সাকিব আল হাসানকে নিয়ে কী শেষ কথা বলার সময় এসে গেছে?
আর কয়েক দিন পরই ৩৫ পার করবেন বাংলাদেশের এই ইতিহাস সেরা অলরাউন্ডার। ফলে কাগজে কলমে এখনই তাকে নিয়ে শেষ কথা বলার সময় আসেনি। এখনও তার বেশ কিছুদিন ক্রিকেট খেলার কথা। কিন্তু নানা কারণে প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছে যে, সাকিব আল হাসান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের এখনই তাকানো উচিত কি না?
এই প্রশ্নটা উঠলে আমরা আতকে উঠি। আমরা বুঝে উঠতে পারি না যে, সাকিবকে ছাড়া আমরা কিভাবে খেলবো? সাকিবহীন পৃথিবীতে বাংলাদেশের ক্রিকেট কতোটা সাবলীল থাকবে?
আসুন এই আবেগটাকে একটু পাশে সরিয়ে রেখে আমরা গত কয়েক বছরের বাংলাদেশের ক্রিকেটের দিকে তাকাই। একটু ভেবে দেখুন তো, সাকিব কী আসলেই বাংলাদেশের হয়ে পুরোটা খেলছিলেন? আমরা কী ইতিমধ্যে সাকিবহীন অবস্থায় অভ্যস্থ হয়ে গেছি না?
একটা সোজা তথ্য শুনুন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশের খেলা প্রায় অর্ধেক ম্যাচে সাকিব ছিলেন না!
হ্যা, হঠাৎ শুনলে তথ্যটা বিষ্ময়কর মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই সত্যি যে, সাকিব এখন বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেকটাই অতিথি শিল্পী। মাঝে মাঝে আসেন; পারফরম করেন, খেলে আবার চলে যান। সাকিবকে ছাড়া আমরা গত পাঁচ বছর ধরেন একরকম চলতে শিখে গেছি।
২০১৭ সালটাকে আমরা একটা স্টার্টিং পয়েন্ট হিসেবে দেখছি। কারণ, সে বছরের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে প্রথম সাকিব ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নিজেকে সরিয়ে নেন। এরপর আঙুলের চোট, কুচকির চোট, হ্যামাস্ট্রিং ইনজুরি এবং ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে সাকিব একের পর এক সিরিজ মিস করেছেন। পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়ে তিনি বিদেশের মাটিতেই বেশি খেলা মিস করেছেন। এ ছাড়া আইসিসির নিষেধাজ্ঞায় ছিলেন এক বছর।
সবমিলিয়ে এই সময়ে বাংলাদেশ যে ১৪৪টি ম্যাচ খেলেছে, তার মধ্যে ৮৭টি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। তার মানে সব ফরম্যাট মিলিয়ে তিনি এই সময়ে ৫৭টি ম্যাচ মিস করেছেন।
তাহলে সোজা কথা দাড়ালো, সাকিবকে ছাড়াই আমরা অধিকাংশ সময় খেলছি। এই সময়ে আমাদের জিততে হয়েছে মূলত নাসুম, লিটনদের ওপর ভর করে। সাকিব এই সময়টাতে যখন খেলেছেন, তখনও যে আগের মত করে ম্যাচ উইনার সবসময় হয়ে উঠতে পেরেছেন, তা নয়। ফলে ‘সাকিব না থাকলে কী হবে’ এই আহাজারি এখন আর খুব একটা বাস্তব সম্মত নয়।
সাকিব না থাকলে কী হবে, তা ইতিমধ্যে আমরা বুঝতে শিখে গেছি। হ্যা, হয়তো সবসময় তার অভাব আমাদের খেলোয়াড়রা পূরণ করতে পারবেন না। কিন্তু এই সময়ের খেলোয়াড়রা তার বদলে দায়িত্ব নিতে শিখে উঠেছেন।
বরং আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সাকিব যে এই মাঝে মাঝে এসে একটু আধটু খেলছেন, এটা দলের জন্য সমস্যা তৈরি করছে।
সাকিবের বদলে একজন খেলোয়াড় হয়তো তৈরি হচ্ছে। তার জায়গায় নেমে সে নিজেকে একটু একটু প্রস্তুত করে তুলছে। যেই না ছন্দ পেতে শুরু করেছে, অমনি সাকিব এসে দুই ম্যাচের জন্য মাঠে নামছেন। সাথে সাথে ওই খেলোয়াড়টিকে বেঞ্চে পাঠাতে হচ্ছে।
এই পাকিস্তানের বিপক্ষেই টেস্ট সিরিজে এই ঘটনা ঘটেছে। ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি প্রথম টেস্টে খেললেন এবং ভালোই খেললেন। পরের টেস্টে সুযোগ পেলেন না সাকিব ফিট হয়ে যাওয়াতে।
এখন বরং মনে হচ্ছে, সাকিবের এই যাওয়া আসা, মাঝে মাঝে খেলাটা ক্ষতিকর।
এতে দল কোনো দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে পারছে না। সাকিবের বদলে কাউকে তৈরিও করা যাচ্ছে না। সবসময় অবচেতনে একটা আশা থাকছে যে, সাকিব ফিরলে এটা করবো, ওটা করবো।
সাকিব আল হাসান তরুনদের সেট হওয়াতে মারাত্মক বাঁধা তৈরি করছেন। তার বদলে কেউ যখন মাঠে নামছেন, ওই ‘বদলী’ খেলোয়াড়ের মাথায় কাজ করছে যে, আমি পারফরম করলেও টিকতে পারবো না। সাকিব আসলে আমাকে বাদ পড়তে হবে। এই মানসিকতা নিয়ে তরুণরা মাঠে শতভাগ দিতে পারার কথা নয়।
এর আগে লিখেছি যে, সাকিবকে রেহাই দিন। আমি বিশ্বাস করি, তার ক্লান্তির যথেষ্ঠ কারণ আছে। তাকে অবশ্যই বিশ্রাম দেওয়া উচিত। সেটা দেওয়া হয়েছে। এবার সাকিবের কিছু করার পালা।
সাকিব, ঘুরে একবার দলটার দিকে তাকান। আপনার জন্য দলটা তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। ফলে একটু সময় নিন। বিশ্রাম পেয়েছেন, সেটা কাজে লাগান। তারপর পরিষ্কার করে ঠিক করুন, কোন ফরম্যাট খেলবেন, কোন ফরমাট খেলবেন না। ইনজুরি ছাড়া যেটা খেলতে চান, সেখান থেকে বারবার এই বিরতি নেওয়ার চক্রটা এবার বন্ধ করুন।