাচ মিস করায় আর উইকেটটা পাননি।

সবমিলিয়ে আজও চার ওভার বোলিং করে তুলে নিয়েছেন তিন উইকেট। এই ম্যাচসহ মোট ৬ টি ম্যাচ খেললেন চট্টগ্রামের হয়ে। ইতোমধ্যেই আসরের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের দৌড়ে চলে এসেছেন। ৬ ম্যাচে এই বোলারের ঝুলিতে জমা পড়লো ১৩ উইকেট। ১৭ উইকেট নিয়ে এই তালিকার শীর্ষে আছেন মুস্তাফিজুর রহমান। আর ১৩ উইকেট নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় উঠে এসেছেন চতুর্থ অবস্থানে। অবশ্য বাকিদের থেকে ম্যাচও অনেক কম খেলেছেন এই পেসার।

সবমিলিয়ে মৃত্যুঞ্জয় চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বোলিং লাইন আপকে আরেকধাপ উপরে নিয়ে গিয়েছেন। নতুন বলে আজকে আগে এই পেসারকে খুব একটা ব্যবহার করেনি চট্টগ্রাম। তবে নতুন বলেও দারুণ কার্যকর এই পেসার। আর ব্রেক থ্রু দিতে তো তাঁর ক্যারিশমা বিপিএলে দেখাই যাচ্ছে। ফলে আফগানিস্তান সিরিজের জন্য নির্বাচকদের ভাবনায় বেশ ভালো ভাবেই আছেন এই বাঁহাতি পেসার।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link