উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলর প্রথম লেগের ম্যাচে জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে মাঠে নামবে পিএসজি-প্যারিস সেন্ট জার্মেই। প্রথম লেগের খেলাটি ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হওয়ার এবার নিজ ঘর সান্তিয়াগো বার্নাবুতে লিওনেল মেসি, কিলিয়েন এমবাপ্পে, নেইমারদের আতিথ্য দেবে কার্লো আনচেলত্তির দল। তাই স্বাভাবিকভাবেই ফুটবলপ্রেমীদের নজর থাকবে স্পেনের রাজধানীতে।
রাত দুই টায় পরাশক্তি দুই দলের মহারণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম লেগে এমবাপ্পের একমাত্র গোলে জয়ের পর অঅজ রাতে কিছুটা এগিয়ে থাকবে পিএসজি। কিন্তু খেলাটি যখন বার্নাব্যুর মাঠে তখন রিয়ালকে এগিয়ে রাখার কোন বিকল্প নেই। তবে দুই দলের লড়াইয়েল আগে অনেক পরিসংখ্যান সামনে চলে এসেছে। এই যেমন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে পিএসজি নিজেদের শেষ আটটি অ্যাওয়ে ম্যাচে স্প্যানিশ যে কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাত্র একটি জয় পেয়েছিল। বাকি সাতটি ম্যাচের মধ্যে পাচঁটিতে পরাজয় আর দুটি শেষ হয় অমিমাংসিতভাবে।
এছাড়া উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নিজেদের সর্বশেষ দশটি প্রথম লেগের নক আউট ম্যাচে হারের পর নয়বার বাদ পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে পিএসজি প্রথম লেগে জয়ের পরও নক আউট পর্বে তাদের শেষ আটটির মধ্যে তিনটি থেকে বিদায় নেই। আজকের ম্যাচে নামার আগে পরিসংখ্যান দুই দলের জন্যই সতর্কবার্তা। প্রথম লেগের ম্যাচে পার্ক দেস প্রিন্সেসের মাঠে মেসি, নেইমার থাকার পরও মধ্যমনি ছিলেন এমবাপ্পে। পুরোপুরি ফিট রাখতে সর্বশেষ লিগ ম্যাচে এই প্লে মেকারকে বসিয়ে রাখে পিএসজি।
তবে তাঁর ফিট হওয়ার খবর নিয়ে নানারকম মন্তব্য শোনা গেছে। বার্নাব্যুতে খেলা বলে এমনিতে ভয়ে থাকে ফরাসী জায়ান্টরা। এমবাপ্পেকে বিশ্রামে দিয়ে পূর্ণ ফিট হিসেবে পেয়ে সেই ভয় তাড়ানোর বড় পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। তবে রিয়াল শুধু এমবাপ্পেকে নিয়েই নয় মেসি-নেইমারকে আটকানো নিয়েও পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। প্রথম লেগে হারের কারণে জয়ের বিকল্প নেই স্প্যানিশ জায়ান্টদের। অন্যদিকে ড্র করলেই কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করবে মাউরিসিও পোচেত্তিনোর শিষ্যরা। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে রিয়াল মাদ্রিদের পারফরম্যান্স দলটির জন্য সন্তোষজনক।
বিশেষ করে পিএসজি যেখানে হেরেছে সেখানে স্প্যানিশ লা লিগায় নিজেদের শেষ ম্যাচেও বড় জয়ের স্বাদ পেয়েছে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। যে ম্যাচে কার্লো আনচেলত্তির দল পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ৪-১ গোলের বড় জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে। রিয়ালের হয়ে পিছিয়ে পড়া সেই ম্যাচে ৪ গোল করেন এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা, লুকা মডরিচ, করিম বেনজেমা ও মার্কো এসেনসিও।
