বিহারের নিজস্ব সাকিব

স্কোরবোর্ডে রান তখন ৭১। টপ অর্ডারের সবাই ততক্ষণে থিতু হয়েছ প্যাভিলিয়নে। প্রথম শ্রেণি ম্যাচ, পূর্ণ চারদিনের খেলার প্রথম দিনেই এমন বিপাকে পড়ে যাওয়া থেকে গড়ে ফেলেন বিশ্বরেকর্ড। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচেই ত্রিশতক হাঁকানোর রেকর্ডের মালিক এখন বিহারের সাকিবুল গনি।

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট রঞ্জি ট্রফি। সেই টুর্নামেন্টের প্লেট পর্বের ম্যাচে কোলকাতায় মুখোমুখি হয়েছিল বিহার ও মিজোরাম। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় বিহার। শুরুতেই তাঁদেরকে ধাক্কা দিয়ে দেয় মিজোরামের বোলাররা। ৭১ রানে তিন উইকেট তুলে নেয় বিহারের। সেই সময় ব্যাট হাতে প্রথম বারের মতো প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে বাইশ গজে পা রাখেন সাকিবুল গনি।

তারপর পুরোটাই যেন স্বপ্নে ঘটা এক রুপকথা হয়ে রয়। নিজের প্রথম ম্যাচেই গনি নিজের নামটি লিখিয়ে ফেলেন ইতিহাসের পাতায়। এর আগে পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে ত্রিশতক করার রেকর্ড নেই। গনি তাঁর তিনশ পার করা ইনিংসে বল খেলেছেন ৪০৫টি। ৪০৫তম বলে আউট হওয়ার আগে তিনি রান করেছিলেন ৩৪১। গনির এই অনবদ্য ইনিংসে পুরোটা সময় জুড়ে তাঁর সঙ্গী ছিলেন বাবুল কুমার।

দলের প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে নিতে বাবুল এবং গনি মিলে গড়ে তোলের এক দুর্ভেদ্য দূর্গ। সেই দূর্গে আক্রমণের কোন উপায় জানা ছিল না মিজোরাম বোলারদের। তাঁদেরকে দর্শক বানিয়ে গনি-বাবুল জুঁটি রান তুলতে থাকেন নিজেদের স্কোরবোর্ডে। দুইজনের জুঁটি ভাঙে ৫৩৮ রানে। বাবুল কিছুটা রয়েসয়ে খেলার চেষ্টা করলেও অপরপ্রান্তে বেশ মেরে খেলেছেন গনি। বাবুল কুমার শেষ পর্যন্ত ২২৯ রানে অপরাজিত থাকেন।

৮৪.১৯ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করা গনি চার মেরেছেন ৫৬টি। আকাশে বল ভাসিয়ে রান তোলার তাড়াটা তাঁর খুব একটা ছিল না। তাই ছয়ের সংখ্যা মাত্র দুইটি। এসব কিছু মিলিয়ে তিনি নিজের জায়গাটা করে ফেলেছেন ইতিহাসে। ২২ বছর বয়সী এই তরুণ দারুণ সম্ভাবনাময় একজন ক্রিকেটার। ২০১৯ সালে তাঁর অভিষেক হয় ‘লিস্ট এ’ ক্রিকেটে। ২০২১ সালে সৈয়দ মুশতাক আলী টুর্নামেন্টে স্টেট দলের হয়ে শেষ লিস্ট এ ম্যাচ খেলতে নেমেছেন সাকিবুল গনি।

মজার বিষয় এর আগে প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটাও নিজের দখলে রেখেছিলেন ভারতীয় এক ক্রিকেটার। ২০১৮ সালে অভিষেকে সর্বোচ্চ ২৬৭ রান করেছিলেন মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেটার অজয় রথেরা।কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে এক মৌসুমের বিরতির পর মাঠে গড়িয়েছে রঞ্জি ট্রফি। মাঠে ফিরেই বেশ কয়েকটা রেকর্ডের সাক্ষী হয়ে রইলো এবারের রঞ্জি ট্রফি।

সাকিবুল গনির অভিষেকে ত্রিশতক ছাড়াও ইয়াশ ধুল তৃতীয় ব্যাটার হিসেবে পর পর দুই ইনিংসে দুইটি শতক হাঁকিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। সময়ের পরিক্রমায় আরো বেশ কিছু রেকর্ডের সাক্ষী হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে এবারের রঞ্জি ট্রফির।

এই পর্যায়ে উঠে আসা সহজ ছিল না সাকিবুলের। কৃষকের ছেলে সাকিবের কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। ভাই ফয়সাল গনিও ক্রিকেটার ছিলেন, বিহারের হয়ে খেলেছেন কোচবিহার ট্রফি। তবে, বাবা চাননি ছেলেরা ক্রিকেট খেলুক। চেয়েছিলেন কৃষি কাজে বাবাকে সাহায্য করুক। তবে, খেলা ছেড়ে দেওয়ার পর ফয়সাল বাবার পাশে দাঁড়াতে একটা খেলার সরঞ্জাম বিক্রির দোকান খুলে ফেললেন।

সাকিবকে এরপর খুঁজে বের করেন অজয় রাত্রা। অজয় তখন বিহার অনূর্ধ্ব-১৩ দলের কোচ। মইন উল হক স্টেডিয়ামে গনির খেলা দেখে ভালো লেগে যায় এই কোচের। সব থেকে বেশি নজর কেড়েছিল সাকিবের মন খুলে শট নেওয়ার ক্ষমতা। সেই বছর বিহারের অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়ে ৬৮৫ রান করেছিলেন সাকিব। সর্বোচ্চ রান ছিল ২৮২। বাকিটা ইতিহাস!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link