টনি ক্রুসের হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে একাদশে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন কামাভিঙ্গা। দল পাল্টে রেনে থেকে ৩১ আগস্ট রিয়ালে যোগ দেয়া এই মিডফিল্ডার সেই ম্যাচের পরই সাফ জানিয়ে দেন যে, পিএসজি বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য তিনি প্রস্তুর হয়ে আছে। খেলার জন্যও মুখিয়ে আছেন বলে মাঠে নামতে তরও নাইক সইয়েছেনা।
পিএসজির বিপক্ষে মাঠে নামার আগে সেই জয়কে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন ক্লাবটির অভিজ্ঞ কোচ কার্লো আনচেলত্তি। জয়ের ব্যপারে আশাবাদী হয়ে তিনি বলেন, ‘পিএসজির বিপক্ষে আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামবে রিয়াল মাদ্রিদ। ঘরের মাঠে নিজেদের সেরাটাই দেবে খেলোয়াড়রা। এই ম্যাচের জয় পিএসজির বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য আমাদের অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে নিশ্চিত করে। আশা করছি এই পারফরমেন্সের পুনরাবৃত্তি করার পাশাপাশি জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারব।’
রিয়াল মাদ্রিদ যখন জয় নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রস্তুতি সেরেছে তখন উল্টো চিত্র প্যারিসে। ফরাসী লিগ ওয়ানে নিজেদের শেষ ম্যাচে নিসের কাছে হারের তিক্ত স্বাদ নিতে হয়েছে দলটিকে। যদিও তার আগে নতের কাছেও হেরেছিল পোচেত্তিনোর দল। নিসের কাছে পিএসজি হারল টানা দ্বিতীয়বার। কিছুদিন আগে ফ্রেঞ্চ কাপে টাইব্রেকারে হেরেছিল প্যারিসের প্রতিনিধিত্ব করা ক্লাবটি। গেল ডিসেম্বরে লিগেই পিএসজির মাঠে মূল্যবান পয়েন্ট কেড়ে নিয়েছিল নিস। সর্বশেষ ম্যাচে কার্ডের খড়ার পাশাপাশি বিশ্রাম নিতে ছিলেন না এমবাপ্পে। রিয়ালের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে তাকে পাওয়া নিয়েশঙ্কা তৈরি হলে পিএসজি বলছে তিনি নাকি পুরোপুরি ফিট আছেন।
যদিও সংবাদ মাধ্যমের কাছে আসা নানা খবরে কিছুটা অনিশ্চিত এমবাপ্পের আজকের ম্যাচ খেলা নিয়ে। ইনজুরির কারণে তাকে যদি পিএসজি না পায় তাহলে রিয়াল মাদ্রদিদের জন্য সুখবরই হতে পারে। চলতি ২০২১-২২ মৌসুম শেষ হওয়ার পরই পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে এমবাপ্পের। গুঞ্জন রয়েছে, মৌসুম শেষে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে যোগ দেবার সম্ভাবনাই নাকি এখন অনেক বেশি। যদিও এর আগে এমবাপ্পে দলে পেতে রিয়ালের দেয়া প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল লিগ ওয়ানের এই ক্লাবটি।
এমবাপ্পে যদি খেলতে না পারেন তাহলে পিএসজির বড় ভূমিকা রাখতে হবে দলের সেরা দুই তারকা লিওনেল মেসি ও নেইমারকে। দীর্ঘদিন পর আবারও বার্নাবুতে তারা ফিরছেন আজ। তবে এবার আর বার্সার জার্সিতে নয়, পাশাপাশি শত্রুর ভুমিকায় নিজের চেনা মাঠে ফিরবেন সাবেক রিয়াল তারকা সার্জিও রামোসও। এমবাপ্পের মতো তার খেলা নিয়েও সংশয় রয়েছে। তবে এই ডিফেন্ডার নিশ্চিতভাবেই মাঠে নামার চেষ্টা করবেন। এখন দেখার বিষয় ভয় তাড়িয়ে জয় পাবে পিএসজি নাকি রিয়াল মাদ্রিদ জয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবে।